মাতৃত্বকালীন ছুটি না থাকায় বিপাকে নারী শিক্ষার্থীরা

আব্দুল্লাহ আল মামুন, কুবি
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ১২

কর্মক্ষেত্রে নারীরা মাতৃত্বকালীন ছুটি পেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বিবাহিত বা অন্তঃসত্ত্বা শিক্ষার্থীরা এখনো এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। গর্ভাবস্থার মতো সংবেদনশীল সময়েও তাদের ক্লাস, পরীক্ষা, প্রেজেন্টেশন ও ল্যাবের কাজ চালিয়ে যেতে হয়। এতে শারীরিক ও মানসিক চাপে তারা নানা সমস্যায় পড়েন।

বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছে আমার দেশ-এর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে মাতৃত্বকালীন ছুটি না থাকায় তারা নানা সমস্যায় পড়েন। উপস্থিতির কঠোরতা ও সেমিস্টার ড্রপের ভয়, শারীরিক-মানসিক চাপ, ব্রেস্টফিডিং ও শিশুসেবার সুযোগের অভাব তাদের জীবনে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মাতৃত্বকালীন ছুটি নীতিমালা, বিশেষ পরীক্ষা ব্যবস্থা, ব্রেস্টফিডিং কর্নার ও প্রশাসনের সংবেদনশীলতার দাবি জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার লিমা বলেন, প্রসবের আগে অন্তত একমাস এবং পরে অন্তত পাঁচ-ছয় মাস মায়ের বিশ্রামের প্রয়োজন। এই সময়টায় নিয়মিত ক্লাসে থাকা বা পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সত্যিই কঠিন। বাচ্চাকে সামলানো, ক্লাসে যাওয়া, আবার শিশুকে খাওয়ানোর জন্য ঘন ঘন বিরতি নিতে হয়। সব মিলিয়ে মানসিকভাবে প্রচণ্ড চাপ তৈরি হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা মিথিলা বলেন, এত এত চারপাশের প্রেসারে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি, মাঝে-মধ্যে মনে হয়েছে সুইসাইড করি। এটেনডেন্স কনসিডার করার জন্য লজ্জায় বলতে পারতাম না যে এই এই সমস্যা। পর্যাপ্ত প্রমাণ দিয়েও ছুটি মেলেনি। ফলে সন্তানকে ঠিকভাবে ব্রেস্টফিড করাতে পারিনি।

তিনি আরো বলেন, যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি কনসিডার করা হয়, তাহলে অন্তত কিছুটা স্বস্তি পাবে। কারণ গর্ভাবস্থা ও সন্তান জন্মের পর তারা কঠিন মানসিক ট্রমার মধ্য দিয়ে যায়।

জানা যায়, ভারতের কেরালার মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয় (এমজেইউ) ছাত্রীদের জন্য ২০২২ সালের ডিসেম্বরে চালু করেছে তিন মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণায় বলা হয়, অনার্স ও পোস্টগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ের ১৮ বছর বা তার অধিক বয়সি শিক্ষার্থীরা গর্ভকালীন পরিস্থিতিতে কোর্স চলাকালীন একবার বা দুবার তিন মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি নিতে পারবেন এবং ২০২৩ সালে কেরালা বিশ্ববিদ্যালয়ও ঘোষণা দিয়েছে ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি। তাদের নিয়ম অনুযায়ী, ১৮ বছরের বেশি বয়সি ছাত্রীদের প্রসবের আগে বা পরে ছয় মাস পর্যন্ত ছুটি নেওয়ার সুযোগ থাকবে।

এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও মাতৃত্বকালীন ছুটি চান। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ জুন উপাচার্য বরাবর মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ পাঁচটি দাবি উল্লেখ করে স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা।

এছাড়া বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও একই দাবিগুলো উত্থাপন করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু)-এর কার্যনির্বাহী সদস্য ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রী সংস্থা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভানেত্রী সাবিকুননাহার তামান্না বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মাতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত