বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকদের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জের ধরে গৌরনদী উপজেলা হাসপাতালে দুই গ্রুপের হামলা-পাল্টা হামলায় উভয়পক্ষের ৭ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালের অভ্যন্তরে জরুরি বিভাগের সামনে এ হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষ চলাকালীন পুরো হাসপাতালজুড়ে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এতে প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় চিকিৎসাসেবা না পেয়ে আগত এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা রোগী মৃত্যুর অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন—হাসপাতালে আনার আগেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওই রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে যত্রতত্রভাবে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং করে রাখা হচ্ছিল। এতে বিভিন্ন স্থান থেকে আগত রোগী ও তাদের স্বজনদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছিল। বিষয়টি জানার পর হাসপাতালে সদ্য যোগদান করা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সর্বোচ্চ তিনটি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতাল কম্পাউন্ডে রাখার অনুমতি দেন। বাকি অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালের বাইরে রাখতে বলেন।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স মালিক জাবেদ সেলিম অপর অ্যাম্বুলেন্স মালিক জামাল সিকদারকে তার দুইটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে একটি ভিতরে রাখতে বলেন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। বিষয়টি মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে সেলিম ও জামালের সমর্থকেরা হামলা ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় হাসপাতালের অভ্যন্তরে জরুরি বিভাগের সামনে উভয় গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালীন আগত রোগী ও তাদের স্বজনেরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায় চিকিৎসাসেবা।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সংঘর্ষ চলাকালীন হাসপাতালে আগত এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত হাফিজুর রহমান (৬০) উপজেলার দিয়াশুর গ্রামের নূর মোহাম্মদ আকনের ছেলে। তবে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা রোগী মৃত্যুর অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন— হাসপাতালে আনার আগেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাফিজুর রহমানের মৃত্যু হয়েছে। তারা ইসিজি করে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
হামলায় আহত জাবেদ সেলিমের ভাই সালাম বেপারী জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নির্দেশ অন্য সব অ্যাম্বুলেন্স চালকদের জানাতে গেলে পরিকল্পিতভাবে জামাল সিকদার ও তার ছেলেরা হামলা চালিয়ে সেলিমকে বেধড়ক মারধর করেছে। হামলার খবর পেয়ে তিনি (সালাম) ও তার স্বজন ইলিয়াস সরদার ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তাদের ওপরও হামলা চালিয়ে আহত করা হয়। গুরুতর আহত জাবেদ সেলিমকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অপরদিকে জামাল সিকদারের ছেলে সাইদ সিকদার জানিয়েছেন— সেলিম ও তার লোকজনে অশ্লীল ভাষায় তাদের গালিগালাজ করার প্রতিবাদ করায় হামলা চালিয়ে তাকে (সাইদ) সহ তার বাবা জামাল সিকদার, ভাই শাহাদাত সিকদার ও হেলপার রাহাত ঘরামীকে মারধর করে আহত করেছে।
এ বিষয়ে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. শাহতা জারাব সালেহিন বলেন— হাসপাতালের মধ্যে হামলা ও সংঘর্ষ চলাকালীন তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা হয়েছে। রোগীদের শতভাগ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

