বিলুপ্তপ্রায় মৃৎশিল্পে ভাগ্যবদল

এরশাদ সোহেল, তজুমদ্দিন (ভোলা)
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ০৮
তজুমদ্দিনের গোলকপুর গ্রামে মাটির তৈরি তৈজসপত্র বানাতে ব্যস্ত নারীরা। ছবি: আমার দেশ

মাটি থেকে প্রাণের অঙ্কুরোদগম। মাটিতেই নিঃশেষ। মাটিই প্রথম, মাটিই শেষ। মাটিই হলো খাঁটি সোনা। কারো কাছে এটি স্রেফ ধুলাবালি ও কাদার মিশ্রণ। আবার কেউ এতে খোঁজেন জীবনের বেঁচে থাকার অবলম্বন।

দ্বীপ জেলা ভোলার তজুমদ্দিনের সত্তোরোর্ধ বৃদ্ধ হরিপদ পালের তেমনি একটি পরিবার। গত চার যুগেরও বেশি সময় ধরে মাটির তৈরি তৈজসপত্র বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। গোলকপুর গ্রামের পাল বাড়ির এই অশীতিপর ব্যক্তি মৃৎশিল্পকে বুকে আঁকড়ে ধরে বহন করে চলছেন শত বছরের ঐতিহ্যকে। বিলুপ্তপ্রায় বাপ-দাদার পুরোনো পেশাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন সুনিপুণ হাতের ছোঁয়ায়। আর তার দেখাদেখি আরো চারটি পরিবারের নারী-পুরুষরাও সম্পৃক্ত হয়েছেন এ পেশায়।

বিজ্ঞাপন

হরিপদ পাল জানান, গত ৫০ বছর ধরে তিনি এ পেশায় নিয়োজিত আছেন। দাদা থেকে বাবা আর বাবার কাছ থেকেই শিখেছেন এ কাজ। বাড়ির পুরুষের পাশাপাশি নারীরা সমানে কাজ করে যাচ্ছেন। পুরুষরা প্রথমে পতিত জমি এবং কখনো নদী থেকে সংগ্রহ করেন এঁটেল মাটি। প্রতি ট্রাক মাটি কিনে নেন পাঁচ হাজার টাকায়। মাটির সঙ্গে পানি ও খড় মিশিয়ে বানান দলা আর সে মাটির দলা থেকে মর্টারের সাহায্যে কাঠের চাকতির মাধ্যমে সম্পূর্ণ হাত দিয়ে তৈরি করা হয় থালা, ঘটি, বাটি, কলসি, খেলনাসামগ্রী এবং দধির পাত্র।

কাঁচা মাটির বানানো এসব সামগ্রীকে রোদে শুকিয়ে তলা বানানোর কাজ করে থাকেন নারীরা। সম্পূর্ণ শুকিয়ে শক্ত হলে একসঙ্গে কয়েক হাজার মাটির পাত্র হাতে বানানো বিশেষ চুলোয় রেখে পোড়ানো হয়। এরপর বিক্রির জন্য প্রস্তুত হয়। দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন দধি ব্যবসায়ীরা এখান থেকে পাত্রগুলো কিনে নিয়ে যান।

নিউটন পাল নামে আরেক মৃৎশিল্পী বলেন, একেকজন প্রতিদিন ২৫০-৪০০ পাত্র বানাতে পারেন। এগুলো প্রতি পিচ বানাতে খরচ পড়ে ৭-৮ টাকা আর বিক্রি হয় ১১-১২ টাকায়। তাতে প্রতি মাসে একেকজনের ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা লাভ হয়।

তবে প্রযুক্তির এ আধুনিক যুগে প্লাস্টিক ও সিলভারের পণ্যের সয়লাবের কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে মৃৎশিল্প। আর তাই এ কারিগররা অনেক পণ্য বানানো বাদ দিয়েছেন। বর্তমানে শুধু ঘটি, বাটি ও দধির দুই আইটেম পাত্র নিয়ে কাজ করছেন। আর সেগুলো দিয়ে চালাচ্ছেন পরিবারের ভরণ-পোষণ।

হরিপদ পালসহ পাঁচ পরিবারের এখন আয়ের উৎস এ শিল্প। তিনি নিজে ও এই শিল্পকে বাণিজ্যিকভাবে নিয়ে হয়েছেন লাভবান। দুই ছেলেকে করেছেন প্রতিষ্ঠিত। বড় ছেলে জুটন পাল এখন এলাকার প্রতিষ্ঠিত ইলেকট্রিক ব্যবসায়ী আর ছোট ছেলে আপন পাল আইসিটি মন্ত্রণালয়ে কর্মরত আছেন বলে জানান তিনি।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত