সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় পানি নিষ্কাশনের অন্যতম মাধ্যম কেশরখালী খাল দখল ও দূষণের কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। ফুলজোড় ও করতোয়া নদীর সঙ্গে সংযোগকারী চান্দাইকোনা এলাকার এ খালটি এখন কার্যত অচল, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে পরিবেশ, জনজীবনের ওপর।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একসময় খরস্রোতা ও নৌ চলাচলযোগ্য কেশরখালী খাল দিয়ে সারা বছর নৌকা চলত। আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা নেপৗথে চান্দাইকোনা হাটে এসে পণ্য আনা-নেওয়া করতেন। তবে প্রায় তিনদশক আগে খালটির দুই পাড়ে অবৈধ দখল শুরু হয়, যা সময়ের সঙ্গে ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ফলে খালের বিভিন্ন স্থানে স্থায়ী স্থাপনা গড়ে উঠেছে।
এতে খালের স্বাভাবিক প্রশস্ততা মারাত্মকভাবে কমে গিয়ে অনেক অংশে এটি নালার মতো সরু হয়ে গেছে। পাশাপাশি চান্দাইকোনা হাট ও আশপাশের বাসা-বাড়ির ময়লা-আবর্জনা নির্বিচারে খালে ফেলা হচ্ছে। এতে পানিপ্রবাহ প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে এবং খালটি পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে।
চান্দাইকোনা বাজারসহ আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ এ কেশরখালী খাল। কিন্তু দখল ও দূষণের কারণে নিষ্কাশনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই চান্দাইকোনা বাজারের প্রধান সড়ক, চান্দাইকোনা বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠসহ আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
স্থানীয় ফয়সাল বিশ্বাস বলেন, কেশরখালী খাল এ এলাকার প্রাকৃতিক পানি নিষ্কাশনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দখল ও দূষণের কারণে এর স্বাভাবিক প্রবাহ নষ্ট হয়ে গেছে, যা পরিবেশ ও জনজীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি দীপক কুমার কর বলেন, খাল ও জলাশয় রক্ষা করা না গেলে জলাবদ্ধতা ও পরিবেশ বিপর্যয় আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বর্তমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে অচিরেই কেশরখালী খাল পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে। তারা জানান, খালটি দখলমুক্ত ও পুনঃখনন করা না হলে ভবিষ্যতে জলাবদ্ধতা আরো ভয়াবহ রূপ নেবে। তাই দ্রুত প্রশাসনিক উদ্যোগ নিয়ে খালটি উদ্ধার ও সচল করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে চান্দাইকোনা ইউনিয়নের উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ বলেন, কেশরখালী খালটি সরকারি খাস সম্পত্তি। এস এ রেকর্ডে এটি সর্বসাধারণের ব্যবহারযোগ্য জলাধার হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। রায়গঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদ রানার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিরাজগঞ্জ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, প্রথম ধাপে বেশ কয়েকটি খাল সংস্কার করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে প্রকল্প অনুমোদন হলে কেশরখালী খালটি সংস্কারের আওতায় আনা হবে।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

