চট্টগ্রামের বাঁশখালীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধের ভাঙনরোধ, বেড়িবাঁধ পুনর্নির্মাণ ও ঢাল সংরক্ষণের জন্য ছয়টি প্যাকেজে বরাদ্দ দেওয়া প্রায় ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্পে চলছে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি। এতে ভেস্তে যেতে পারে উপকূলবাসীর জীবনমরণ বাঁধখ্যাত বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও ঢাল সংরক্ষণের অধিক গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটি।
রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা এসব সিন্ডিকেট প্রকল্পের কাজ ভাগবাঁটোয়ারা করে বাগিয়ে নিচ্ছে নিজ নিজ সুবিধা মতো। এ সুযোগে ঠিকাদার প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে ।
সিন্ডিকেট সম্পর্কে জানতে চাইলে ছনুয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বোরহান উদ্দিন চৌধুরী মিজান বলেন, এখানে বিএনপির কোনো সিন্ডিকেট নেই, চাঁদাবাজিও নেই। এটা বিএনপির নামে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
জানা যায়, ছনুয়ায় দুই হাজার আটশ মিটার বাঁধ পুনর্নির্মাণ ও ঢাল সংরক্ষণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১০৭ কোটি টাকা। কাজ পান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরএফএল প্লাস্টিক লিমিটেড ও প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান । প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা ।
তন্মধ্যে খানখানাবাদের কদমরসুলে তেরোশ মিটার বাঁধ পুনর্নির্মাণ ও ঢাল সংরক্ষণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৪২ কোটি টাকা। সেখানে রাজনৈতিক গ্রুপিংয়ের কারণে কাজের গতি খুবই কম। সাধনপুরে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪২ কোটি টাকা। নদীর তীর সংরক্ষণ কাজের এগারোশ মিটারের মধ্যে ৭৫০ মিটার সিসি ব্লক কাস্টিং ও জিওব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজও বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এসব কাজে সিলেটি বালু ব্যবহারের কথা থাকলেও সিসি ব্লকে সিলেটি বালুর পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের স্থানীয় বেতাগী বালু ও ময়লাযুক্ত পাথর। এছাড়াও বঙ্গোপসাগরের লবণাক্ত পানি দিয়ে বানানো হচ্ছে বাঁধের সিসি ব্লক। এতে হুমকির মুখে পড়েছে বেড়িবাঁধ প্রকল্প।
সরেজমিনে বাঁশখালীর ছনুয়া বেড়িবাঁধ প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, বঙ্গোপসাগরের লবণাক্ত পানি দিয়ে বলগেট থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে স্থানীয় বেতাগী ও সিলেটি বালু আনলোড করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সিলেটি বালু ছাড়াই শুধু স্থানীয় বেতাগী বালু দিয়েই চলছে সিসি ব্লক নির্মাণের কাজ। এতে ব্যবহার করা হয় অধিক ময়লাযুক্ত নিম্নমানের পাথর।
স্থানীয়রা জানান, ব্লক তৈরিতে নিম্নমানের পাথর ও লবণাক্ত বালু ব্যবহার, ব্লক তৈরিতে ভাইব্রেটর মেশিন ব্যবহার না করা ও বানানো ব্লকে পানি না দেওয়া, ব্লক তৈরির সময় পাউবো কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতি, এসব অনিয়মের কারণে ব্লকগুলো বসানোর সময় ভেঙে যায় এবং স্বল্প সময়ে ব্লকগুলো খসে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালে ২৮ মে বাঁশখালীর উপকূল রক্ষায় সাত হাজার ৫১০ মিটার কাজ ছয়টি অংশে বিভক্ত করে ৪৫৩ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে পাস হয়। তার মধ্যে ছনুয়ায় ১০৭ কোটি টাকার প্রকল্পে দুই হাজার আটশ মিটার বাঁধ পুনর্নির্মাণ ও ঢাল সংরক্ষণ কাজ চলমান রয়েছে। ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে । অপরদিকে খানখানাবাদ কদমরসুলে ১৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ পুনর্নির্মাণ ও ঢাল সংরক্ষণ, সাধনপুরে নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ এক হাজার একশ মিটারের মধ্যে ৭৫০ মিটার কাজ চলমান থাকলেও রাজনৈতিক অন্তর্কোন্দলের কারণে বাকি রয়েছে ৩৫০ মিটার। খানখানাবাদের অপর অংশে ৭২০ মিটার ও বাহারছড়ায় এক হাজার মিটার কাজ । তিনটি প্যাকেজেই ব্লক কাস্টিং শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে খানখানাবাদের জিরো পয়েন্টে ৫৯০ মিটার কাজ চালু করা হয়েছে এবং খানখানাবাদের কয়েকটি কাজ তড়িঘড়ি করে শেষ করার অভিযোগও পাওয়া গেছে ।
ছনুয়ায় নির্মাণ কাজের দায়িত্বে থাকা অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রজেক্ট ম্যানেজার মিরাজ বলেন, ‘পাথর ও প্রিমিয়ার সিমেন্ট আমাদের কোম্পানির পক্ষ থেকে সরাসরি দেওয়া হয়। প্রথমদিকে আমরা বালু গ্রহণ না করার পরও স্থানীয় সিন্ডিকেট জোরপূর্বক বালু আনলোড করেছে। আমরা বালু গ্রহণ করিনি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পিডিএলের অ্যাসিস্ট্যান্ট চিফ ইঞ্জিনিয়ার সাদিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত সময়ে স্থানীয় কিছু মানুষ জোরপূর্বক বালু আনলোড করেছে, আমরা অনেকের বালু গ্রহণ করিনি। আমরা প্রতিটি সাইটে গভীর নলকূপ স্থাপন করেছি। নলকূপ ও পুকুরের পানি দিয়ে বালু আনলোড করা হবে।
পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী অনুপম পাল বলেন, লবণাক্ত পানি দিয়ে যে বালু আনলোড করা হয়েছিল ওইগুলো আমরা পূর্বেই বাতিল করেছি। সব জায়গায় গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক আমরা নজর রাখছি। সবগুলো প্যাকেজেই তো ব্লক কাস্টিং চলছে।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

