সাঘাটায় রোপা আমন ধানে ‘পাতামরা’ রোগ ও পোকার আক্রমণ: কৃষকের মাথায় হাত

মিজানুর রহমান রাঙ্গা, সাঘাটা (গাইবান্ধা)
প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ২০: ২৭

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় রোপা আমন ধানে ‘পাতামরা’ রোগ ও পোকার আক্রমণে কৃষকেরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। কীটনাশক ছিটিয়েও কোনো কাজ না হওয়ায় ক্ষেত নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। পরামর্শ প্রদানের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা গ্রামে না যাওয়ায় সঠিক পরামর্শ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকরা। বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীদের কথা মতো বাজার থেকে কীটনাশক কিনে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বলেও জানান তারা।

উপজেলার বোনারপাড়া, শাহারভিটা, হেলেঞ্চা, কালপানি, দুর্গাপুর, পশ্চিম বাটি, দলদলিয়া, উল্যাসোনাতলা, মথরপাড়া, বাউলিয়া, ঝাড়াবর্ষা-সহ বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, রোপা আমন ফসলে পাতামরা রোগ ও পোকার আক্রমণে ধানগাছ মরে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

পোকা আক্রান্ত জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করার সময় উল্যাসোনাতলা গ্রামের ফজলুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, “এই ২৫ শতাংশ জমিতে এক মাস আগে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। বাজার থেকে দোকানদারের কথামতো কীটনাশক এনে প্রয়োগ করে কোনো কাজ হয়নি। আজ আবারও কীটনাশক প্রয়োগ করছি।”

ফজলুর রহমান ছাড়াও ওই গ্রামের আনারুল ইসলামের ১০ শতাংশ, শহিদুল ইসলামের ২৩ শতাংশ ও আরও বিভিন্ন গ্রামের অর্ধশতাধিক কৃষক তাদের ধান ক্ষেতে পোকার আক্রমণ ও পাতামরা রোগের কথা জানিয়েছেন।

একইভাবে বোনারপাড়ার হেলেঞ্চা গ্রামের কৃষক আবু বকর সিদ্দিক জানান, “পোকা ও নানা রোগ-বালাইয়ে আমনের আবাদ নিয়ে খুব চিন্তায় আছি। অথচ কৃষি অফিসের কোনো লোক আমাদের এদিকে আসে না। পরামর্শের জন্য কখনোই তাদের পাওয়া যায় না।”

উপজেলার পশ্চিম বাটি গ্রামের কৃষক আজিজুর রহমান, ফারুকুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম জানান, ধান গাছে এক ধরনের পাতা পচারি রোগ ও পোকার আক্রমণে আমনের আবাদ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। যে কারণে এবার ফলন ব্যাপকভাবে বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।

ঘুড়িদহ ইউনিয়নের মথরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা স্বপন শেখ জানান, “রোপা আমনের জমিতে এত রোগ-বালাই ও পোকার আক্রমণে কৃষি বিভাগের কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা (ব্লক সুপারভাইজার) কৃষকদেরকে পরামর্শ প্রদান করা তো দূরের কথা, তারা গ্রামেই আসেন না। কৃষকরাও তাদেরকে চেনেন না।”

এ ব্যাপারে কথা হলে বোনারপাড়া ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ মোদক বলেন, “কৃষকরা আমাদের শরণাপন্ন হতে চান না। তারা আমাদের কাছে আসলে আমরা ঠিকই সেবা দিয়ে থাকি।”

সাঘাটা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ১৪ হাজার ৩২৭ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান রোপণ করা হয়েছে।

সাঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আসাদুজ্জামানের সাথে এসব বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, “উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সব সময়ই মাঠে থাকেন। তাদেরকে পাওয়া যায় না, এমন কথা বলা কৃষকদের স্বভাবে পরিণত হয়েছে। মাঝে মাঝে অধিক খরা আর বিগত সপ্তাহে ঘন বৃষ্টিপাতের ফলে কিছু এলাকায় পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কৃষকরা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ না নিয়ে নিজেদের ইচ্ছামতো দোকান থেকে কীটনাশক কিনে প্রয়োগ করছে। সঠিক কীটনাশক প্রয়োগ না করার কারণে ওইসব ক্ষেতের পোকা দমন হচ্ছে না।”

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত