Ad T1

সাইনবোর্ডে ৫ কোটি টাকার ফুটওভার ব্রিজ হকারদের দখলে, জনদুর্ভোগ চরমে

কবিরুল ইসলাম, ফতুল্লা (নারায়ণগঞ্জ)
প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৫, ১৬: ৫৩
আপডেট : ০৭ মে ২০২৫, ১৬: ৫৬

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সাইনবোর্ড মোড়ে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ফুটওভার ব্রিজ এখন হকারদের দখলে। ফলে জনসাধারণের নিরাপদ চলাচলে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারন করেছে। শুধু সাইনবোর্ড মোড়ের ফুটওভার ব্রিজই নয় পুরো সাইনবোর্ড মোড় এখন অবৈধ দখলদারদের দখলে। রাস্তার দুপাশে গড়ে উঠেছে শত শত দোকান ও আন্তঃজেলা বাস কাউন্টার। আর সড়কের পাশে গড়ে উঠেছে অবৈধ বাস, সিএনজি, লেগুনা, অটোরিকশা স্ট্যান্ড। ফলে এ সড়কে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছেন না মানুষ। যানজটে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা। প্রশাসনের উদাসীনতা ও অসহযোগিতায় পরিস্থিতি দিন দিন আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ‘গ্রিন এন্ড ক্লিন’কর্মসূচি হাতে নিয়ে সাইনবোর্ড মোড় থেকে সব অবৈধ স্ট্যান্ড ও হকারদের উচ্ছেদ করেছিল। কিন্তু উচ্ছেদের ২৪ ঘণ্টা না পেরুতেই আবারো দখল হয়ে যায় সড়ক ও ফুটওভার ব্রিজ।

জানা যায়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড ৮ লেনে উন্নীত করে জনসাধারণের নিরাপদ রাস্তা পারাপারের জন্য সাইনবোর্ড মোড়ে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করে স্থানীয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। উন্নয়ন কাজ শেষ হওয়ার পরপরই অসাধু ব্যবসায়ীরা ফুটওভার ব্রিজটি দখল করে নেয়। ব্রিজের সিঁড়ি থেকে শুরু করে উপরের অংশে অন্তত অর্ধশত অস্থায়ী দোকান গড়ে উঠেছে। ফলে সাধারণ মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে রাস্তা পারাপার হতে পারছে না। আর ফুটওভার ব্রিজের নিচের অংশ দখল করে গড়ে উঠেছে চা-সিগারেট ও ফলের দোকান। রাস্তার উপর পরিবহন শ্রমিকরা দখল করে গড়ে তুলেছে অবৈধ স্ট্যান্ড।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের উপরে বিভিন্ন কোম্পানির বাস থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করা হচ্ছে। লেগুনা, সিএনজি ও অটোরিকশা পার্কিংয়ের জন্য রাস্তার প্রায় অর্ধেকের বেশি দখলে আছে। সন্ধ্যার পর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়। অসংখ্য ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সিএনজি পাশাপাশি হকারদের হাক ডাকে রাস্তা একেবারে অচল হয়ে পড়ে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই অবৈধ দখলের কারণে প্রতিদিনের যাত্রা যেন এক অসম্ভব চ্যালেঞ্জ। রোগী নিয়ে হাসপাতালে যেতে সাইনবোর্ড এলাকাটি পার হতেই ২০ মিনিট লেগে যায়।

রিকশাচালক কামাল বলেন, এখানে জ্যাম এড়াইতে বিকাল ৪টার পর রিকশা লইয়া যাই না। গাড়ি আইটকা যায়, ভাড়া বাইড়া যায়, যাত্রীরা চেইতা যায়, কি করমু কন।

কলেজছাত্রী তানজিনা অভিযোগ করেন, ক্লাসে লেট হওয়ার ভয়ে এখন ১ ঘণ্টা আগেই বের হতে হয়। ব্রিজের উপর দিয়ে হাঁটতে গেলে দোকানদারদের গালাগালি শুনতে হয়।

স্থানীয় দোকানি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমি মাসিক ভাড়া দিয়া দোকান দিছি, কিন্তু হকাররা বিনা পয়সায় জায়গা দখল করে ব্যবসা করছে। প্রশাসন কিইচ্ছু করে না।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের ইনস্পেক্টর নাইম হোসেন দাবি করেন, আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি, কিন্তু হকার ও চালকরা পুলিশ সরে যাওয়ার পর আবার দখল করে নেয়।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, পূর্বেও আমরা এসব জায়গায় অভিযান পরিচালনা করেছি। নতুন করে আবার মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দ্রুত অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হবে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, আমরা সমন্বিতভাবে আগেও বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করেছি, আবারও আইনানুগভাবে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিবো।

নারায়ণগঞ্জ জেলা গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী তরিকুল ইসলাম সুজন বলেন, সাইনবোর্ড মোড়টি দখলদারদের কবল থেকে উচ্ছেদ করে নাগরিকদের চলাচলের উপযোগী করা প্রশাসনের দায়িত্ব। অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে যারা চাঁদা আদায় করছে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তাহলেই সাইনবোর্ড মোড় পরিচ্ছন্ন করা যাবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত