টেন্ডারের চেয়ে বেশি গাছ কাটার অভিযোগ দুই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া
প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৫: ১০

বগুড়ায় বনবিভাগের অনুমতি ছাড়াই সরকারি রাস্তার পাশের ১৩৬টি ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছ বিক্রি করে দিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। এদিকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর গাছ কাটার অনুমতি থাকলেও বনজ ও ঔষধি গাছসহ অনুমতির চেয়ে অনেক বেশি গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।

গত সোমবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া ইউনিয়নের ন্যাংড়ার বাজার থেকে দরগাহাট রাস্তার দুই পাশের ওই গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। গাছ কাটা শুরু হয় ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে। এর আগে ১ সেপ্টেম্বর এরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টেন্ডারের মাধ্যমে ঘোলাগাড়ি স্কুল থেকে এরুলিয়া ইউনিয়নের শেষ সীমানা পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশের ৪৩টি ইউক্যালিপটাস ও ৯৩টি আকাশমণি গাছ মাত্র চার লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়রা জানান, সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম শিপন ও কর্মী আরমান আকন্দের নেতৃত্বে ১৫ দিন আগে থেকে সরকারি রাস্তার দুই পাশের গাছ কাটা শুরু হয়। তারা এর কারণ হিসেবে জানায়, এলজিইডি সরকারি এ রাস্তা সম্প্রসারণ করবে। তাই ইউপি চেয়ারম্যান টেন্ডারের মাধ্যমে গাছগুলো বিক্রি করেছেন।

এদিকে ১৩৬টি গাছ কিনে স্বেচ্ছাসেবক দলের ওই দুই নেতাকর্মী গত ১৫ দিনে দেড় শতাধিক গাছ কেটে ফেলেছেন। তারা ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছের সঙ্গে রাস্তার পাশে থাকা ঔষধি গাছ হরিকতি, আমলকী ও বনজ মেহগনি গাছও কেটে বিক্রি করেছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।

সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম শিপন এ ব্যাপারে বলেন, আমি এবং আরমান আকন্দ বৈধ প্রক্রিয়ায় ঘোলাগাড়ি গ্রামের রাস্তার গাছগুলো কিনেছি। টেন্ডারে ১৩৬টি গাছ কেনা হয়েছে। তবে কাটার সময় শ্রমিকরা বুঝতে না পেরে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছের সঙ্গে কিছু গাছ ভুল করে কেটে ফেলেছে।

এদিকে বিষয়টি জানতে পেরে বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গত শনিবার রাস্তার পাশের গাছ কাটা বন্ধ করে দেন।

এরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান আতিক বলেন, উপজেলা পরিষদের সভায় পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর গাছ হিসেবে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছ কেটে অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অবগত আছেন। সারা দেশেই এ দুই প্রজাতির গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। সে কারণে বগুড়াতেও টেন্ডারের মাধ্যমে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছ বিক্রি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বগুড়ার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মতলুবুর রহমান জানান, ক্ষতিকর বিভিন্ন কারণ থাকায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে গত ১৫ মে প্রজ্ঞাপন জারি করে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছ নিষিদ্ধ করা হয়। প্রজ্ঞাপন জারির পর কৃষি বিভাগ ও বন বিভাগের মাধ্যমে নার্সারিগুলোতে এ গাছের চারা ধ্বংস করার কার্যক্রম শুরু করা হয়। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ইউক্যালিপটাস গাছ অপসারণের জন্য উদ্যোগের অংশ হিসেবে বন ও বৃক্ষ সংরক্ষণ অধ্যাদেশ-২০২৫-এর খসড়া তৈরি করা হয়েছে, যা এখনো কার্যকর হয়নি। এ কারণে সরকারি রাস্তার পাশের ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছ কাটতে বন বিভাগের অনুমতি প্রয়োজন।

এদিকে বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল ওয়াজেদ বলেন, ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছের সঙ্গে ঔষধি ও বনজ গাছ কাটার অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সহকারী কমিশনার (ভূমি) পলাশ চন্দ্র সরকারকে সেখানে পাঠিয়ে গাছ কাটা বন্ধ করে দিয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত