কম বিনিয়োগে বেশি লাভ হওয়ায় কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তুলা চাষ। ধারাবাহিকভাবে লাভবান হওয়ায় কৃষকরা এ চাষে আগ্রহী হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। উপজেলায় এ বছর ১৪৭ হেক্টর জমিতে তুলার আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি বছর গাছেও ব্যাপক ফলন হয়েছে । আশা করা হচ্ছে, এ বছর কৃষকরা কয়েকগুণ বেশি লাভবান হবেন।
জানা যায়, তুলা গ্রীষ্মকালীন ফসল। মে মাসের শেষ ভাগ থেকে শুরু করে জুনের প্রথমার্ধের মধ্যে জমিতে তুলা বীজ বপন করতে হয়। বীজ বপনের ছয় মাস পর তুলা সংগ্রহ করা যায়। তুলা চাষ ছড়িয়ে দিতে তুলা উন্নয়ন বোর্ড ও বিভিন্ন প্রকল্প কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ সার্বিক সহযোগিতা করছে সরকার। ভেড়ামারা উপজেলায় কম পুঁজি ও শ্রম এবং সরকারি সহযোগিতায় তুলা চাষের পরিধি ক্রমেই বাড়ছে।
এখানে উৎপাদিত তুলা সরাসরি তুলা উন্নয়ন বোর্ড ন্যায্য দামে কিনে নেয়। ফলে কৃষকরা অন্য ফসলের তুলনায় তুলাতে অধিক লাভবান হচ্ছেন। সরকারি সহায়তায় কৃষকরা সিবি-১২ এবং হাইব্রিড প্রজাতির রুপালি-১ জাতের তুলার চাষ করছেন। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের আগ্রহ বেড়ে যায়। তবে কিছু কিছু ক্ষেতে এসিট, জেসিট, আমেরিকান বোলওয়ার্ম, স্পটেট বোলওয়ার্ম ও আঁচড়া পোকার অক্রমণ দেখা দিয়েছিল। এতে তুলা চাষি কীটনাশকের বদলে ফেরোম্যান ফাঁদ ও পার্চিং পদ্ধতিতে বেশ উপকার পেয়েছেন। কৃষক বীজ তুলার দাম গত বছর পেয়েছিল মণপ্রতি ৪ হাজার টাকা। প্রতি কেজি ১০০ টাকা। কৃষকদের তুলা চাষে সরকার বিনামূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক, প্রশিক্ষণ ভাতা প্রদান করেন । এর মধ্যে তুলা প্রদর্শনী ও প্রণোদনা দিয়ে আসছে।
তুলা চাষি হাসান আলি জানান, তিনি চার বিঘা জমি বন্ধক নিয়ে তুলা চাষ করেছেন। এতে তিনি লাভবান হচ্ছেন। তুলা চাষে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ালে অনেক অনুর্বর, নিষ্ফলা বা অনাবাদি জমিতে তুলা চাষ করা সম্ভব বলে তিনি জানান।
তুলা চাষিরা জানান, রুপালি-১, হোয়াইট গোল্ড-১, হোয়াইট গোল্ড-২, ইস্পাহানী শুভ্র-৩, লালতীর ডিএম-৪, সিবি-১, উফশী, বিটি তুলা জাতের তুলা প্রতি বিঘাতে বীজসহ উৎপাদন হয় ১৫ মণ থেকে ২০ মণ । যার বর্তমান বাজারমূল্য কমপক্ষে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা। এমন অনুর্বর জমিতে অন্য কোনো ফসলে এই লাভ পাওয়া সম্ভব নয়। আবার একই জমিতে সাথী ফসল হিসেবে বিভিন্ন শাকসবজি ও মসলা জাতীয় ফসল চাষ করেও বাড়তি আয় করা যায় । তাইতো তুলা চাষিদের মধ্যে অনেকে বলেন, জমির তুলা চাষে, লাখপতি অনায়াসে।
মসলেম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি জানান, নিষ্ফলা জমিতে তুলা চাষ করায় একদিকে যেমন জমির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে কৃষকের পরিবারে আসছে সচ্ছলতা।
ভেড়ামারা কটন ইউনিট কর্মকর্তা মনজুয়ার বেগম জানান, হোয়াইট গোল্ড-১, হোয়াইট গোল্ড-২, রুপালি-১, ডিএম-৪, সিবি-১ হাইব্রিড ও বিটি কটন, উফশী জাতের তুলা চাষ করা হয়েছে। এই জাতগুলো মাঠে ১৬-২০ মণ হারে বিঘাপ্রতি ফলন হয়। উপজেলায় চলতি বছরে ১৪৭ হেক্টর জমিতে তুলার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি সহযোগিতায় বিভিন্ন প্রদর্শনী ও কৃষকের নিজ অর্থায়নে চাষ করা হয়েছে। ভালো ফলন ও ন্যায্য দাম পাওয়ায় আগামীতে চাষির সংখ্যা অনেক বাড়বে বলে আশা করছেন তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাসহ স্থানীয় কৃষকরা।

