লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসন

বিএনপির প্রার্থিতা নিয়ে জল্পনা, গণসংযোগে সুবিধায় জামায়াত

মাসুদ রানা মনি, রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর)
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৫, ১১: ২৩
আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২৫, ১১: ২৪

লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনটি ১০টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা রয়েছে। আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এবার ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। তার ওপর সমমনা দল বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ( এলডিপির) চেয়ারম্যান মো. শাহাদাত হোসেন সেলিম বিএনপি জোটের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক পাবেন এমন ঘোষণায় কে হচ্ছেন ধানের শীষের কান্ডারি তা নিয়ে আসনটিতে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই।

এ আসনটি বরাবরই বিএনপির দখলে ছিল। ২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে এই আসনটি বিএনপির হাতছাড়া হয়ে যায়। এখানে বিএনপি হতে সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত জিয়াউল হক জিয়া তিনবার এবং প্রয়াত নাজিম উদ্দিন আহমেদ দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের আমলে ২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে ১৪ দলের শরিক তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব এম এ আউয়াল সংসদ সদস্য হন । এছাড়াও ২০১৮ ও ২০২৪ নির্বাচনে আ.লীগের আনোয়ার হোসেন খান আসনটি দখলে নেয়। শেখ হাসিনার পতনের পর এখানকার আ.লীগ নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে কিংবা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে । রাজনীতির মাঠ এখন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও সমমনা দলগুলোর পদচারণায় মুখরিত।

বিজ্ঞাপন

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আসনটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিএনপি ।

এবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি হতে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন ২০১৮ সালের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ও বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহসভাপতি মো. ইয়াসিন আলী, ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক কমিশনার হারুনুর রশিদ, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহসভাপতি ইমাম হোসেন, রামগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ভিপি আব্দুর রহিম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জিয়াউল হক জিয়ার পুত্র মাসফিকুল হক জয়, অন্যান্য দলের একক প্রার্থীরা হচ্ছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির ও সাবেক লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি নাজমুল হাসান পাটোয়ারী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বড় ভাই মাহবুব আলম। তথ্য উপদেষ্টা মোহাম্মদ মাহফুজ আলমের সমর্থকরা মনে করেন, আগামী নির্বাচনে তিনি এ আসনে নিজে প্রার্থী হতে পারেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ লক্ষ্মীপুর জেলার সহসভাপতি মো. জাকির হোসেন পাটোয়ারী । এছাড়া এবি পার্টি হতে কেন্দ্রীয় শিল্প বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক আশরাফ মাহমুদ রুমেল এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও স্মার্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোঃজহিরুল ইসলাম এ আসনের প্রার্থী হতে পারেন। আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে তিনি এলাকায় নানা ভাবে গণসংযোগ করছেন।

বিএনপির একাধিক প্রার্থী গণসংযোগে থাকায় সুযোগটি কাজে লাগাতে চায় এলডিপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী। এ আসনে জোটের শরীক এলডিপির সঙ্গে বিএনপি সমঝোতা হলে এলডিপির চেয়ারম্যান মো. শাহাদাত হোসেন সেলিম ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন। অপরদিকে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী নাজমুল হাসান পাটোয়ারী। বিএনপির একাধিক প্রার্থীর কোন্দলের সুযোগে তিনি দিনরাত উপজেলার একপ্রান্ত হতে অপরপ্রান্ত চষে বেড়াচ্ছেন।

বিএনপির প্রার্থীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মাঠে যদিও বিএনপির একাধিক প্রার্থী গণসংযোগ করছেন। তবে নির্বাচনে যিনিই ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ভোটযুদ্ধে নামবেন সবাই তার পক্ষে কাজ করবেন। এখনকার বিএনপি নেতাকর্মীদের বিশ্বাস, যদি এর ব্যতিক্রম হয় তাহলে আসনটি বিএনপির হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে ।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম ইতোমধ্যে রামগঞ্জ উপজেলা বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মীর আস্থাভাজন হয়ে উঠেছেন। শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, আমি ২০১৮ সালে বিএনপি জোটের প্রার্থী হয়ে ধানের শীষ প্রতীকের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করেছি।

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণের বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ধানের শীষ প্রতীকের আরেক প্রার্থী হারুনুর রশিদ জানান, ২০১৮ সালে বিএনপি থেকে আমিই নমিনেশন পেয়েছিলাম। কিন্তু তখন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদের অনুরোধে বিএনপির নীতি নির্ধারকরা তখন এ আসনটি এলডিপির তৎকালীন মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমকে ছেড়ে দেন। আশা করি বিএনপি এবার আমাকে মূল্যায়ন করে মনোনয়ন দিবে।

জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মো. নাজমুল হাসান বলেন, দেশবাসী পরিবর্তন চায়। গত এক বছর ধরে দেশবাসী সব দলের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেছে, সবাই চায় নতুনত্ব । আশা করি এবার ভোটারা এ আসনটির জামায়াতে ইসলামীকে উপহার দিতে পারব।

এছাড়া অন্যান্য দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় নাগরিক পার্টি, এবি পার্টিসহ সব দলের প্রার্থীরাই দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এবং প্রত্যেকে প্রত্যেকের জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত