পাউবোর বেড়িবাঁধ সংস্কারে অফিস সহায়কই ঠিকাদার

উপজেলা প্রতিনিধি, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা)
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৬: ০৪

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বরাদ্দকৃত প্রায় ৬ কোটি টাকার বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে পাউবোর শ্যামনগর উপ-কার্যালয়ের একজন অফিস সহায়ক নিজেই কাজের সাব-কন্ট্রাক্ট নিয়ে স্থানীয় লেবার সর্দারদের মাধ্যমে চলছে এ প্রকল্পের কাজ। এতে যেমন তেমনভাবে কাজ চলায় দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোর কোটি কোটি টাকার অবকাঠামো এখন ঝুঁকির মুখে।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে জানা যায়, সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-১-এর আওতাধীন ৫ নম্বর পোল্ডারে উপকূলীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় যে সকল বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ চলমান রয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু স্থান হলো:

ঘোলা তেরমনি: ১৮০ ও ৯৫ মিটার মাটি ও জিও ব্যাগ,কুপট মালী বাড়ি ও শাহবুদ্দীনের বাড়ি: ৭৫–৮৫ মিটার, বদ্দি বাড়ি খেয়াঘাট: ৩৫ মিটার, ঝাপা খেয়াঘাট: ১৭০ মিটার, খোস্তাঘাটা গেট: ২১০ মিটার, বিজিবি ক্যাম্প, বুড়িগোয়ালিনী: ১৮ হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং, দাতিনাখালী ও মুন্সিগঞ্জ এলাকা: প্রায় ১ কিলোমিটারের কাজ।

এই সবকটি কাজের দায়িত্ব নিয়েছেন মো. খোরশেদ আলম। যিনি শ্যামনগর পাউবোর উপ-শাখায় অফিস সহায়ক পদে কর্মরত। অথচ পাউবোর নিয়ম অনুযায়ী কোনো সরকারি কর্মচারী সরাসরি কিংবা পরোক্ষভাবে সরকারি প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন না। তিনি সাব-কন্ট্রাক্ট নিয়ে লেবার সর্দারদের মাধ্যমে এই কাজ পরিচালনা করছেন, যেটি সম্পূর্ণরূপে বিধিবহির্ভূত।

দরপত্র অনুযায়ী নদীপাড়ে স্লোপ ২৪ ফুট, ভূমির পাশে ১৪ ফুট, মাথার প্রস্থ ১৪ ফুট এবং উচ্চতা হওয়া উচিত পুরনো বাঁধ থেকে ৩ ফুট বেশি। কিন্তু অধিকাংশ এলাকায় উচ্চতা মাত্র ১ থেকে দেড় ফুট এবং প্রস্থও অনেক কম। এ ছাড়াও স্কেভেটর মেশিন দিয়ে বাঁধের কাছ থেকে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে, যার ফলে কিছু এলাকায় বাঁধ ইতোমধ্যে ধ্বসে পড়েছে।

জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়েও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। যেখানে ২২০ কেজি ওজনের বালু থাকার কথা, সেখানে অধিকাংশ ব্যাগে কম পরিমাণ বালু ভরা হচ্ছে, যা বাঁধকে করে তুলছে আরো দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ।

বুড়িগোয়ালিনী ইউপি চেয়ারম্যান হাজী নজরুল ইসলাম বলেন, আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ বাঁধ খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস সহায়ক খোরশেদ আলম ঠিকাদারের ভূমিকা নিয়ে বেআইনিভাবে কাজ করছে। প্রতিবছর অনিয়মের কারণে বাঁধ ঠিকভাবে টিকে থাকে না, আর একটু দুর্যোগেই ভেঙে পড়ে। এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও কোনো ফল হয়নি।

অভিযুক্ত খোরশেদ আলম নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, আমি কোনো সাব-কন্ট্রাক্ট নিইনি, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, কোনো দরপত্র ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে তিনি সরকারি কাজের পুরো দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকেও সাব কন্ট্রাক্ট নিয়ে সরকারি কর্মচারী খোরশেদ আলম দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় বাঁধ সংস্কারের কাজ করছেন। তিনি অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে কোটি টাকার কাজ নিয়ন্ত্রণ করছেন। ফলে প্রতিবছর কোটি টাকার বরাদ্দ থাকলেও কাজ হয় নিম্নমানের। খোরশেদ এখন কোটিপতি, আর আমরা বছরের পর বছর জলাবদ্ধতায় ভুগছি।

এই বিষয়ে সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পূর্বে কথা বলবেন বলেও তিনি পরে আর সাড়া দেননি।

সাব-জেলে অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তারা, সরকারের কাছে যে আহ্বান জানালেন ব্যারিস্টার আরমান

অসদাচারণের দায়ে টঙ্গী পাইলট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে শোকজ

জরুরি অবস্থা জারি করলেন পেরুর প্রেসিডেন্ট

গুম-খুনে জড়িত ১৫ সেনা কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত। ট্রাইব্যুনালে হাজির। সাবজেলে প্রেরণ

এবার ১ টাকায় গরুর মাংস বিতরণের ঘোষণা সেই এমপি প্রার্থীর

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত