ভোঁদড়ে চলে না পেট, তবু আঁকড়ে বাপ-দাদার পেশা

জেলা প্রতিনিধি, নড়াইল
প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬: ৫৭

ভোঁদড় বা উদবিড়াল। নড়াইলে পরিচিত দাঁইড়ে নামে। একসময় মৎস্যভোজী এ জীব দিয়ে মাছ শিকারে নামতেন এখানকার জেলেরা। এ পেশার মাধ্যমেই চলতো তাদের জীবন। কিন্তু সময়ের পালাবদলে নদী-নালা, খালবিলে তেমন মাছ না মেলায় অনেকে বদলে ফেলেছেন পেশা। তবে কেউ কেউ এখনও মায়া ছাড়তে পারেননি। পেট না চললেও তারা আঁকড়ে রেখেছেন বাপ-দাদার ঐতিহ্যবাহী পেশা।

পুরোনো সেই পদ্ধতিতেই মাছ ধরছেন জেলার সদর উপজেলার কলোড়া ইউনিয়নের গোবরা গোয়ালবাড়ি গ্রামের ২০ জন জেলে। জীবিকার তাগিদে মাত্র পাঁচটি নৌকায় নিয়মিতই শিকারে যাওয়ার চেষ্টা করেন তারা। ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরা এ গ্রামের জেলেদের ‘মালো’ নামে চেনেন অনেকে।

বিজ্ঞাপন

কথা হয় গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব নির্মল মালোর সঙ্গে। তিনি বলেন, একসময় আমারও দাঁইড়ে নৌকা ছিল। গোয়ালবাড়ি মালোপাড়ার সবাই এভাবে মাছ ধরতেন। ওই সময় নদী-খালে গেলে প্রচুর মাছ পাওয়া যেতো। বেশ ভালোভাবেই আমাদের সংসার চলতো। শুধু গোয়ালবাড়িই নয়, নড়াইল শহরতলীর চিত্রা নদীর পাড়ের পঙ্কবিলা, মাইজপাড়া, হাঁড়িয়ার ঘোপ, নবগঙ্গা নদীর তীরবর্তী রতডাঙ্গা, নলদী চণ্ডিনগর গ্রামে হাজারেরও অধিক ভোঁদড় নৌকা ছিল। কিন্তু মাছের আকাল দেখা দেয়ায় ক্রমশই এ পেশা ছাড়তে শুরু করেন অনেকে।

নির্মল বলেন, ১৫ বছর আগে এ গ্রামে ৫০টি ভোঁদড় নৌকা থাকলেও এখন রয়েছে পাঁচটি। চালানোর অভাবে ঘাঁটেই বাঁধা থাকে একটি। তবে মাছ না মিললেও এ নৌকায় মাছ শিকারের দৃশ্য নিতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান ছুটে আসে। কাজ শেষে তারা জেলেদের চার-পাঁচ হাজার টাকা করে পারিশ্রমিক দিয়ে যান।

ভোঁদড় নৌকার মালিক রবিন বলেন, ভোঁদড় দিয়ে মাছ শিকারের কাজে ব্যবহৃত জলযানকে ‘বাচাড়ি নৌকা’ বলা হয়। এসব নৌকা সুন্দরী কাঠের তৈরি। ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের ৮০-৯০ মণ ভারী একটি বাচাড়ি নৌকা বানাতে বর্তমানে প্রায় দুই লাখ খরচ হয়। এতে দুজন কারিগরের সময় লাগে দেড় মাস। এছাড়া প্রতিটি ভোঁদড় নৌকায় চারজন লোকের প্রয়োজন। এর মধ্যে দুজন নৌকা চালান। আর ভোঁদড় ও জাল ফেলেন দুজন। তবে রাতে মাছ বেশি ধরা পড়ে।

নৌকার মাঝি অজিৎ মালো বলেন, আগে ভোঁদড় নিয়ে সুন্দর বনেও চলে যেতাম আমরা। একমাস থেকে মাছ ধরে বেচা শেষে টাকা-পয়সা নিয়ে বাড়ি ফিরতাম। এখন সেখানেও মাছ ধরা নিষেধ। আগে শিকারে বেরিয়ে মাছ খেয়ে পেট ভরে নিতো ভোঁদড়। তাদের বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হতো না। কিন্তু বর্তমানে নদী-নালায় তেমন মাছ না থাকায় ভোঁদড়ের পেট ভরে না। তাই এখন প্রতিটি ভোঁদড়ের জন্য দিনে এক কেজি মাছ বরাদ্দ রাখতে হয়।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত