ভিজিএফের তালিকায় ২ হাজার সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী

উপজেলা প্রতিনিধি, ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম)
প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২৫, ১৩: ১০

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নে ঈদুল আযহা উপলক্ষে ভিজিএফ চাল বিতরণের তালিকায় এসেছে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকসহ প্রায় ২ হাজার সচ্ছল ব্যক্তি।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার ৮ নং বলদিয়া ইউনিয়নে ঈদুল আযহা উপলক্ষে ৫ হাজার ৭৪৫জন হতদরিদ্র মানুষের জন্য ৫৭.৪৫ মেট্রিকটন চল বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতিজন হতদরিদ্র মানুষ পাবেন ১০ কেজি চাল। এসব হতদরিদ্র মানুষের তালিকা চেয়াম্যান মেম্বাররা প্রস্তুত করেন। পরে উপজেলা কমিটি যাচাই বাছাই করে তালিকা অনুমোদন দেন। তবে ৮ নং বলদিয়া ইউনিয়নের হতদরিদ্র মানুষের নাম বাদ দিয়ে প্রায় ২ হাজার স্বচ্ছল ও চাকরিজীবীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অভিযোগ উঠে গত ঈদুল ফিতরের আগে প্রস্তুত করা এই তালিকায় রাখা হয় প্রায় ২ হাজার সচ্ছল ও চাকরিজীবীদের নাম। আর এসব নামে বরাদ্দ দেয়া চাল বিক্রি করে দেন চেয়ারম্যান মেম্বার।

গত ঈদুল ফিতরে এই কান্ড প্রকাশ হলে এবার ঈদুল আজহার বরাদ্দকৃত চাল বিতরণে অভিযোগ তোলেন স্থানীয় সচেতন মহল। পরে তালিকায় অন্তর্ভূক্ত নামের সাথে স্লিপ প্রাপ্ত মানুষকে মিলিয়ে চাল বিতরণ করে প্রশাসন। এতে বেড়িয়ে আসে তালিকায় প্রায় ২ হাজার স্লিপপ্রাপ্ত বেনামি মানুষ। পরে অবিলিকৃত সাড়ে ১৮ মেট্রিক টন চাল নেয়ার মানুষ না পাওয়া গেলে সেগুলু ইউনিয়ন পরিষদ গুদামে সিলগালা করে রাখা হয়।

তালিকায় দেখা যায়, ১১৩৮ নম্বর নামের ঘরে রয়েছেন শ্রী স্বপন কুমার সরকার। তিনি বলদিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ২৯২১ নম্বরে রয়েছেন রফিকুল ইসলাম নামের একজন ব্যবসায়ী, ২৯৩৯ নম্বরে রয়েছে সেচ্ছাবেক দলের নেতা লুৎফর রহমানের নাম, ২৯৪৯ নম্বর তালিকায় রয়েছে সচ্ছল ব্যক্তি আইনুল হক, ২৫৭ নম্বরে রয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আশরাফুজ্জামানের নাম, ২৫৮ নম্বর তালিকায় রয়েছে আরমান আলী নামের আরেকজন প্রাধমিকের শিক্ষকের নাম। এভাবে প্রায় ২ হাজার সচ্ছল মানুষের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

শিক্ষক আরমান আলী ও আশরাফুজ্জামান জানান, তারা জানেন না কিভাবে তাদের নাম ভিজিএফের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তাদের নাম তালিকায় রেখে তাদের সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে বলে মনে করেন তারা।

ইউনিয়নটির সেচ্ছাসেবক দলের নেতা লুৎফর রহমান জানান, তার নাম ভিজিএফের তালিকায় দেখে তিনি হতভম্ব হয়েছেন। কারা তার নাম তালিকাভূক্ত করেছেন সেটা তার জানা নেই। এসব নাম দিয়ে চেয়ারম্যান মেম্বাররা চাল বিক্রি করে দেয়। তিনি তদন্ত করে বিচার দাবী করেন।

ইউনিয়ন চেয়াম্যান মোজাম্মেল হক জানান, এই তালিকা দিয়ে ঈদুল ফিতরে চাল বিতরণ করেছেন তিনি। এবারও এই তালিকা দিয়েই বিতরণ করা হয়েছে। তালিকায় ভুলক্রমে কিছু সচ্ছল ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। স্লিপ বিক্রির অভিযোগ সত্য নয়।

ইউনিয়নটিতে চাল বিতরণে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, বিতরণের শেষ দিনে ১৮৪০ জন তালিকাভুক্ত ব্যক্তি চাল নিতে আসেন নাই। এসব ব্যক্তির বিপরিতে প্রায় সাড়ে ১৮ মেট্রিক টন চাল গুদামে রেখে সিলগালা করে রাখা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম ফেরদৌস জানান, তালিকা ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় চাল বিতরণ বন্ধ রাখা হয়েছে, পরবর্তিতে তালিকা নির্ভুল করে বাকি চাল বিতরণ করা হবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত