চট্টগ্রাম ব্যুরো
চট্টগ্রামের বিতর্কিত জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমকে অবশেষে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ২১ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে তাকে বদলি করে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পদে পদায়ন করা হয়। আলাদা আরেকটি প্রজ্ঞাপনে নওগাঁর সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়ালকে চট্টগ্রামের নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করতে বলা হয়েছে। যদিও সরকারি এ আদেশ এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।
গত দুই মাস ধরেই নিয়ম লঙ্ঘন করে সরকারি জমি বরাদ্দ, ইজারা, মালিকানা পরিবর্তন, বালুমহাল ইজারা, রেকর্ড ঘষামাজা, ক্ষমতার অপব্যবহার করে এক খাতের তহবিল অন্য খাতে ব্যয় করাসহ নানা কারণে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন সদ্য বিদায়ী ডিসি ফরিদা খানম।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুরো একটি আবাসিক এলাকাকে ব্যক্তিমালিকানায় ছেড়ে দেওয়াসহ ইহুদির জমি খ্রিষ্টান সাজিয়ে হিন্দু ব্যক্তির নামে দখল বুঝিয়ে দেওয়ার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে আমার দেশ। ওই ঘটনায় একাধিক তদন্ত কমিটিও করে সরকার। পরে আরো কয়েকটি গণমাধ্যমে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের বেপোরোয়া কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে সংবাদ প্রকাশ হয়। সূত্র জানায়, এসব সংবাদে বিব্রত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরই জেরে নিয়োগের মাত্র এক বছরের মাথায় অবশেষে তাকে বদলি করা হয়েছে।
মামলা পরিচালনা না করে সরকারি জমি ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ
সরকারি জমি রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতিÑএমনকি টাকার বিনিময়ে বন্দোবস্ত দেওয়ার ঘটনায় সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হন নতুন এই ডিসি। এর মধ্যে পাঁচলাইশ ও বায়েজিদ এলাকার হিলভিউ আবাসিক এলাকার ৪৬ একর খাসজমিতে গড়ে ওঠা হিলভিউ আবাসিক এলাকার ১৭৮টি প্লটের নামজারি করে দেয় জেলা প্রশাসন। অভিযোগ রয়েছে ৫৮ দশমিক ৭৩ একর আয়তনের বড় এই এলাকাটির অন্তত ৪৬ একরই সরকারী খাস জমি, ১৯৮০ সালের দিকে হিলভিউ আবাসিক কল্যাণ সমিতি নাম দিয়ে একটি গ্রুপ দখলে নেয় পুরো এলাকাটি। সরকারি বিপুল সম্পত্তি আত্মসাতের কারণে দুই দশক ধরে নামজারী ও খাজনা গ্রহণ বন্ধ করে রাখা হয়। এ বিষয়ে সরকার ও হাউজিং কোম্পানির একাধিক মামলা-পাল্টা মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এরই একটি মামলার রায় সম্প্রতি হিলভিউ আবাসিক এলাকার পক্ষে আসে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার আপিল করার সুযোগ থাকলেও বর্তমান জেলা প্রশাসন সে সুযোগ না নিয়েই আদালতের রায়ের সার্টিফায়েড কপি আসার আগেই ব্যক্তি নামে নামজারি করা শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে আমার দেশ-এ সংবাদ প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।
১৯৩৬ সালে দেশ ছেড়ে চলে যায় ডেভিট ইজিক্যাল নামের একটি ইহুদি পরিবার। চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গীবাজারে আলকরণ এলাকায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে ডেভিটের বাড়ি। পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে বাড়িটি সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল এতদিন। স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছে বাড়িটি দোকান ও গুদাম হিসেবে ভাড়া দেওয়া ছিল। ২০১২ সালে একটি ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট জমিটি হাতিয়ে নিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এলবার্ট সরকার নামের এক ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টান ব্যক্তিকে ডেভিট ইজিক্যালের ওয়ারিশ সাজিয়ে আদালতে মামলা ঠুকে দেন। লুটেরা আওয়ামী আমলেও এই জমিটি ভুমিদস্যুদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া না হলেও বর্তমান জেলা প্রশাসন আদালতের একটি রায়কে কেন্দ্র করে এই সরকারি সম্পত্তিটি বুঝিয়ে দেয় এলবার্ট সরকারের আড়ালে থাকা ভূমিদস্যু সিন্ডিকেটের কাছে।
নগরীর শিল্পকলা এলাকার একটি সরকারি জমি কৌশলে ব্যক্তিমালিকানায় ছেড়ে দিতে সার্কিট হাউসে কয়েক দফায় বৈঠক করে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। বিষয়টি জানাজানি হলে সে প্রক্রিয়া থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় জেলা প্রশাসন।
নিয়ম না মেনে একসনা বন্দোবস্ত
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও আদালত ভবনে উঠতে পরীর পাহাড়ের পাদদেশে থাকা সরকারি বিপুল পরিমাণ জমি ভূমিদস্যুদের দখলে ছিল দীর্ঘদিন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে এই এলাকার ২৩ শতক জমি উদ্ধার করে টিনের বাউন্ডারি দিয়ে ঘিরে রাখে তৎকালীন জেলা প্রশাসন। বর্তমানে ওই জমিতে স্টিলের স্ট্র্যাকচার করে বহুতল ভবন গড়ে তুলছে সীতাকুণ্ডের এক বিএনপি নেতার মালিকানাধীন একটি বেনামী প্রতিষ্ঠান। নির্মাণাধীন ওই মার্কেটে দোকানঘর বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে টাকাও তোলা হচ্ছে। রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ নামে এক ব্যক্তি বিষয়টি তদারকি করছেন। তিনি জানান, পাঁচ বছরের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে মাসিক ভাড়া হিসেবে চুক্তি করে জমির বরাদ্দ নিয়েছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাদি উর রহমান জাদিদ জানান, জমিটির ওপর ফের ভূমিদস্যুদের নজর পড়েছিল। আদালতপাড়ায় অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডের দিন উত্তেজনার সুযোগে একটি পক্ষ টিনের বেড়া ভেঙে জমিটির একাংশ দখলও করে নিয়েছিল। সরকারি জমি রক্ষা করতেই ২৪ ঘণ্টার নোটিসে জমি ফেরত দেওয়ার শর্তে জমিটি একসনা বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের যখন প্রয়োজন হবে, তখনই ইজারাদার জমিটি ছেড়ে দিতে বাধ্য থাকবেন।
কর্ণফুলী নদীর ওপারে রাষ্ট্রীয় সারকারখানা সিইউএফএলের জেটিতে ৬৮ শতক সরকারি খাসজমি রয়েছে। জমিটি বরাদ্দ পেতে ২০২১ সালের ২০ জুন জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করে সিইউএফএল। কিন্তু জেলা প্রশাসন সিইউএফএলের আবেদন নিষ্পত্তি না করলেও জমিটি তারা তাদের কাজেই ব্যবহার করে। সম্প্রতি ওই জমির মধ্য থেকে আনোয়ারার এক বিএনপি নেতার স্ত্রী উম্মে সায়মার নামে ২০ শতক জমি ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। এতে রাষ্ট্রায়ত্ত দুটি প্রতিষ্ঠানের জেটি ব্যবহার হুমকির মধ্যে পড়ে। বিষয়টিতে উদ্বেগ জানিয়ে বরাদ্দ বাতিলের জন্য বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আবেদন করেছে সিইউএফএল।
তহবিলের অপব্যবহার
শুধু খাসজমি ভূমিদস্যুদের হাতে তুলে দেওয়া নয়, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার কোষাগারের অর্থ নিয়ম লঙ্ঘন করে ব্যয় করার অভিযোগ রয়েছে জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনুদান, বিজ্ঞাপন দেওয়া, প্রশাসন ক্যাডারদের পিকনিকের মতো যাচ্ছেতাই খাতে ব্যয় করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ টাকা। নথি অনুযায়ী, ডিসি ফরিদা খানম তার নিজস্ব ২৪তম বিসিএস প্রশাসন অ্যা্সোসিয়েশনের গ্র্যান্ড পুনর্মিলনী বা পিকনিক উপলক্ষে দুদফায় বিজ্ঞাপন বাবদ চিড়িয়াখানার তহবিল থেকে লাখ লাখ টাকা খরচ করেন। নিয়ম লঙ্ঘন করে রংপুরে কর্মরত এক শিক্ষানবিশ সহকারী কমিশনারকে ব্যক্তিগত অনুদান দেন এক লাখ টাকা।
এছাড়া স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, গণহত্যা দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য পাঁচ লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়া হয় চিড়িয়াখানার ফান্ড থেকে। তবে বিজয় দিবস উপলক্ষে দেওয়া পাঁচ লাখ টাকার অনুদানটি কার কাছে গেছে তার হদিস নেই নথিতে। ঢাকার বিয়াম ফাউন্ডেশনে এসি বিস্ফোরণে হতাহতদের সহায়তায় তিন লাখ টাকা অনুদান, বিভাগীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার বিজ্ঞাপন বাবদ ৫০ হাজার টাকা, এইচএল ফাউন্ডেশন ফর সোশ্যাল এক্সিলেন্সকে বিজ্ঞাপন বাবদ এক লাখ টাকা এবং ডিসি পার্কে রং করায় ব্যয় হয়েছে আরো এক লাখ ২৪ হাজার ৫০৫ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জেলা প্রশাসক হিসেবে এসব খাতে ব্যয় করাটা স্বাভাবিক। কিন্তু চিড়িয়াখানার ফান্ড থেকে এসব খাতে ব্যয় করার ঘটনা চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা তো নয়ই, দেশের ইতিহাসে নেই।
এছাড়াও চট্টগ্রামের ডিসি পার্কে ফুল উৎসবের নামে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা তোলার অভিযোগ রয়েছে জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এসব টাকার সঠিক ব্যয় ও ডিসি পার্ক থেকে আয়ের টাকা কোথায় যাচ্ছে তার স্বচ্ছতা নেই বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।
চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা সিজেকেএসের ফান্ড থেকে বিভিন্ন খাতে নিয়ম লঙ্ঘন করে ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে বলে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংগঠকরা। সিজেকেএসের মার্কেটের বিভিন্ন দোকান টেন্ডার ছাড়াই নিয়ম লঙ্ঘন করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোনো কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনা
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমকে বদলির আদেশ এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। কিন্তু জেলা প্রশাসকের বদলির প্রজ্ঞাপনটি মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তারা তার বিভিন্ন কাজের সমালোচনা করে দুর্নীতিবাজ হিসেবে ফেসবুকে পোস্ট দেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের চট্টগ্রাম জেলা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী জানান, একজন জেলা প্রশাসক স্বল্পসময়ের জন্য একটি জেলার দায়িত্ব পান। সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসকও মাত্র এক বছর চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালন করেন। তার বদলির আদেশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, তা আগের কোনো ডিসির ক্ষেত্রে হয়নি। এ অল্প সময়ে একজনের পক্ষে এত সমালোচনার কাজ করা সম্ভব নয়। মূলত জেলা প্রশাসনের নিচের দিকের একটি সিন্ডিকেট এসব অপকর্মের জন্য সক্রিয় রয়েছে। তারাই শীর্ষ কর্মকর্তাদের ব্যবহার করেন। ওই সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয় রয়েছে। নতুন যে জেলা প্রশাসক আসবেন, এদের ব্যাপারে সচেতন না হলে তিনিও সমালোচনায় পড়বেন।
চট্টগ্রামের বিতর্কিত জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমকে অবশেষে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ২১ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে তাকে বদলি করে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পদে পদায়ন করা হয়। আলাদা আরেকটি প্রজ্ঞাপনে নওগাঁর সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়ালকে চট্টগ্রামের নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করতে বলা হয়েছে। যদিও সরকারি এ আদেশ এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।
গত দুই মাস ধরেই নিয়ম লঙ্ঘন করে সরকারি জমি বরাদ্দ, ইজারা, মালিকানা পরিবর্তন, বালুমহাল ইজারা, রেকর্ড ঘষামাজা, ক্ষমতার অপব্যবহার করে এক খাতের তহবিল অন্য খাতে ব্যয় করাসহ নানা কারণে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন সদ্য বিদায়ী ডিসি ফরিদা খানম।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুরো একটি আবাসিক এলাকাকে ব্যক্তিমালিকানায় ছেড়ে দেওয়াসহ ইহুদির জমি খ্রিষ্টান সাজিয়ে হিন্দু ব্যক্তির নামে দখল বুঝিয়ে দেওয়ার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে আমার দেশ। ওই ঘটনায় একাধিক তদন্ত কমিটিও করে সরকার। পরে আরো কয়েকটি গণমাধ্যমে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের বেপোরোয়া কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে সংবাদ প্রকাশ হয়। সূত্র জানায়, এসব সংবাদে বিব্রত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরই জেরে নিয়োগের মাত্র এক বছরের মাথায় অবশেষে তাকে বদলি করা হয়েছে।
মামলা পরিচালনা না করে সরকারি জমি ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ
সরকারি জমি রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতিÑএমনকি টাকার বিনিময়ে বন্দোবস্ত দেওয়ার ঘটনায় সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হন নতুন এই ডিসি। এর মধ্যে পাঁচলাইশ ও বায়েজিদ এলাকার হিলভিউ আবাসিক এলাকার ৪৬ একর খাসজমিতে গড়ে ওঠা হিলভিউ আবাসিক এলাকার ১৭৮টি প্লটের নামজারি করে দেয় জেলা প্রশাসন। অভিযোগ রয়েছে ৫৮ দশমিক ৭৩ একর আয়তনের বড় এই এলাকাটির অন্তত ৪৬ একরই সরকারী খাস জমি, ১৯৮০ সালের দিকে হিলভিউ আবাসিক কল্যাণ সমিতি নাম দিয়ে একটি গ্রুপ দখলে নেয় পুরো এলাকাটি। সরকারি বিপুল সম্পত্তি আত্মসাতের কারণে দুই দশক ধরে নামজারী ও খাজনা গ্রহণ বন্ধ করে রাখা হয়। এ বিষয়ে সরকার ও হাউজিং কোম্পানির একাধিক মামলা-পাল্টা মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এরই একটি মামলার রায় সম্প্রতি হিলভিউ আবাসিক এলাকার পক্ষে আসে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার আপিল করার সুযোগ থাকলেও বর্তমান জেলা প্রশাসন সে সুযোগ না নিয়েই আদালতের রায়ের সার্টিফায়েড কপি আসার আগেই ব্যক্তি নামে নামজারি করা শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে আমার দেশ-এ সংবাদ প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।
১৯৩৬ সালে দেশ ছেড়ে চলে যায় ডেভিট ইজিক্যাল নামের একটি ইহুদি পরিবার। চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গীবাজারে আলকরণ এলাকায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে ডেভিটের বাড়ি। পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে বাড়িটি সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল এতদিন। স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছে বাড়িটি দোকান ও গুদাম হিসেবে ভাড়া দেওয়া ছিল। ২০১২ সালে একটি ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট জমিটি হাতিয়ে নিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এলবার্ট সরকার নামের এক ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টান ব্যক্তিকে ডেভিট ইজিক্যালের ওয়ারিশ সাজিয়ে আদালতে মামলা ঠুকে দেন। লুটেরা আওয়ামী আমলেও এই জমিটি ভুমিদস্যুদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া না হলেও বর্তমান জেলা প্রশাসন আদালতের একটি রায়কে কেন্দ্র করে এই সরকারি সম্পত্তিটি বুঝিয়ে দেয় এলবার্ট সরকারের আড়ালে থাকা ভূমিদস্যু সিন্ডিকেটের কাছে।
নগরীর শিল্পকলা এলাকার একটি সরকারি জমি কৌশলে ব্যক্তিমালিকানায় ছেড়ে দিতে সার্কিট হাউসে কয়েক দফায় বৈঠক করে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। বিষয়টি জানাজানি হলে সে প্রক্রিয়া থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় জেলা প্রশাসন।
নিয়ম না মেনে একসনা বন্দোবস্ত
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও আদালত ভবনে উঠতে পরীর পাহাড়ের পাদদেশে থাকা সরকারি বিপুল পরিমাণ জমি ভূমিদস্যুদের দখলে ছিল দীর্ঘদিন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে এই এলাকার ২৩ শতক জমি উদ্ধার করে টিনের বাউন্ডারি দিয়ে ঘিরে রাখে তৎকালীন জেলা প্রশাসন। বর্তমানে ওই জমিতে স্টিলের স্ট্র্যাকচার করে বহুতল ভবন গড়ে তুলছে সীতাকুণ্ডের এক বিএনপি নেতার মালিকানাধীন একটি বেনামী প্রতিষ্ঠান। নির্মাণাধীন ওই মার্কেটে দোকানঘর বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে টাকাও তোলা হচ্ছে। রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ নামে এক ব্যক্তি বিষয়টি তদারকি করছেন। তিনি জানান, পাঁচ বছরের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে মাসিক ভাড়া হিসেবে চুক্তি করে জমির বরাদ্দ নিয়েছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাদি উর রহমান জাদিদ জানান, জমিটির ওপর ফের ভূমিদস্যুদের নজর পড়েছিল। আদালতপাড়ায় অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডের দিন উত্তেজনার সুযোগে একটি পক্ষ টিনের বেড়া ভেঙে জমিটির একাংশ দখলও করে নিয়েছিল। সরকারি জমি রক্ষা করতেই ২৪ ঘণ্টার নোটিসে জমি ফেরত দেওয়ার শর্তে জমিটি একসনা বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের যখন প্রয়োজন হবে, তখনই ইজারাদার জমিটি ছেড়ে দিতে বাধ্য থাকবেন।
কর্ণফুলী নদীর ওপারে রাষ্ট্রীয় সারকারখানা সিইউএফএলের জেটিতে ৬৮ শতক সরকারি খাসজমি রয়েছে। জমিটি বরাদ্দ পেতে ২০২১ সালের ২০ জুন জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করে সিইউএফএল। কিন্তু জেলা প্রশাসন সিইউএফএলের আবেদন নিষ্পত্তি না করলেও জমিটি তারা তাদের কাজেই ব্যবহার করে। সম্প্রতি ওই জমির মধ্য থেকে আনোয়ারার এক বিএনপি নেতার স্ত্রী উম্মে সায়মার নামে ২০ শতক জমি ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। এতে রাষ্ট্রায়ত্ত দুটি প্রতিষ্ঠানের জেটি ব্যবহার হুমকির মধ্যে পড়ে। বিষয়টিতে উদ্বেগ জানিয়ে বরাদ্দ বাতিলের জন্য বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আবেদন করেছে সিইউএফএল।
তহবিলের অপব্যবহার
শুধু খাসজমি ভূমিদস্যুদের হাতে তুলে দেওয়া নয়, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার কোষাগারের অর্থ নিয়ম লঙ্ঘন করে ব্যয় করার অভিযোগ রয়েছে জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনুদান, বিজ্ঞাপন দেওয়া, প্রশাসন ক্যাডারদের পিকনিকের মতো যাচ্ছেতাই খাতে ব্যয় করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ টাকা। নথি অনুযায়ী, ডিসি ফরিদা খানম তার নিজস্ব ২৪তম বিসিএস প্রশাসন অ্যা্সোসিয়েশনের গ্র্যান্ড পুনর্মিলনী বা পিকনিক উপলক্ষে দুদফায় বিজ্ঞাপন বাবদ চিড়িয়াখানার তহবিল থেকে লাখ লাখ টাকা খরচ করেন। নিয়ম লঙ্ঘন করে রংপুরে কর্মরত এক শিক্ষানবিশ সহকারী কমিশনারকে ব্যক্তিগত অনুদান দেন এক লাখ টাকা।
এছাড়া স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, গণহত্যা দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য পাঁচ লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়া হয় চিড়িয়াখানার ফান্ড থেকে। তবে বিজয় দিবস উপলক্ষে দেওয়া পাঁচ লাখ টাকার অনুদানটি কার কাছে গেছে তার হদিস নেই নথিতে। ঢাকার বিয়াম ফাউন্ডেশনে এসি বিস্ফোরণে হতাহতদের সহায়তায় তিন লাখ টাকা অনুদান, বিভাগীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার বিজ্ঞাপন বাবদ ৫০ হাজার টাকা, এইচএল ফাউন্ডেশন ফর সোশ্যাল এক্সিলেন্সকে বিজ্ঞাপন বাবদ এক লাখ টাকা এবং ডিসি পার্কে রং করায় ব্যয় হয়েছে আরো এক লাখ ২৪ হাজার ৫০৫ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জেলা প্রশাসক হিসেবে এসব খাতে ব্যয় করাটা স্বাভাবিক। কিন্তু চিড়িয়াখানার ফান্ড থেকে এসব খাতে ব্যয় করার ঘটনা চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা তো নয়ই, দেশের ইতিহাসে নেই।
এছাড়াও চট্টগ্রামের ডিসি পার্কে ফুল উৎসবের নামে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা তোলার অভিযোগ রয়েছে জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এসব টাকার সঠিক ব্যয় ও ডিসি পার্ক থেকে আয়ের টাকা কোথায় যাচ্ছে তার স্বচ্ছতা নেই বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।
চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা সিজেকেএসের ফান্ড থেকে বিভিন্ন খাতে নিয়ম লঙ্ঘন করে ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে বলে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংগঠকরা। সিজেকেএসের মার্কেটের বিভিন্ন দোকান টেন্ডার ছাড়াই নিয়ম লঙ্ঘন করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোনো কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনা
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমকে বদলির আদেশ এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। কিন্তু জেলা প্রশাসকের বদলির প্রজ্ঞাপনটি মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তারা তার বিভিন্ন কাজের সমালোচনা করে দুর্নীতিবাজ হিসেবে ফেসবুকে পোস্ট দেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের চট্টগ্রাম জেলা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী জানান, একজন জেলা প্রশাসক স্বল্পসময়ের জন্য একটি জেলার দায়িত্ব পান। সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসকও মাত্র এক বছর চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালন করেন। তার বদলির আদেশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, তা আগের কোনো ডিসির ক্ষেত্রে হয়নি। এ অল্প সময়ে একজনের পক্ষে এত সমালোচনার কাজ করা সম্ভব নয়। মূলত জেলা প্রশাসনের নিচের দিকের একটি সিন্ডিকেট এসব অপকর্মের জন্য সক্রিয় রয়েছে। তারাই শীর্ষ কর্মকর্তাদের ব্যবহার করেন। ওই সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয় রয়েছে। নতুন যে জেলা প্রশাসক আসবেন, এদের ব্যাপারে সচেতন না হলে তিনিও সমালোচনায় পড়বেন।
এ সময় অসাবধানতাবশত তার শরীরে সার্ভিস তার স্পর্শ করলে তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা দ্রুত তাকে কুয়াকাটা ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
৯ মিনিট আগেবুধবার ভোর রাতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে ২৩০ পিস ইয়াবাসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার সাইফুল ইসলাম সাঘাটা উপজেলার কামালেরপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক। তিনি ওই এলাকার বারকোনা গ্রামের চান মিয়ার ছেলে।
২১ মিনিট আগেমঙ্গলবার রাতে ১২টার দিকে তিনটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার সময় স্থানীয় বাসিন্দারা ধাওয়া করে। এসময় চালসহ একটি অটোরিকশা জব্দ করলেও বাকি দুটি রিকশা দ্রুত গতিতে পালিয়ে যায়।
২৭ মিনিট আগেবিএনপি নেতা সামছুল ইসলাম জেলার সদর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক। ছাড়া পাওয়া দুই আসামি হলেন, সদর উপজেলার লস্করপুর ইউনিয়ন যুবলীগ সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান ওরফে রানা (৪০) ও একই কমিটির সদস্য মামুন আহমেদ (৩৮)।
৩৯ মিনিট আগে