একের পর এক গ্রামবাসীকে হত্যা করছে বিএসএফ, ক্ষুব্ধ বাসপদুয়াবাসী

উপজেলা প্রতিনিধি, পরশুরাম (ফেনী)
প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৫, ২০: ০৭

পরশুরামে বাসপদুয়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত ইয়াছিন লিটন ও জাকির হোসেন মিল্লাত নিজ গ্রামে চিরনিদ্রায় সমাহিত হয়েছেন। একের পর এক ভারতীয় বিএসএফের হত্যাকাণ্ডের শিকার এ গ্রামের মানুষ। বাসপদুয়া গ্রামের মানুষের মাঝে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ।

শনিবার(২৬ জুলাই) বিকাল ৪টায় পৌর এলাকার বাসপদুয়া গ্রামের সামাজিক কবরস্থানে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়। ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতদের লাশ গ্রামে নিয়ে এলে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে জানাজার নামাজ আদায় করেন গ্রামবাসী। লিটনের জানাজার নামাজ পড়ান গুথুমা চৌমুড়ি দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা মীর আহমদ। মিল্লাতের জানাজার নামাজ পড়েন তার বড় ভাই হাফেজ নুরুননবী পারভেজ। জানাজার নামাজে তিন শতাধিক মানুষ অংশ নেন। এ সময় পরশুরাম মডেল থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক(এসআই) শরিফ হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

পরশুরাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরুল হাকিম জানান, গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে নিহত লিটন ও মিল্লাতের লাশ সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

ময়নাতদন্তের প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, নিহত লিটন ও মিল্লাতের শরীরে দু’টি করে গুলি লেগেছে। লিটনের বাবা মনির আহমেদ জানান, লিটন টমটম চালাতেন ও টিউবওয়েলের কাজ করতেন। তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে তার। তাদের দেখবে এখন কে?

লিটন ও মিল্লাতের মৃত্যুতে সীমান্তবর্তী বাসপদুয়া গ্রামে নিরবতা বিরাজ করছে। ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর বাসপদুয়া সীমান্ত থেকে কৃষক মেজবাহারকে ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ। তাকে গুলি করে হত্যার ১৭ দিন পর লাশ ফেরত দেয়। অজানা আতঙ্কে রয়েছে গ্রামের মানুষ। সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহতদের ভার সইতে পারছে না মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, তারা এভাবে মানুষ খুন করবে! এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার কি হবে না?

নিহত মিল্লাত প্রবাসে যেতে পাসপোর্ট করেছেন। প্রবাসে যেতে পারেননি মিল্লাত। তার ভাই নুরননবী পারভেজ বলেন, ভাইকে হারিয়েছি। আমার ভাইয়ের নিথর দেহ দেখেছি। এভাবে আমার ভাইকে দেখতে হবে, কল্পনাতেও ভাবিনি। ভাই হারানোর এই কষ্ট–বেদনা কতটা ভারী, তা কীভাবে বোঝাব, বলুন?

বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাত ১২টার দিকে পৌর এলাকার বাসপদুয়া গ্রামের কৃষিজমিতে মাছ ধরতে গেলে বাংলাদেশিদের উপর গুলি চালায় বিএসএফ। বিএসএফের গুলিতে আহত হন ইউছুফ মিয়ার ছেলে জাকির হোসেন মিল্লাত (২০), মনির আহমদের ছেলে মো. ইয়াছিন লিটন (৪৫) ও মৃত এয়ার আহমদের ছেলে মো. আফছার (৩০)। স্থানীয়রা আহত মিল্লাত ও মো. আফছারকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালে মারা যান মিল্লাত। লিটনকে ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ। ভারতের বিলোনিয়া হাসপাতালে তার মৃত্যু ঘটে। আফসার গুরুতর আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিলোনিয়া চেকপোস্ট দিয়ে মো ইয়াছিন লিটনের লাশ ফেরত দেয় বিএসএফ।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত