সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু

মিরসরাইয়ে শোকে বাকরুদ্ধ গ্রামবাসী

নুরুল আলম, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২৫, ১১: ০৯

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে এলাকায়। শোকে বাকরুদ্ধ গ্রামবাসী। চলছে শোকসন্তপ্ত পরিবারে আহাজারি। কোনোভাবেই থামছে না স্বজন হারানোর কান্না ।

জানা গেছে , গত শনিবার জিয়া উদ্দিন (৩০) নিজের সিএনজি অটোরিকশায় পরিবারের লোকজনদের নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে যাচ্ছিলেন। সঙ্গে স্ত্রী, দুই সন্তান, এক চাচাতো ভাই ছিল। অভাবের টানাপোড়নের সংসারে জোগান দিতে কিছুদিন আগে বেসরকারি একটি উন্নয়ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে এই সিএনজিচালিত অটোরিকশাটি কিনেন তিনি ।

বিজ্ঞাপন

শনিবার বিকাল ৩টায় জিয়া উদ্দিন (৩০) শ্বশুর বাড়ির কাছাকাছি হিঙ্গুলী ইউনিয়নের চিনকিরহাট নামক স্থানে পৌঁছলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বালুবোঝাই একটি পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে দুমড়েমুচড়ে যায় অটোরিকশাটি । এ সময় ঘটনাস্থলেই নিহত হন জিয়া উদ্দিনের চাচাতো ভাই নুরুল করিমের পুত্র সাইফুল ইসলাম শাহীন (১৭)। জিয়া উদ্দিন, তার স্ত্রী ফারহানা আক্তার সুমি (২৫), মেয়ে কায়সার জাহান তানিশা (৬) ও ছেলে মানারুল ইসলাম তাওহীদ (৩) গুরুতর আহত হন। তাদের উদ্ধার করে নেওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে । সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৮টায় মারা যান জিয়া উদ্দিনের স্ত্রী ফারহানা আক্তার সুমি (২৫) ও ছেলে মানারুল ইসলাম তাওহীদ (৩)। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে দুটি লাশবহনকারী অ্যাম্বুলেন্স সাইরেন বাজিয়ে উপজেলার কাটাছড়া ইউনিয়নের বামনসুন্দর এলাকার দোস্ত মোহাম্মদের বাড়ির দিকে এগিয়ে আসলে শোকে স্তব্ধ হয়ে যায় গ্রামে মানুষ । একটি গাড়িতে মা, পিছনের গাড়িতে সাত বছরের সন্তান বাড়িতে প্রবেশ করছে। সারিসারি মানুষ অশ্রুসিক্ত। সকাল থেকে তারা দেখছে মায়ের পাশে সন্তানের জন্য কবর খুঁড়তে। এমন শোকাবহ বেদনাদায়ক পরিবেশ কখনো দেখেনি বামনসুন্দর গ্রামের মানুষ। স্বামী জিয়া উদ্দিনের সঙ্গে ফারহানা আক্তার সুমি (২৫) করেরহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ অলিনগর গ্রামে বাবার বাড়িতে আর শেষ যাওয়া হলো না। মা এবং সন্তানের নিথর দেহ পাশাপাশি কবরে শায়িত হলো শত শত মানুষকে কাঁদিয়ে। জিয়া উদ্দিন সুস্থ হয়ে যখন মেডিকেল থেকে ফিরবে কি নিয়ে বাঁচবে, কে দিবে তাকে সান্ত্বনা।

আহত জিয়া উদ্দিনের বড় ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জিয়া উদ্দিনের স্ত্রী ফারহানা আক্তার সুমি (২৫) তার সাত বছরের সন্তান মানারুল ইসলাম তাওহীদ এবং সাইফুল ইসলাম শাহীন (১৭) এর লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স আসে। এ সময় বাড়িতে নারী-পুরুষ আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠে। শোকে স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো বামনসুন্দর গ্রাম।

গত রোববার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জিয়া উদ্দিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কাতরাচ্ছেন। সেখানে চিকিৎসাধীন তার মেয়ে কায়সার জাহান তানিশার অবস্থাও শঙ্কাজনক। তানিশা হারাল তার মা এবং ভাইকে। জিয়া উদ্দিন হারাল স্ত্রী-সন্তান। নুরুল করিম হারাল ছয় সন্তানের মধ্যে কনিষ্ঠ সন্তান ।

কাটাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আলেয়া বেগম বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় বামনসুন্দর এলাকার মা-ছেলেসহ তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে মা-ছেলের জন্য পাশাপাশি কবর খোঁড়ার দৃশ্য দেখে স্বজন ও প্রতিবেশী অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।

জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম বলেন, নিহত সাইফুল ইসলামের বড় ভাই মোহাম্মদ রুবেল বাদী হয়ে পিকআপের চালক শাহাবুদ্দিনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করেছেন। তিনজনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। পিকআপচালককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত