সিডিএর জমি দেখিয়ে এস আলমের ৭০০ কোটি টাকার ঋণ

চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ৪৫

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) আগ্রাবাদ আবাসিক এলাকার সরকারি খেলার মাঠ দখল ও দোকান বরাদ্দের অভিযোগে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত দুদকের চট্টগ্রাম-১ কার্যালয়ের এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের একটি দল এ অভিযান পরিচালনা করে। নেতৃত্ব দেন উপসহকারী পরিচালক হামিদ রেজা।

বিজ্ঞাপন

অভিযোগ ছিল, আগ্রাবাদের ‘বালুরমাঠ’ নামে পরিচিত সরকারি খেলার মাঠের একটি অংশ স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করছে। দোকান নির্মাণ ও বরাদ্দে সিডিএর কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে।

তবে দীর্ঘ অভিযানে মাঠ দখল বা দোকান নির্মাণের প্রত্যক্ষ প্রমাণ পায়নি দুদক দল।

কিন্তু তদন্তে উঠে আসে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য— একই এলাকায় ১০১ কাঠা জমি লিজ নিয়ে এস আলম গ্রুপের দু’টি প্রতিষ্ঠান ‘আবাসিক প্রকল্প’ নির্মাণের নামে ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।

দুদক কর্মকর্তা হামিদ রেজা বলেন, ‘আগ্রাবাদ আবাসিক এলাকার ১০১ কাঠা জমি এস আলম গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান ২০০১ ও ২০০৫ সালে ৯৯ বছরের জন্য সিডিএ থেকে লিজ নেয়। চুক্তি অনুযায়ী আবাসিক ভবন নির্মাণের কথা থাকলেও ২০ বছরেও সেখানে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি।’

তিনি জানান, ওই জমি দেখিয়ে এস আলম গ্রুপ ২০২০ সালে চৌমুহনী জনতা ব্যাংক শাখা থেকে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার ঋণ নেয়। পরে অন্যান্য সম্পত্তিও জামানত হিসেবে দেখানো হয়। ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এস আলম গ্রুপের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা।

দুদক সূত্র বলছে, আবাসন প্রকল্পের নামে নেওয়া এই লিজ ও ঋণপ্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও ভুয়া তথ্য প্রদানের আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য সিডিএ, ব্যাংক ও ভূমি অফিসের রেকর্ড পরীক্ষা করছে কমিশন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আগে ‘বালুরমাঠ’ ছিল শিশু-কিশোরদের খেলার জায়গা। এখন মাঠের চারপাশে দোকান, গ্যারেজ ও গুদাম গড়ে উঠেছে। আবাসিক এলাকার খেলার মাঠ দখলের ঘটনায় সিডিএর কয়েকজন কর্মকর্তার নামও ঘুরছে আলোচনা-সমালোচনায়।

একজন স্থানীয় বলেন, ‘আগে এখানে বাচ্চারা খেলত। এখন দোকান আর গুদাম। শুনছি এই জায়গা দেখিয়ে আবার ব্যাংক থেকে টাকা তোলা হয়েছে— এটা ভয়াবহ।’

দুদক কর্মকর্তারা জানান, মাঠ দখলের সরাসরি প্রমাণ না মিললেও এস আলম গ্রুপের লিজপ্রাপ্ত জমি ও ঋণসংক্রান্ত কাগজপত্র আরও যাচাই করা হবে। প্রয়োজনে ব্যাংক ও সিডিএ কর্মকর্তাদেরও তলব করা হতে পারে।

একাধিক সূত্রের দাবি, গত দু’দশকে সিডিএর লিজপ্রাপ্ত অনেক জমিই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের দখলে চলে গেছে, যেখানে কোনো আবাসন বা জনসেবামূলক প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি।

দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে কিছু অনিয়মের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। মাঠ দখল হোক বা লিজের অপব্যবহার— দুদক এখন বিষয়টি গভীরভাবে অনুসন্ধান করছে।’

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত