আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

তেঁতুলিয়ায় শৈত্যপ্রবাহে বাড়ছে নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্ভোগ

হোসেন রায়হান, পঞ্চগড়
তেঁতুলিয়ায় শৈত্যপ্রবাহে বাড়ছে নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্ভোগ
শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ভোরের আকাশ কুয়াশায় ঢেকে থাকে গোলাম মোস্তফা। ছবি: আমার দেশ

দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহে নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। শীতবস্ত্র না পেয়ে এসব নিম্ন আয়ের মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে গরম কাপড়ের জন্য ফুটপাতের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। কিন্তু শীতবস্ত্রের দাম চড়া। আগের মতো কম দামে বিক্রি করতে পারছেন না দোকানিরা। এতে শীতের কাপড় কিনতে গিয়ে ক্রেতারা হিমশিম খাচ্ছেন।

জানা গেছে, এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তেঁতুলিয়ায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, পুরো ডিসেম্বর ও জানুয়ারিজুড়েই তীব্র শীতে এই সীমান্ত জনপদ বিপর্যস্ত থাকবে। এরই মধ্যে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।

বিজ্ঞাপন

সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত পাহাড়ি হিমেল হাওয়া বইছে। শীতের তীব্র প্রকোপে জনজীবনে দুর্ভোগ বাড়ছে। অভাবী ও ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। হাসপাতালগুলোয় জায়গা নেই। মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছে মানুষ।

টানা পাঁচ দিন ধরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে অবস্থান করার পর বৃহস্পতিবার থেকে তাপমাত্রা এক অঙ্কের ঘরে নেমে এসেছে। তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা আট থেকে ৯ ডিগ্রির ঘরে দাঁড়িয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৯ শতাংশ। এর মাধ্যমে এলাকায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে।

শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দুর্ভোগও বেড়েছে। হাড়কাঁপানো ঠান্ডা উপেক্ষা করে নিম্ন আয়ের মানুষদের মাঠেঘাটে বের হতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। রাস্তাঘাট, বাড়ির সামনে কিংবা চা-স্টলের পাশে খড়কুটো জ্বালিয়ে অনেকে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।

শীত নিবারণ করতে খড়কুটো জ্বালানোর আগুনে দগ্ধ হয়ে কমপক্ষে ১৭ জন মানুষ আহত হয়েছেন। বুধবার সন্ধ্যায় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ এলাকায় আগুন পোহাতে গিয়ে মধ্যবয়সি এক নারী আগুনে পুড়ে দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শীতে গবাদিপশু আক্রান্ত হচ্ছে। ঘন কুয়াশায় বোরো বীজতলা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। তারা পলিথিন ব্যবহার করছেন। বিভিন্ন এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে অবস্থানরত শিশু শিক্ষার্থীরা শীতে কষ্ট করছে।

এর আগে গত পাঁচ দিনে বুধবার সকালে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৭৭ শতাংশ। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘পাঁচ দিন ধরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে অবস্থান করার পর তা আরো কমেছে। এলাকাজুড়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। সামনে তাপমাত্রা আরো কমতে পারে।’

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক কাজী সায়েমুজ্জামান বলেন, ‘শীতের এই দুর্যোগে জেলা প্রশাসনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন নিয়মিতভাবেই সেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এ অর্থে ৮ হাজার ৬৪০টি কম্বল ক্রয় করে জেলার পাঁচটি উপজেলার ৪৩টি ইউনিয়নে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া আরো ৬৫ হাজার কম্বলের চাহিদা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। জেলার বিত্তবান মানুষের কাছেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন