পোরশায় লুট হয়ে যাচ্ছে সম্পদ

ডিএম রাশেদ, পোরশা (নওগাঁ)
প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২৫, ১৬: ৪৪
আপডেট : ১৫ জুন ২০২৫, ১৭: ০২

নওগাঁর পোরশায় এক যুগ ধরে সব প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ লুট হয়ে যাচ্ছে। নিতপুর ইউপির পশ্চিম রঘুনাথপুর গ্রামের টেকঠা নামক মাঠে ১৪-১৫ বছর আগে স্থানীয়রা একটি গর্ত থেকে কিছু মূল্যবান জিনিসপত্র পান। এরপর থেকে আবাদি জমি বা রোপণকৃত ধানের জমি বা বাগান খনন করেই চলছেন। এসব মূল্যবান জিনিসপত্র নওগাঁ, বগুড়া, নাটোর ও পাবনা এলাকার কিছু ব্যবসায়ীর কাছে তারা বিক্রি করেন। একসময় ফাঁকা মাঠ ছিল । এখন এই গুপ্তধনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে জনবসতি। এসব মূল্যবান জিনিসপত্র রক্ষায় আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ।

টেকঠা এলাকা পুনর্ভবা নদীর পূর্বপাড়ের প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে গুপ্তধন পাওয়ার প্রতিযোগিতা। কেউ নিজের জমিতে, আবার কেউ অন্যের জমি চুক্তিভিত্তিক কিনে নিয়ে খনন করছেন। প্রায় ১৫ বছর আগেও এখানে কোনো ঘরবাড়ি ছিল না। ফাঁকা মাঠ ছিল । এখন এই গুপ্তধনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে জনবসতি।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়রা জানান, ঘটনাস্থল থেকে সর্বপ্রথম পশ্চিম রঘুনাথপুর জেলেপাড়ার বৃদ্ধ আব্দুল কাদের বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র পাথর পান। তসবির মতো সেগুলো মুসল্লিরা ইবাদতে কাজে লাগান। কয়েক মাস পর এক লোক ৫০০ টাকার বিনিময়ে পাথরগুলো কিনে নিয়ে যান। এরপর বৃদ্ধ কাদেরের মনে সন্দেহ হয় এই বলে যে, সেটি নিশ্চয়ই মূল্যবান কোনো পাথর। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকার লোকজন শুরু করেন মাটি খনন।

স্থানীয় যুবক রবিউল ইসলাম জানান, তার বাড়ির পশ্চিম মাঠে পোরশা সদরের মৃত ওহাব শাহের জমি রয়েছে। তার কাছ থেকে তিন বছরের জন্য ২ লাখ টাকার বিনিময়ে ৩ বিঘা জমি কিনে নেন তিনি। উদ্দেশ্য জমির মাটি খুঁড়ে মূল্যবান সব জিনিসপত্র উদ্ধার করা। এর আগে তিনি পোরশা সদরের এক জমির মালিকের কাছ থেকে জমি কিনে নিয়ে অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র পেয়েছিলেন বলে জানান।

একই এলাকার ফইমুদ্দিনের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম জানান, তার বাড়ির দক্ষিণ পাশে তাদের নিজের ৫ কাঠা জমি খনন করে একটি চাকি পেয়েছেন। সেটি বিক্রি করেছেন ৫ হাজার টাকায়। ঠোল পেয়েছিলেন দুটি, যা বিক্রি করেছেন ৫০ হাজার টাকায়। আর জালি পোটল দুটি পেয়ে বিক্রি করেছেন এক লাখ টাকায়। কয়েকটি মার্বেল ও বোতাম পেয়ে সেগুলো বিক্রি করেছেন ২০ হাজার টাকায়। এসব মূল্যবান জিনিসপত্র নওগাঁ, বগুড়া, নাটোর ও পাবনা এলাকার কিছু ব্যবসায়ীর কাছে তারা বিক্রি করে থাকেন।

স্থানীয়দের ধারণা, এ এলাকায় একসময় হিন্দুদের বসবাস ছিল। এখান থেকে চলে যাওয়ার সময় তাদের মূল্যবান জিনিসপত্রগুলো তারা নিয়ে যেতে পারেননি। পরে তাদের ঘরবাড়ি ও মন্দিরগুলো ভেঙে মাটির নিচে চাপা পড়ে। আর সেই মূল্যবান জিনিসগুলোই এখন বের হচ্ছে।

এসব মূল্যবান সম্পদ সবগুলো লুট হয়ে যাচ্ছে। অথচ আজ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। তবে ২০২২ সালের ২৭ অক্টোবর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক একটি চিঠি দিয়েছিলেন পোরশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর। প্রত্নসম্পদ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেছিলেন তিনি। কিন্তু আজ পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

ওই চিঠিতে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক আরো উল্লেখ করেছিলেন, পোরশা উপজেলার এই টেকঠা নামক এলাকাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থান। এ প্রত্নস্থানকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে গেজেট প্রকাশের জন্য প্রাথমিক জরিপকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। খুব শিগগিরই এটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করা হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ আদনান জানান, তিনি বিষয়টি অবগত আছেন। এ ব্যাপারে তিনি দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত