কুমিল্লার লালমাই উদ্ভিদ উদ্যানে দীর্ঘদিন ধরে চলছে টিকিট বিক্রির নামে প্রতারণা। সরকার নির্ধারিত ২০ টাকার প্রবেশ মূল্য দর্শনার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ৩০ টাকা। এভাবে তিন বছর ধরে অবৈধভাবে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে উদ্যানের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আইয়ুব ব্রাদার্স। এতে ক্ষোভে ফুঁসছেন ভ্রমণপিপাসুরা। নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে স্থানীয় পর্যটনে।
লালমাই উদ্ভিদ উদ্যান কুমিল্লার কোটবাড়িতে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র এবং বিরল উদ্ভিদ সংরক্ষণের স্থান। এটি লালমাই পাহাড়ের সবুজ ভাঁজে গড়ে তোলা হয়েছে এবং এখানে প্রায় ৭৬ প্রজাতির বিপন্ন উদ্ভিদ সংরক্ষণ করা হয়েছে। উদ্যানটি ১৭ একর জমির ওপর নির্মিত এবং এর মূল উদ্দেশ্য হলো বিরল উদ্ভিদ সংরক্ষণ, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল তৈরি এবং শিক্ষা-গবেষণায় সহায়তা করা। এটি দেশের তৃতীয় বিরল উদ্ভিদ উদ্যান এবং কুমিল্লায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
উদ্যানে দর্শনার্থীর পকেট কাটার অভিযোগ স্থানীয়দের মুখে মুখে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টির কোনো সমাধান না করায় তা যাচাই করতে যান আমার দেশ প্রতিনিধি। পর্যটক সেজে প্রবেশ করার সময় টিকিটমূল্য হিসেবে আদায় করা হয় ৩০ টাকা। কিন্তু টিকিটের গায়ে লেখা ছিল ২০ টাকা। কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা বনমালী মোহাম্মদ রনির কাছে এর কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, ২০ টাকার টিকিটের মূল্য ৩০ টাকা নিচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদের নাকি খরচ বেশি হচ্ছে।
বিদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রে একই টিকিটের দাম রাখা হয় ৪০০ টাকা। এভাবে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ দর্শনার্থী থেকে অতিরিক্ত ১০ টাকা করে নেওয়া হলে দৈনিক বাড়তি আয় দাঁড়ায় প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। হিসাব অনুযায়ী এভাবে গত তিন বছরে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। মূলত, তিন বছর আগে এ উদ্যানের ঠিকাদারি পেয়েছে আইয়ুব ব্রাদার্স। এরপর শুরু হয় দর্শনার্থীর পকেট কাটার এই কারবার।
এই বাগানের ৯০ শতাংশ গাছই বিপন্ন ও দুষ্প্রাপ্য। দেশের পর্যটনের বিশেষ আকর্ষণ শালবন বৌদ্ধ বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর থেকে খুব কাছে হওয়ায় এখানে বেড়াতে আসেন অনেকেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উদ্যানে অর্জুন, আমলকী, উড়িআম, কনক, করমচা, কাউ, কদবেল, খাটজারুল, গোলাপজাম, গুটগুটিয়া, চন্দুল, চালমুগড়া, চাপালিশ, চিকরাশি, ছাতিয়ানি, তুন, ঢাকিজাম, তেলশুর, বুদ্ধনারকেল, পিতরাজ, শরবতীলেবু, সিভিট, হরীতকী, সজিনাসহ নানা প্রজাতির গাছ লাগানো আছে। কিন্তু এ পর্যটন কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের প্রতারণায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন দর্শনার্থীরা।
কুমিল্লার লাকসাম থেকে ঘুরতে আসা ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, ‘আমরা তিনজন ৩০ টাকা করে ৯০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করেছি। কিন্তু, এখন কাগজে লেখা দেখি দাম ২০ টাকা। এর মানে তারা প্রতিদিন মানুষকে ঠকাচ্ছে এবং দর্শনার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে।’
পরিবারের ৫ সদস্য নিয়ে নোয়াখালী থেকে ঘুরতে আসা চাকরিজীবী তাসলিমা আক্তার বলেন, এখানে বিরল প্রজাতির বিভিন্ন গাছ আছে, সেগুলো দেখতে এসেছি। টিকিট ২০ বা ৩০ টাকা—এটা বড় বিষয় না । কিন্তু ২০ টাকার জায়গায় অন্যায়ভাবে ৩০ টাকা নিচ্ছে—এটা স্পষ্ট প্রতারণা।
টিকিট কাটার দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ শাহীন বলেন, ‘পোষায় না দেখে ২০ টাকার টিকিট ৩০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে। আমরা টিকিট বেচে প্রতিদিন বিকালে টাকা কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিই।’
লালমাই উদ্ভিদ উদ্যানের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ২০ টাকার টিকিটে ৩০ টাকা নেওয়া হচ্ছে এটা আমার জানা নেই। তিনি দায়িত্ব এড়ালেও দর্শনার্থীরা জানান, বছরের পর বছর ধরে একইভাবে বেশি টাকা দিয়ে এ পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ করতে হচ্ছে।
২০ টাকার টিকিট ৩০ টাকা করে কেন নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে লালমাই উদ্ভিদ উদ্যানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. আইয়ুব বলেন, ‘আমার ম্যানেজার প্রদীপকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সে যদি ২০ টাকার টিকিট ৩০ টাকা নিয়ে থাকে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি তার ম্যানেজার প্রদীপের ওপর দায় চাপিয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আরো বলেন, ‘তাকে লালমাই উদ্ভিদ উদ্যান থেকে বের করে দিয়েছি। তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ পেয়েছি।’
কুমিল্লা সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা জি এম মোহাম্মদ কবির বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এভাবে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা অনৈতিক কাজ। আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’


বিএনপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী জামায়াত বিরামহীন প্রচারে
তফসিলের আগে পদত্যাগ দুই ছাত্র উপদেষ্টার