বিএনপি নেতা গিয়াস-আকবর দ্বন্দ্বে ১১ মাসে ৬ খুন

চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৫, ১৬: ৪০
চট্টগ্রামের রাউজানে বিএনপির উপজেলা ও পৌরসভা কমিটি ঘোষণার জেরে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। ঘটনা ২৩ জানুয়ারি।

গত বছরের ৫ আগস্টে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ১১ মাসে চট্টগ্রামের রাউজানে ৮ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ৬ হত্যাকাণ্ডই ঘটেছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার অনুসারীদের দ্বন্দ্বে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাউজানে সহিংসতা শুরু হয় গত বছরের ২৮ আগস্ট। ওইদিন বিকেলে পৌরসভার চৌধুরী মার্কেট এলাকায় পিটিয়ে হত্যা করা হয় রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কাউখালীর শ্রমিকলীগ নেতা আব্দুল মান্নানকে। এরপর ১ সেপ্টেম্বর সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাগানবাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় মো. ইউসুফ মিয়ার লাশ।

১১ নভেম্বর চিকদাইর ইউনিয়নে নিখোঁজ মাদরাসা শিক্ষক আবু তাহেরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সর্তাখাল খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হলেও হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়নি। ২৪ জানুয়ারি নোয়াপাড়ায় জুমার নামাজে যাওয়ার পথে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমকে। চাঁদা না দেওয়ায় তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়। চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে যুবলীগ কর্মী মুহাম্মদ হাসানকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

১৫ মার্চ হলদিয়ায় ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে নিহত হন যুবদল কর্মী কমর উদ্দিন জিতু। ২১ মার্চ পূর্বগুজরায় গণপিটুনিতে নিহত হন মো. রুবেল নামের এক যুবক। তাকে গরু চোর সন্দেহে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

২০ এপ্রিল রাউজানের বাগোয়ান ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বাসায় ভাত খাওয়ার সময় যুবদলকর্মী মুহাম্মদ মানিক আবদুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর ২২ এপ্রিল একই ইউনিয়নে প্রতিপক্ষের পিস্তলের গুলিতে মারা যান যুবদলকর্মী মো. ইব্রাহিম।

এই দুটি হত্যাকাণ্ডের জন্য সরাসরি গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারীদের দায়ী করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী।

তিনি আমার দেশকে বলেন, মানিক আবদুল্লাহকে মুখে পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত একজন সন্ত্রাসী মামুনকে ইতিমধ্যে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। সে গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার আমার দেশকে বলেন, খুনাখুনি ও চাঁদাবাজিতে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্র থেকে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তদন্ত টিম এসে পরিদর্শন করেও গেছে। তদন্তে যাদের নাম আসবে, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ আজ রোববার প্রকাশ্য বাজারে বোরকা পরিহিত অবস্থায় এসে বিএনপির কর্মীকে গুলি করে হত্যা করেছে। নিহত মো. সেলিম (৪২) রাউজান উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শমসের পাড়ার বাসিন্দা আমির হোসেনের ছেলে।

রাউজানের ওসি মনিরুল ইসলাম ভূইয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। হামলাকারী বোরকা পরে অটোরিকশায় করে এসেছিল-এমন তথ্য আমরা প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে পেয়েছি।

নিহত সেলিমকে স্থানীয়ভাবে বিএনপির সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিত বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নাম না প্রকাশের শর্তে জানিয়েছেন, এসব মামলায় তদন্ত করতে গেলে বারবার রাজনৈতিক চাপ আসে। বিশেষ করে বিএনপির দুই প্রধান নেতা গিয়াস কাদের চৌধুরী ও গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারীদের বিষয়ে পুলিশকে প্রভাবিত করার চেষ্টা হয়। থানা পর্যায়ের কর্মকর্তারাও বারবার হস্তক্ষেপের শিকার হন বলে জানান তারা।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের এসপি মো. সাইফুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, রাউজানে হত্যাকাণ্ডের পেছনে মূল হোতা রায়হান নামে এক সন্ত্রাসী। তিনি মূলত অস্ত্রের যোগানদাতা। আজকের হত্যায়ও তার জড়িত থাকার কথা বলেছেন হত্যার শিকার হওয়া যুবকের স্ত্রী। তাকে দেড়মাস ধরে আমরা অনুসরণ করছি। যখনই অভিযানে নামি তখনই পাহাড়ে গহীনে চলে যায় সে। পাহাড়তো আর আমাদের না। সেটি সেনাবাহিনীর অধীনে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনীতির হস্তক্ষেপ আমরা কান দিইনা। আমরা আমাদের আইন অনুযায়ী চলছি। সে অনুযায়ী আসামিদের গ্রেপ্তার করছি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত