যেভাবে পারিবারিক সংঘর্ষে আহত রাসেল হয়ে গেলেন জুলাইযোদ্ধা!

পনি চৌধুরী, চাতলপাড় বন্দর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২৫, ১১: ৩৫
আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০২৫, ১১: ৩৬

সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে পারিবারিক দ্বন্দ্বে আহত রাসেল রহমান জুলাইযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়েছে। রাসেল রহমান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোকর্ণ ইউনিয়নের ডিঘর গ্রামের প্রাইমারি স্কুলপাড়া এলাকার ফারুক মিয়ার ছেলে। গত কয়েক বছর ধরে তিনি ঢাকার বাড্ডা এলাকায় গদি মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেন।

বিজ্ঞাপন

রাসেল রহমানের দাবি, জুলাই-আগস্ট ২০২৪-এ গণ-অভ্যুত্থানের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ৫ আগস্ট ২০২৪ ঢাকার বাড্ডা এলাকায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। পরে ৮ আগস্ট নিজ এলাকা নাসিরনগরে চলে আসেন এবং নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি আহত জুলাইযোদ্ধা হিসেবে সরকারি গেজেটভুক্ত হন। তার গেজেট নম্বর ১৫৬৬, মেডিকেল কেস আইডি ২৭৫৩৯।

স্থানীয় অনুসন্ধানে জানা যায়, জুলাই-আগস্ট ২০২৪ গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাসেল রহমান নিজ এলাকায় ছিলেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাসেল রহমান পারিবারিক জায়গা সম্পত্তি নিয়ে তার চাচা ফারুক মিয়ার সাথে দুই দফা মারামারি করেন। মারামারির একপর্যায়ে রাসেল রহমান এবং তার বোনের মেয়ে নুসরাত মাথায় আঘাত পান। মারামারিতে তার চাচা ফারুক মিয়া স্ত্রী সন্তানসহ গুরুতর আহত হয়।

ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাসেল রহমান গত বছর ১২ আগস্ট বাদী হয়ে ফারুক মিয়াকে ১নং আসামি করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন (মামলার সি,আর নং-৪৯২/২৪, তারিখ-১২/০৮/২০২৪)। রাসেল রহমান গত ৫ আগস্ট ২০২৪ নিজ বসতবাড়িতে ফারুক মিয়া, নার্গিছ আকতার, মার্জিয়া আকতার এবং আরাফাত গংদের সাথে জায়গা জমি নিয়ে ঝগড়া বিবাদের একপর্যায়ে গুরুতর জখমী হয়েছেন উল্লেখপূর্বক আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন।

অপরদিকে ফারুক মিয়ার স্ত্রী নার্গিছ আকতার ১৯ আগস্ট ২০২৪ সালে বাদী হয়ে রাসেল রহমানকে ১নং আসামি করে নাসিরনগর থানায় মামলা করেন (মামলা জি,আর নং-১৫১/২৪ তারিখ- ১৯/০৮/২০২৪)।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাসেল রহমান আমার দেশকে প্রথমে বলেন, পারিবারিকভাবে আমাদের কোনো দ্বন্দ্ব হয়নি। পরে মামলার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলে মারামারির ঘটনা স্বীকার করে বলেন, আমি আমার চাচা ওপর দায় চাপাতে এবং চাচাকে নরম করতে বাড়ির অভিভাবক হিসেবে আমার মাথায় আঘাত দেখিয়ে মামলা করেছিলাম।

আপনি কোথায় চিকিৎসা নিয়েছেন এবং আপনার কাছে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রসহ কোনো কাগজপত্র আছে কিনা জানতে চাইলে রাসেল রহমান দৈনিক আমার দেশকে বলেন, সব কাগজপত্র আমার মানিব্যাগে ছিল। আমার মানিব্যাগ হারিয়ে গেছে, তাই কোনো কাগজপত্র নেই। তবে এগুলোর জন্য আমি মামলা করেছি।

এ বিষয়ে ফারুক মিয়া দৈনিক আমার দেশকে বলেন, ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে আমার পরিবারের সাথে রাসেল রহমান গংদের জায়গা জমি নিয়ে ঝগড়া বিবাদের ফলে রাসেল রহমানের মাথায় জখম হয়। উক্ত ঘটনায় উভয় পক্ষের মামলা হয়েছিল। পরে সালিশের মাধ্যমে সমাধান হওয়ায় উভয়পক্ষের মামলা তুলে নেয়। ৫ আগস্ট ২০২৪ মারামারির দিন রাসেল রহমান বাড়িতে ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেদিন রাসেল রহমানের নেতৃত্বেই ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল।

এ বিষয় প্রকৃত জুলাইযোদ্ধা মো. আলমগীর মিয়া জানান, রাসেলের ঘটনা নিয়ে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। এই ঘটনার সঠিক তদন্ত চাই। পুরো ঘটনা যদি সত্য হয় তাহলে সে আমাদের জুলাইযোদ্ধাদের বিতর্কিত করেছে বলে মনে করি।

আগস্টে পারিবারিক দ্বন্দ্বে আহত রাসেল গেজেটভুক্ত জুলাইযোদ্ধা স্বীকৃতি পাওয়ার বিষয় নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, রাসেল জুলাইযোদ্ধা হিসেবে ঢাকা থেকে গেজেটপ্রাপ্ত হয়েছে। যেহেতু এখন বিষয়টি জানাজানি হয়েছে, আমি এটা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত