দহগ্রামের দুঃখ তিনবিঘা করিডোর

হাসান উল আজিজ, লালমনিরহাট
প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৫, ১৩: ২১
আপডেট : ২৬ জুন ২০২৫, ১৪: ১৩

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় অবস্থিত দেশের বহুল আলোচিত বিলুপ্ত ছিটমহল দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা মুক্ত দিবস আজ। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও দহগ্রাম-আঙ্গরপোতাবাসী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মিলাদ মাহফিল, র‌্যালি ও আলোচনা সভাসহ নানা আয়োজন।

বিজ্ঞাপন

এদিকে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতাবাসীদের যাতায়াতের একমাত্র পথ তিন বিঘা করিডোরের গেট ২৪ ঘণ্টা খুলে দেওয়া হলেও এখনো ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সদস্যরা বাংলাদেশিদের ওপর নানাভাবে হয়রানি এবং নির্যাতন অব্যাহত রেখেছেন। তিন বিঘা করিডোরের উপর দিয়ে পারাপারের সময় ছিটমহলবাসী প্রতিনিয়ত শিকার হচ্ছেন বিএসএফের নানামুখী নির্যাতনের। এ নিয়ে প্রতিনিয়ত ক্ষোভ বাড়ছে দহগ্রাম ছিটমহলবাসীদের মধ্যে।

জানা গেছে, ১৯৯২ সালের ২৬ জুন ভারত সরকার দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহলবাসীর যাতায়াতের জন্য শুধু মাত্র দিনের বেলা এক ঘণ্টা পরপর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত করিডোরের গেট খুলে রাখার সিন্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে করিডোরের গেট সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত টানা ১২ ঘণ্টা খুলে রাখার ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়।

এতে দহগ্রামবাসীর বন্দী জীবনের আংশিক অবসান হলেও রাতের বেলা তারা কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এরপর ২৪ ঘণ্টা করিডোরের গেট খুলে দেওয়ার জন্য দহগ্রাম-আঙ্গরপোতাবাসী মিছিল, মিটিং, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কমসূচির মাধ্যমে দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

তাদের ন্যায্য দাবির প্রেক্ষিতে ২০১১ সালে বাংলাদেশ- ভারতের মধ্যে আলোচনার ভিক্তিতে তিন-বিঘা করিডোরের গেট ২৪ ঘণ্টা খুলে দেওয়ার ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরপর ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে করিডোরের গেট ২৪ ঘণ্টার জন্য খুলে দেওয়া হয়। দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা বাসীর জন্য করিডোরের গেট ২৪ ঘণ্টা খুলে দেওয়া হলেও তাদের দুংখ কষ্ট এবং বঞ্চনার অবসান ঘটেনি আজও। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর যুক্ত হয়েছে তিনবিঘা করিডোর দিয়ে ভারী যানবাহন চলতে না দেওয়ার নতুন এক সমস্যা। কোনো কারণ ছাড়াই বিএসএফ করিডোর দিয়ে বাস-ট্রাকের মতো যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। এ কারণে একদিকে সমস্যায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা অন্যদিকে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না চাষিরা। অপরদিকে দহগ্রামের মানুষের জন্য নির্মিত ২০ শয্যার হাসপাতালটি এখন মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। ২০১১ সালে চালুর পরপরই বন্ধ হয়ে গেছে আন্তঃবিভাগ। বহির্বিভাগ চালু থাকলেও চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।

দহগ্রামবাসী মনছুর আলী বলেন, আমরা দহগ্রাম থেকে চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত । এ কারণে বাধ্য হয়ে পাটগ্রাম বা অন্য কোনো হাসপাতালে যেতে হয়। মনছুর আলীর মতো আরও অনেকের একই অভিযোগ করেন।

আঙ্গরপোতার মফিজ উদ্দিন বলেন, করিডোরের গেট দিয়ে ৬ চাকার পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় এখানকার ব্যবসায়ী-কৃষক উভয়েই সমস্যায় পড়েছেন। ভুট্টা, ধান, তামাকের মতো ফসল এখন ট্রাক্টর বা ভ্যানগাড়িতে করিডোরের বাইরে নিতে হয়। এতে খরচ বেড়ে যাওয়ায দহগ্রামের মানুষ বিপাকে পড়েছে।

দহগ্রাম সংগ্রাম কমিটির সভাপতি রেজানুর রহমান রেজা বলেন, দহগ্রামবাসী ‘বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেলেও ভারত সরকার তিন বিঘা করিডোরের চারিদিকে ১৫ ফুট উচ্চতায় কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে। ফলে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার মানুষ ক্রমশই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে।

তিনি আরো বলেন, ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি অনুযায়ী আমরা দক্ষিণ বেরুবাড়ি ভারতকে ছেড়ে দিয়েছিলাম। বিনিময়ে ভারত আমাদের তিনবিঘা করিডর নামে পরিচিত জায়গাটি ছেড়ে দেবে। কিন্তু সেটি না করে ভারত আমাদেরকে মাত্র ১০ ফিট প্রশস্ত এবং ১৭৮ ফিট লম্বা একটি রাস্তা দিয়েছে। ৫ আগস্টের পর থেকে সেটি দিয়েও বাস ও বড় ট্রাক চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। এতে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে। আমরা ১৯৭৪ সালের চুক্তি অনুযায়ী ৮৫ ফিট প্রশস্ত এবং ১৭৮ ফিট লম্বা জায়গাটি (তিন বিঘা করিডোর) ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানাই।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত