ভাঙা রেলিং, সরু পথ, দোয়ারাবাজার-শরীফপুর সেতু যেন প্রতিদিনের আতঙ্ক

আশিস রহমান, (দোয়ারাবাজার) সুনামগঞ্জ
প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৫, ১৪: ০৫

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরের সাথে সুরমা ইউনিয়নের একমাত্র সংযোগ সেতুটি এখন স্থানীয়দের জন্য আতঙ্কের নাম। সেতুর রেলিং ভেঙে পড়েছে, পাটাতনের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে গর্ত, আর সরু পথের কারণে প্রতিদিনই থাকছে যানজট ও ঘটছে দুর্ঘটনা।

বিজ্ঞাপন

২০০৪ সালে টিলাগাঁও রাবার ড্যাম সেচ প্রকল্পের আওতায় ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল কৃষকদের কৃষি পণ্য পরিবহন ও যাতায়াতে সুবিধা নিশ্চিত করা। কিন্তু দীর্ঘ ২০ বছরেও সেতুটির কোনো সংস্কার হয়নি। বর্তমানে সেতুর একপাশে রয়েছে উপজেলা ভূমি অফিস, উপজেলা সদরের মাছ বাজার ও সিএনজি স্ট্যান্ড, অপর পাশে সুরমা, লক্ষ্মীপুর ও বোগলাবাজার ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ জনপদ। ফলে সেতুটি তিন ইউনিয়নের হাজারো মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুর দুপাশের রেলিং ভেঙে লোহার রড বিপদজনক অবস্থায় বের হয়ে আছে। পাটাতনের একাধিক স্থানে গর্ত সৃষ্টি হয়ে চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সরু সেতুতে একসাথে দুইটি যানবাহন চলাচল করতে না পারায় প্রতিনিয়ত দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে।

শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সাঈদা মাহমুদ বলেন, সেতুর যা অবস্থা! প্রতিদিন স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় আতঙ্কে থাকি, কখন কী হয় বলা যায় না।

দোয়ারাবাজার সরকারি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী আমান উল্লাহ আমান জানান, সেতুতে রেলিং না থাকায় চলাচল ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে সকাল ও সন্ধ্যায় ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।

টেংরাটিলা গ্রামের সিএনজি চালক স্বপন মিয়া বলেন, সরু ব্রিজে গাড়ি পাশ কাটাতে না পারায় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। জরুরি রোগী থাকলে সমস্যার শেষ থাকে না।

আলীপুর গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুল কবির শুভ বলেন, ভারী যানবাহন চলাচলের সময় সেতু কাঁপে। মনে হয়, যেকোনো মুহূর্তে ধসে পড়বে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিনেও সেতুটি সংস্কার বা নতুন করে নির্মাণের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। এলাকাবাসীর দাবি, এটি দ্রুত ভেঙে নতুন ও মানসম্পন্ন একটি প্রশস্ত সেতু নির্মাণ করা হোক।

সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ বলেন, ২০০৪ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে সেতুটি নির্মাণ হয়েছিল। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সংস্কার হয়নি। প্রতিদিন শতাধিক ট্রাকসহ ভারী যানবাহন চলাচল করে এই পথে। সময়ের দাবি হলো এখানে একটি নতুন, প্রশস্ত ও টেকসই সেতু।

এ বিষয়ে দোয়ারাবাজার উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ বলেন, নতুন একটি সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে বর্তমান সেতুর ভাঙা পাটাতন ও রেলিংসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়েও প্রস্তাবনা রয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্রুত কাজ শুরু হবে।

দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরূপ রতন সিংহ বলেন, দোয়ারাবাজার-শরীফপুর সেতুটি অপ্রশস্ত হওয়ায় এখানে দীর্ঘ জানজট লেগে থাকে। সেতুর ভাঙা রেলিং ও পাটাতন মেরামত করার জন্য আমি এলজিইডি অফিসে যোগাযোগ করব। সেতুর কাঠামো ঝুঁকিপূর্ণ কিনা তা ইঞ্জিনিয়ারের মাধ্যমে যাচাই করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

তিনি বলেন, এই সেতু নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ পেয়েছি। এ সেতু দিয়ে যাতে ভারী যানবাহন চলাচল না করতে পারে সেজন্য এলজিইডি অফিস কর্তৃপক্ষ একটি প্রতিবন্ধক স্থাপন করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তা আবার স্থানীয়রাই ভেঙে ফেলেছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত