মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ঝটিকা মিছিল করে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ। গত ১৭ নভেম্বর হওয়া সেই মিছিল থেকে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। গ্রেপ্তারদের একজনের তথ্যে জানা গেছে, মিছিল করার জন্য উসকানি দিয়েছেন স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল হোসেন মজুমদার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ওইদিনের মিছিল থেকে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়, তাদের মধ্যে একজন ইমরান হোসেন। জিজ্ঞাসাবাদে সে পুলিশকে জানায় সেদিন মিছিল করার জন্য উসকানি দিয়েছিলেন নাঙ্গলকোট উপজেলার রায়কোট দক্ষিণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ঢালুয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল মজুমদার ।
ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, এখনো বেলাল মজুমদারের অফিসের টেবিলে রয়েছে শেখ মুজিবের ছবি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইমরান ছাত্রলীগ কর্মী এবং এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত। তার বাবা ইসহাক মিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বেলাল মজুমদার নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ দিয়ে এলাকায় অরাজকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছেন। এর প্রমাণ মেলে গত ১৭ নভেম্বর গ্রেপ্তার ছাত্রলীগ নেতা ইমরানের তথ্যে। আর ইমরানের জামিন করাতে মনগড়া প্রবেশপত্র এবং প্রত্যয়নপত্র দেন তিনি।
বিদ্যালয়ে গিয়ে ইমরান যে ক্লাসে পড়ে, সেই ক্লাসের হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে বেলাল মজুমদার তা দেখাতে অনীহা প্রকাশ করেন। এ ছাড়া গ্রেপ্তার হওয়ার দুদিন পর তার পরীক্ষার প্রবেশপত্র তৈরি করে বেলাল মজুমদার দিয়ে আসেন বাবা ইসহাকের হাতে, যাতে তার জামিন করানো সহজ হয়।
বিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্র জানায়, দু-তিন মাস পরপর ইমরান বিদ্যালয়ে আসত। সে তার বাবার ব্যবসায় সময় দেয়। বখাটেদের সঙ্গে চলার কারণে তার সঙ্গে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খুব একটা কথা বলত না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢালুয়া এলাকার এক ব্যক্তি জানান, সাবেক অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামালের মেয়ে নাফিসা কামালের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছেন বেলাল মজুমদার। তাকে প্রতিনিয়ত ফোন করেন নাফিসা কামাল। প্রধানশিক্ষকের মোবাইল ট্র্যাক করলেই আরো প্রমাণ পাওয়া যাবে।
ওই ব্যক্তির অভিযোগ, বেলাল মজুমদার এখনো বিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগের লোকজনকে বিশেষ সুবিধা দেন। যার প্রমাণ আওয়ামী লীগ নেতা ইসহাকের ছেলে ইমরানকে বাঁচাতে মনগড়া প্রবেশপত্র প্রদান।
বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভারতে পলাতক হাসিনা ঢালুয়া ইউনিয়নের কয়েকজন নেতার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। এর মধ্যে ইমরানের বাবা ইসহাক মিয়াও রয়েছেন। তারা জানান, ইমরান তাদের সঙ্গে গর্ব করে বলত যে, তার বাবা হাসিনার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন।
নাঙ্গলকোট পৌরসভা ছাত্রদলের নেতা বেলাল হোসেন আমার দেশকে বলেন, ঢালুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের আখড়া। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা ইমরান কয়েকজনকে নিয়েই সড়কে মিছিল করেছিল। মিছিলে থাকা কয়েকজন তা স্বীকারও করেছে। এখন তাকে বাঁচাতে চাইছেন প্রধান শিক্ষক বেলাল।
ছাত্রলীগের মাধ্যমে এলাকায় অরাজকতা সৃষ্টির অভিযোগ প্রসঙ্গে বেলাল মজুমদারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নাঙ্গলকোট থানার ওসি ফজলুল হক আমার দেশকে বলেন, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা ইমরান গ্রেপ্তার হওয়ার দুদিন পর প্রধান শিক্ষক বেলাল মজুমদার তার জামিন করানোর চেষ্টা করেন। এ জন্য তিনি ওই ছেলের একটি প্রবেশপত্র বানিয়ে তার বাবা ইসহাককে দেন। পাঁচ বছর আগের পুরোনো ছবি দিয়ে তিনি এই সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

