সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় সাংবাদিকতা পেশার মর্যাদা যেন একদম তলানিতে। মাত্র একটি উপজেলায় এখন ‘সাংবাদিক’ পরিচয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ—যাদের অধিকাংশই পেশাটিকে ব্যবহার করছেন ব্যক্তিগত প্রভাব, চাঁদাবাজি, হুমকি আর দাপট দেখানোর ঢাল হিসেবে।
স্থানীয় হকার, মুদি দোকানদার, তরকারিওয়ালা, রাজমিস্ত্রি, ড্রাইভার, ইলেকট্রিক মিস্ত্রি, এমনকি মাদক ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দালাল, সবাই এখন পাঁচ হাজার টাকার কম-বেশি বিনিময়ে ভুয়া সনদ দিয়ে অনলাইন পোর্টাল কিংবা আঞ্চলিক ও জাতীয় পত্রিকা থেকে সংগ্রহ করছেন ‘প্রেস কার্ড’। সেই কার্ডই তাদের প্রধান অস্ত্র: পুলিশি ঝামেলা এড়ানো, প্রশাসনকে ভয় দেখানো, ব্যবসায়ী বা ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা আদায়, আর রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো।
চিকিৎসক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক, শিক্ষক ও ঠিকাদার এমন অনেকেই নিজেদের ব্যবসা রক্ষার ‘শিল্ড’ হিসেবে ব্যবহার করছেন এই কার্ড।
শ্যামনগর উপজেলায় ৮টি প্রেসক্লাব—সদস্য ২৫০ ছাড়িয়েছে। উপজেলায় রয়েছে আটটি প্রেসক্লাব—
শ্যামনগর উপজেলা প্রেসক্লাব: ৪০ জন
অনলাইন নিউজ ক্লাব: ৪০+ জন
শ্যামনগর রিপোর্টার্স ক্লাব: ৩০ জন
সুন্দরবন প্রেসক্লাব: ২৪ জন
উপকূলীয় প্রেসক্লাব: ১৬ জন
সীমান্ত প্রেসক্লাব: ১৭ জন
সীমান্তবর্তী প্রেসক্লাব: ১০ জন
রিপোর্টার্স ইউনিটি: ২৬ জন
এসব সংগঠনের বাইরে আরও ৭০–৭৫ জন ব্যক্তি নিজেদের ‘স্বাধীন সাংবাদিক’ পরিচয়ে চলাফেরা করছেন। মোট সংখ্যা তিন শতাধিক।
উপজেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে থানা, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, শিক্ষা অফিস—কোথাও শান্তি নেই। একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, এত সাংবাদিক আমরা জীবনে দেখিনি। আবদার পূরণ না করলে সিরিজ নিউজ। অনেকে সরাসরি টাকা চান। না দিলে ফেসবুক-ইউটিউবে ভুয়া প্রচারণা চালায়।
স্কুলশিক্ষক ইয়াসুনুর রহমান বলেন, যারা পড়াশোনাই জানে না, তারাই এখন আমাদের স্কুলে এসে হুমকি দেয়। এটা সাংবাদিকতার নামে চাঁদাবাজি ছাড়া কিছু না।
শ্যামনগরের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবু সাইদ বললেন, যারা সত্যিকারের সাংবাদিকতা করি, তারাও আজ প্রশ্নবিদ্ধ। সরকারের কাছে দাবি—ভুয়া অনলাইন পোর্টাল বন্ধ করুন, প্রেস কার্ড কঠোর যাচাই ছাড়া ইস্যু করবেন না।
বর্ষীয়ান সাংবাদিক শেখ আফজালুর রহমানের বলেন,২০–৩০ বছর সম্মান নিয়ে কাজ করছি। এখন আমরাও লজ্জায় মুখ দেখাতে পারি না। কিছু কার্ডবাজ সব নষ্ট করে দিয়েছে।

