রাজিবপুরে টিআর-কাবিটার অধিকাংশ প্রকল্পে হরিলুট

আতাউর রহমান, রাজিবপুর (কুড়িগ্রাম)
প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩: ৫৩

কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলার গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) এবং গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির উপজেলাওয়ারি ১ম, ২য় ও ৩য় পর্যায়ের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের অধিকাংশ প্রকল্পে হরিলুট হয়েছে। অনেক প্রকল্প শুধু কাগজ-কলমে ফাইল বন্দি। কতগুলোর ১ম কিস্তি, আবার কতগুলোর আংশিক কাজ হয়েছে। বাকিটা ভাগবাঁটোয়ারা হয়েছে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মাঝে।

বিজ্ঞাপন

১৯৫টি কাবিটা প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ তিন কোটি ৮২ লাখ ৩৩ হাজার ১২৩ টাকার বেশির ভাগই হরিলুট হয়েছে। অনেক প্রকল্পের হদিস নেই। একটি কাজেরও এস্টিমেট করা হয়নি।

অন্যদিকে কাবিখা ২৯টি প্রকল্পের অধীন বরাদ্দ ২১১ দশমিক ৩৭৬ টন চালের অধিকাংশ প্রকল্প কাগজ-কলমে ফাইলবন্দি রেখে আত্মসাৎ করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রকল্পের ছবি তুলে বিল করা হয়েছে। তদন্ত করলে থলের বিড়াল বের হয়ে আসবে।

আবার কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইউপি চেয়ারম্যানরা ভাগবাঁটোয়ারা করে আত্মসাৎ করেছেন বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। সরে জমিন ও তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে বিষয়গুলো জানা গেছে। জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ বিল তুলতে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ টাকা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে দিতে হয়েছে।

জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের কাবিটা প্রকল্পের কাচারীপাড়া লুৎফরের বাড়ি থেকে রেণু বেগমের বাড়ি পর্যন্ত মাটি ভরাটে তিন লাখ ৪১ হাজার টাকা, কলেজপাড়া মজিবরের বাড়ি থেকে আজিবরের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতে দুই লাখ টাকা, কাচারীপাড়া বিদ্যুৎ মাস্টারের বাড়ি থেকে ফারুকের বাড়ি রাস্তায় মাটি ভরাটে এক লাখ ২০ হাজার টাকা, কলেজপাড়া শরবতের বাড়ি থেকে হানিফ আলীর বাড়ি পর্যন্ত গাইড ওয়াল ও মাটি ভরাটে এক লাখ ৪১ হাজার টাকাসহ ১০টি প্রকল্পের মধ্যে মাত্র তিনটির কাজ হয়েছে। বাকি সাতটির নাম শুধু কাগজ-কলমে। এগুলোর সব টাকা হরিলুট।

প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন। এ ব্যাপারে তিনি জানান, আমি একটি মাত্র কাজ করেছি। বাকি কাজ ছাত্ররা করেছে।

৪ নম্বর ওয়ার্ড বালিয়ামারী বাজারপাড়ায় দুটি প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। সেটি হবে ১ নম্বর ওয়ার্ড বালিয়ামারী বাজারপাড়া। এখানে পাশাপাশি তিনটি প্রকল্পের মধ্যে একটির কাজ করা হয়েছে। কিন্তু মাটি ভরাটের কাজ হয়নি এখনো। বালিয়ামারী বাজারপাড়া আজিবরের ছেলে মোনতার বাড়ি থেকে মতির বাড়ি পর্যন্ত গাইড ওয়াল ও মাটি ভরাটে পাঁচ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।

এছাড়া বালিয়ামারী খেয়াঘাটের পশ্চিম পাশে টিআর মাটি ভরাট বাবদ ১০ টন কাজের এক পাছিয়া মাটিও কাটা হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। খেয়াঘাটের যাত্রী ছাউনি ও গাইড ওয়াল বাবদ বরাদ্দ ছিল দুই লাখ ছয় হাজার ৭৯০ টাকা, সেখানে নামে মাত্র একটি ছাউনি তৈরি করা হয়েছে।

সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সরদার মোড় থেকে পশ্চিমে আলমের বাড়ি পর্যন্ত গাইড ওয়াল ও মাটি ভরাট ভুয়া প্রকল্প দেখানো হয়েছে। যার প্রকল্প ব্যয় ৮ দশমিক ৫১০ টন চাল ও ১ নম্বর ওয়ার্ডের বালিয়ামারী বাজার কসাইখানার পাশে গাইড ওয়াল ও মাটি ভরাটে পাঁচ টন কোনো কাজ হয়নি।

জাউনিয়ারচর গুচ্ছগ্রামের বাবর আলীর বাড়ি থেকে মিয়াপাড়া মসজিদ পর্যন্ত গাইড ওয়াল ও মাটি ভরাটে তিন লাখ ৪১ হাজার টাকার কাজ হয়নি।

রাজিবপুর পোস্ট অফিসের পাশে গাইড ওয়ালসহ মাটি ভরাটে দুই লাখ টাকার কোনো কাজই হয়নি। রাজিবপুর সদর ইউনিয়নের করাতীপাড়া ৯ নম্বর ওয়ার্ডে সাতটি প্রকল্পের মধ্যে চারটির কোনো কাজ হয়নি।

মমিনুল হকের বাড়ি থেকে হামিদ মণ্ডলের বাড়ি পর্যন্ত গাইড ওয়ালে তিন লাখ ১৬ হাজার ৫৬০ টাকা ও খোকনের বাড়ির সামনে গাইড ওয়াল নির্মাণে দেড় লাখ টাকাসহ কাবিখা প্রকল্পের ৮ দশমিক ৫১০ টনের কাজের কোনো চিহ্ন নেই।

মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দিয়ারা ফকিরপাড়া গ্রামের বাদশা পাগলার বাড়ি থেকে পূর্বদিকে রাস্তা নির্মাণে ছয় লাখ ২৪ হাজার ১০০ টাকার কোনো কাজ হয়নি। একই ওয়ার্ডের বাচ্চুর বাড়ির ব্রিজ থেকে মানিকের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণে বরাদ্দ দুই লাখ ৭৭ হাজার ৫৪০ টাকা কাজ না করে আত্মসাৎ করা হয়েছে।

কোদালকাটি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বড় নফেলের বাড়ি থেকে দক্ষিণে নফেলের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতে দুই লাখ ২২ হাজার ৩৫৬ টাকার কোনো কাজ হয়নি।

এছাড়া কোদালকাটি ইউয়িনের চর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পাখিউড়া বাজার থেকে খাজারঘাট ব্রিজ পর্যন্ত মেরামতে বরাদ্দ এক লাখ ৮৭ হাজার ৮৫০ টাকা, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ফুলমিয়ার বাড়ি থেকে জুবায়ের বাড়ি রাস্তা মেরামতে পাঁচ টন চাল এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ডের হাসানুলের বাড়ির পাশে গাইড ওয়াল নির্মাণ দুই লাখ ৫৭ হাজার টাকার কোনো কাজই হয়নি।

৩০ জুন ২০২৫-এর মধ্যে অর্থবছরের কাজসম্পন্ন করার কথা থাকলেও তা শেষ করতে পারেননি প্রকল্প চেয়ারম্যানরা। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সব জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকদের নিয়ে আলোচনা করে ২০ জুলাই পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দেয়।

নামমাত্র কিছু কাজ হলেও অধিকাংশ প্রকল্পের বিল প্রদান করছে পিআইও অফিস। সেপ্টেম্বর মাসেও ডেকে ডেকে প্রকল্পের বিল রহস্যজনকভাবে ছাড় করা হচ্ছে।

এদিকে গত অর্থবছরের কাজ শেষ না হলেও নতুন অর্থবছরের বরাদ্দ এসেছে। তবে প্রকল্পের বণ্টন এখনো করা হয়নি।

চর রাজিবপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আতাউর রহমান জানান, আমার জানামতে অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ হয়েছে। যেগুলো করা হয়নি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে এলাহী জানান, অভিযোগ পেয়ে সরেজমিন তদন্ত করেছি। যেখানে কাজ হয়নি, কাজ করার নির্দেশ দিয়েছি। এছাড়া তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। তদন্ত রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গভীর রাতে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ওএমএসের চাল বিক্রির অভিযোগ

শপথ নিলেন পিএসসির নতুন সদস্য আফতাব হোসেন

মোটরবাইক নিষেধাজ্ঞায় বিলিয়ন ডলারের বাজার হারানোর শঙ্কায় ভিয়েতনাম

বিএনপি নেতার চাপে জুলাই হত্যা মামলার দুই আসামিকে ছেড়ে দিলেন ওসি

সাবেক আইজিপি মামুন অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে বাঁচার চেষ্টা করছেন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত