শামুকখোল পাখির রাজ্য বগুড়ার বিহারহাট

সবুর শাহ লোটাস, বগুড়া
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩: ৩৩
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩: ৩৬

বগুড়ার শিবগঞ্জের বিহারহাট গ্রামের চারপাশে রয়েছে বড় বড় বাঁশবাগান। এ গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে করতোয়া নদী। পাশের গ্রাম দড়িপাড়া থেকে মমিনপুর পর্যন্ত চার কিলোমিটার আর হাপুনিয়া গ্রামে রয়েছে প্রায় তিন কিলোমিটার খাল।

বিজ্ঞাপন

পার্শ্ববর্তী গ্রাম রামনগরে রয়েছে কয়েকটি ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুর। এসব এলাকায় রয়েছে বড় বড় বট, পাকুড় এবং নানা ধরনের নাম না জানা গাছ। অর্থাৎ, সবুজের স্বর্গরাজ্য বলা যায় এ অঞ্চলকে। সেখানেই রাজ্যের গোড়াপত্তন করেছে পরিযায়ী শামুকখোল পাখির দল।

বিহারহাটের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১১ সালে এই এলাকায় পাখিগুলোর আনাগোনা শুরু হয়। পরের বছর কিছু পাখি বাসা বাঁধে বটগাছের মগডালে। শুরুতে পাখির চেঁচামেচি আর বিষ্ঠার কারণে বিরক্ত হলেও ধীরে ধীরে তাদের প্রেমে পড়ে যান স্থানীয়রা। এরপর থেকেই এই গ্রামে হাজার হাজার শামুকখোল পাখির বাস। ২০১৬ সালের ২৮ অক্টোবর স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে টিম ফর এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট রিসার্চের উদ্যোগে এই গ্রামকে ‘শামুকখোল পাখির রাজ্য’ ঘোষণা করা হয়েছিল।

জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জেলা সদর, শেরপুর, কাহালু, ধুনট, সারিয়াকান্দি উপজেলায়ও আবাস গড়েছে এই পরিযায়ী পাখি। এসব পাখির খাদ্যতালিকায় রয়েছে মাছ, শামুক, কাঁকড়া, ছোট জলজ প্রাণী ও ব্যাঙ।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে আরো জানা যায়, এখন বিহারহাট গ্রামের প্রায় প্রত্যেক গাছেই রয়েছে পাখিগুলোর অস্তিত্ব। তাদের কিচিরমিচির ডাক আকৃষ্ট করছে পর্যটকদেরও। ফলে এই পাখির রাজ্য দেখতে ওই গ্রামে ছুটে আসছেন দূরদূরান্তের মানুষ।

বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ এদের চারণভূমি। আইইউসিএনের তথ্যমতে, প্রজাতিটি ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত। বিগত কয়েক দশকে এদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে; তবে এখনো আশঙ্কাজনক হারে কমেনি। সম্ভাবনার কথা হলো, উপযুক্ত আবহাওয়া, পরিমিত খাবারের জোগান আর নিরাপত্তার জন্য শামুকখোল পাখি বগুড়ার শিবগঞ্জ বিহারহাটে স্থায়ী হয়ে গেছে।

দেশে রাজশাহীর দুর্গাপুর, নাটোরের পচামারিয়া ও পুটিয়া, ফেনী, নওগাঁর সান্তাহার এবং নিয়ামতপুর, রামনগর, গন্ধর্বপুর, মহাদেবপুর, টাঙ্গাইলের পাহাড়কাঞ্চনপুরের নলুয়া, জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট অঞ্চলের হাওর এলাকা প্রভৃতি অঞ্চলে এখনো এশীয় শামুকখোল ছোট ছোট দলে বাস করে। জোড়ায় জোড়ায় থাকে বলে এদের মানিকজোড় বলা হয়ে থাকে। বিহারহাট গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, গ্রামবাসী অতি যত্নে আগলে রেখেছেন পাখিগুলো। কেউ যেন এই পাখি শিকার করতে না পারে, সেজন্য তারা থাকেন সদা সতর্ক। এভাবেই তারা পাখির এই রাজ্য করেছেন নিরাপদ।

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম ঠাণ্ডু, ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম, তৌফিক হাসান হিমু জানান, স্থানীয় উদ্যোগে পাখিদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। এতে প্রশাসনের কোনো সাহায্য পাওয়া যায় না। প্রশাসন যদি এগিয়ে আসে, তাহলে পাখির জন্য আরো বেশি খাবারের ব্যবস্থা করা যাবে।

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জানান, পাখির আবাস নিরাপদ করতে গ্রামবাসীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি যদি কেউ পাখির ক্ষতি করতে চায়, তাহলে প্রশাসনকে জানানোর জন্য বলা হয়েছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত