চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক) আসনে বিএনপির প্রার্থিতা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। দলটির ছয় নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী। এতে তৃণমূলে বিভক্তি দেখা গেছে। আসন পুনরুদ্ধারে তাদের ঐক্যবদ্ধ করে ভোটযুদ্ধে নামা এখন দলটির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে জোটগতভাবে এলডিপির প্রার্থীকে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে বলে গুঞ্জন আছে। এটি নিয়েও ক্ষোভে ফুঁসছে তৃণমূল। অন্যদিকে ঐক্যবদ্ধভাবে নেতাকর্মীদের নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী।
সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ফের ঘুঁটি সাজানো শুরু করেছে বিএনপি। একসময় জাতীয় রাজনীতিতে ‘শক্তিশালী ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত হলেও বিগত তিনটি নির্বাচনে প্রার্থী না দেওয়ায় আসনটিতে নানা সমীকরণ তৈরি হয়েছে। বিএনপি এ আসন পুনরুদ্ধারে একটি কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়েছে। এ আসনে এখনো বিএনপি কাউকে মনোনয়ন দেয়নি। এ কারণে প্রার্থিতা নিয়ে জটিলতা রয়েছে।
এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে বর্তমানে আলোচনায় আছেন ছয়জন। তারা হলেন—ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাকালীন যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক বিচারপতি আবদুস সালাম মামুন, বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মহসিন জিল্লুর করিম, ২০০৮ সালের প্রার্থী মিজানুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দীন চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আনোয়ার চৌধুরী, আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি সংসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম রাহী। এখানে নিজেদের মতানৈক্যের কারণে তৃণমূলেও অসন্তোষ বাড়ছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, সবাই কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে মনোনয়নের জন্য লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে অনেকে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে সক্রিয় উপস্থিতির কথা শীর্ষ নেতৃত্বকে বলছেন। দলীয়ভাবে নিজেদের ত্যাগ এবং স্বৈরাচার পতনে মাঠের লড়াইয়ের কথাও তুলে ধরছেন। তারা পৃথকভাবে নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ, ৩১ দফা কর্মসূচির লিফলেট বিতরণ করছেন। এখানে কোনো কারণে যদি বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেওয়া না হয় এবং শরিক কোনো দলকে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা তৃণমূল সংগঠনকে পুনরুজ্জীবিত করা আরো কঠিন হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তাদের মতে, ঐক্যবদ্ধ বিএনপি সবার জন্য চ্যালেঞ্জ। একতাবদ্ধ থেকে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দিতে পারলে বিএনপি আবার নিজেদের হারানো ঘাঁটি পুনরুদ্ধারের সুযোগ পাবে।
২০০৮ সালে বিএনপি থেকে বেরিয়ে এলডিপি গঠনের পর কর্নেল অলি আহমদ দলীয়ভাবে বিএনপির বিরুদ্ধে অবস্থান নেন—এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তবে এর আগে বিএনপির টিকিটে বেশ কয়েকবার নির্বাচনে জয়ী হন কর্নেল অলি। এছাড়া পাশের চট্টগ্রাম-১৫ আসনেও তিনি জয় পেয়েছিলেন। বিএনপির বহু মনোনয়নপ্রত্যাশীর জটিলতার বিপরীতে অনেকটাই স্বস্তিতে আছে এলডিপি। অবশ্য আগামী নির্বাচনে কর্নেল অলি নিজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। তবে নিজের ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক সানীকে এ আসনে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি এলডিপির একাংশ দাবি করেছে যে জোটগতভাবে চট্টগ্রাম-১৪ আসনে তাদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তাদের মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক ওমর ফারুক সানি (কর্নেল অলির ছেলে)। নিজ দলে তিনি খুবই জনপ্রিয়।
তবে বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপির স্থানীয় নেতারা। দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও মনোনয়নপ্রত্যাশী নুরুল আনোয়ার চৌধুরী বলেন, কেন্দ্র থেকে এলডিপিকে মনোনয়ন দেওয়া হলে চট্টগ্রাম-১৪ আসনের বিএনপি নেতাকর্মীরা তা মেনে নেবে না। এলডিপির শীর্ষ নেতারা অতীতে বিএনপি চেয়ারপারসনসহ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন—এ আসনে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নেই। জামায়াতের প্রার্থী ডা. শাহাদাৎ হোসেনও এ আসনে একজন শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী। তিনি চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন হিসেবে চট্টগ্রামে সুপরিচিত। নীরবে কিন্তু সুসংগঠিতভাবে মাঠে কাজ করছেন তিনি। তার দীর্ঘদিনের আদর্শিক অনুসারীদের সংখ্যা, মসজিদ-মাদরাসাভিত্তিক নেটওয়ার্ক এবং গ্রামীণ ভোটব্যাংক নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে আরো ঘনীভূত করেছে। যদিও জামায়াত প্রকাশ্যে বড় ধরনের সমাবেশ করছে না, তবে তৃণমূলে তাদের সমর্থকরা সক্রিয় আছেন। তারা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচারে নেমেছেন।
এ বিষয়ে এক স্থানীয় শিক্ষক বলেন, ‘শাহাদাৎ সাহেবের একটা স্থায়ী ভোট ব্যাংক আছে। তার সমর্থকরা কম কথা বলেন, কিন্তু ভোটের দিনে তারা সবাই উপস্থিত থাকে।’


সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে ভোট দিতে ৩ লাখ ছাড়াল প্রবাসীর নিবন্ধন
টিকিটের দাম ২০ টাকা, ঠিকাদার নিচ্ছেন ৩০