এখনো হদিস মেলেনি কোটি টাকা নিয়ে নিখোঁজ ব্যাংক ম্যানেজারের

উপজেলা প্রতিনিধি, ঈশ্বরদী (পাবনা)
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৮: ৪৯
আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ৩৭

পাবনার ঈশ্বরদীতে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা নিয়ে নিখোঁজ জনতা ব্যাংক পিএলসি পাকশী শাখার ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) খালেদ সাইফুল্লাহর এখনো খোঁজ মেলেনি। রবিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে ব্যাংকের নগদ অর্থ নিয়ে বের হওয়ার পর থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ ঘটনায় ঈশ্বরদী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে, “রবিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পাকশী শাখার ব্যবস্থাপক খালেদ সাইফুল্লাহ ক্যাশ রেমিটেন্সের জন্য ঈশ্বরদী কর্পোরেট শাখায় আসেন। আগের দিন শনিবার তিনি টেলিফোনে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা প্রয়োজনের কথা জানান। তবে আমাদের শাখায় নগদ সংকট থাকায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা দেয়া সম্ভব বললে তিনি রাজি হননি। পরদিন (রবিবার) সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে আবার ফোন করে ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টাকার চাহিদা জানান।”

তিনি আরও বলেন, “সেদিন সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে খালেদ সাইফুল্লাহ জনতা ব্যাংকের দাশুড়িয়া বাজার শাখা থেকে ৩০ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। পরে ঈশ্বরদী কর্পোরেট শাখায় এসে সকাল ১১টা ৩৫ মিনিটে পাকশী শাখার থেকে আরও ১ কোটি টাকা নগদ অর্থ গ্রহণ করেন। টাকা হস্তান্তরের সময় আনসার সদস্য মাহবুব তার সঙ্গে ছিলেন।”

“প্রয়োজনীয় ভাউচার ও রেজিস্টারে স্বাক্ষর সম্পন্ন করার পর সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে খালেদ সাইফুল্লাহ এবং আনসার সদস্য মাহবুব ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা নিয়ে পাকশী শাখার উদ্দেশে প্রাইভেটকারযোগে রওনা দেন। গাড়ির চালক ছিলেন মো. ইসমাইল হোসেন। তবে তিনি শাখায় পৌঁছে টাকা জমা দেয়ার কথা জানালেও এরপর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়” বলেন ব্যাংক কর্মকর্তা মোহছানাতুল হক।

বিকাল সাড়ে ৩টায় পাকশী শাখার সহকারী ম্যানেজারের সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানা যায়, খালেদ সাইফুল্লাহ তখনও শাখায় পৌঁছাননি। এ অবস্থায় আতঙ্কিত হয়ে ব্যাংক কর্মকর্তারা স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে যোগাযোগ করেন। পরে ফাঁড়ির পরামর্শে ঈশ্বরদী থানায় জিডি করা হয়।

এ বিষয়ে জনতা ব্যাংকের দাশুড়িয়া শাখার ব্যবস্থাপক শাহিনুর রহমান বলেন, “সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে পাকশী শাখার ম্যানেজার খালেদ সাইফুল্লাহ আমাদের শাখা থেকে ৩০ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ীই টাকা হস্তান্তর করা হয়।”

সঙ্গে থাকা আনসার সদস্য মাহবুব জানান, ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ঈশ্বরদী ব্র্যাক ব্যাংকের সামনে এসে তিনি আমাকে প্রাইভেটকার থেকে নামিয়ে দেন। এরপর গাড়ি নিয়ে চলে যান তিনি।

নিখোঁজ ম্যানেজারের স্ত্রী দিলরুবা বেগম বলেন, “সকালে তিনি বাসা থেকে বেরিয়ে ব্যাংকে যান। বিকালে ঈশ্বরদী কর্পোরেট শাখার কর্মকর্তারা বাসায় এসে তার নিখোঁজ হওয়ার খবর জানান। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি স্বেচ্ছায় কোথাও গেছেন, নাকি কেউ তাকে গুম করেছে—তা আমরা নিশ্চিত নই।”

জনতা ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন জোয়ার্দ্দার বলেন, “ঘটনাটি আমরা মৌখিকভাবে জানতে পেরেছি। পরে সরেজমিন পাকশী শাখায় গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করছি। এখনো তদন্ত চলছে। তবে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে বিষয়টি খুবই গুরুতর। ব্যাংকের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিলের প্রস্তুতি চলছে।”

ঈশ্বরদী থানার ওসি আ স ম আব্দুন নূর বলেন, “ব্যাংকের টাকা উত্তোলনের বিষয়টি আমরা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

নিখোঁজ ব্যাংক ম্যানেজার খালেদ সাইফুল্লাহ (৪৫) ঈশ্বরদী পৌর এলাকার আব্দুল গফুর শেখের ছেলে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত