চোরাই গরু বৈধ করার স্থান ‘সীমান্তবর্তী পশুর হাট’ ইজারাবঞ্চিত হয়ে দুজনকে কুপিয়ে জখম

আশিস রহমান, (দোয়ারাবাজার) সুনামগঞ্জ
প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৫: ৪৮
অতর্কিত হামলায় আহত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিলেট বিভাগের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সালেহ নাসিম ও একই সংগঠনের সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়সল জামান

ভারত থেকে চোরাইপথে অবৈধভাবে আনা গরু বৈধ করার নিরাপদ স্থানে পরিণত হয়েছে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্তবর্তী বোগলাবাজার পশুর হাট। এই পশুর হাট হতেই প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয় ভারত থেকে চোরাইপথে আনা শত শত গরু, মহিষ ও ছাগল। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এসব চোরাই পশুকে বৈধতা দেওয়া হয় এখান থেকেই।

বিজ্ঞাপন

এ কারণেই খুব চড়া দামেও এই হাটের ইজারা পেতে মরিয়া স্থানীয় আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতারা। পশুর হাট নয়, এ যেন রূপকথার গল্পের সোনার ডিম পারা রাজহাঁস। তবে গত ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর হাটের ইজারা প্রাপ্তির প্রতিযোগিতায় বিএনপি-আওয়ামী লীগের জায়গায় এবার নতুন করে আলোচনায় এসেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের নাম!

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ভারতীয় সীমান্ত থেকে বাংলাদেশের পাঁচ কিলোমিটার অভ্যন্তরে অবস্থিত সীমান্তবর্তী বোগলাবাজার পশুর হাট চলেই মূলত চোরাই পশু দিয়ে। সম্প্রতি এই হাটের ইজারাবঞ্চিতকে কেন্দ্র করে দুজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। তারা হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিলেট বিভাগের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সালেহ নাসিম ও একই সংগঠনের সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়সল জামান। এ ঘটনায় ৯ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

জানা যায়, চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি ২ কোটি ৪০ লাখ টাকায় সর্বোচ্চ দামে বোগলাবাজার পশুর হাট ইজারা পান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক ও বোগলা এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী ক্যাম্পের ঘাট গ্রামের মো. বাদল মিয়ার ছেলে ফয়সল জামান। পরে স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাছে কিছু শেয়ার বিক্রি করে দেন তিনি। এদের মধ্যে বিগত আওয়ামী লীগের আমলের চিহ্নিত সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিত রফিক খানও রয়েছেন। জানা যায়, বাজারটি ইজারা পাইয়ে তাকে সহযোগিতা করেন তার আত্মীয় সমন্বয়ক আবু সালেহ নাসিম। এদিকে, বাজারটি ইজারা নিতে চেয়েছিলেন স্থানীয় ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা। ফয়সল বাজারের ইজারা পাওয়ার পর ইজারাবঞ্চিত ছাত্রদলের ওইসব নেতারা নাসিম-ফয়সলের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

এ নিয়ে নাসিম-ফয়সলের সঙ্গে বিরোধে জড়ান তারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উভয় পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডাও হয়। এরই জেরে ঈদের আগের দিন রোববার (২৯ মার্চ) রাত নয়টার দিকে সংঘবদ্ধভাবে বোগলাবাজারের গলিতে নাসিম ও ফয়সালকে বেধড়ক মারপিট ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপানো হয়। পরে স্থানীয়দের বাধার মুখে পিছু হটেন হামলাকারীরা। আহত দুজনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। এ ঘটনায় ৯ জনকে আসামি করে গত মঙ্গলবার এপ্রিল দোয়ারাবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার আসামিরা হলেন উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য জহিরুল হক সানি, বোগলাবাজার ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি নাজমুল হোসেন, যুবদল নেতা হানিফ মিয়া, শহিদ মিয়া, জামাল মিয়া, বুলু মিয়া, মোফাজ্জল হোসেন, রাকিব মিয়া ও সাদ্দাম হোসেন সুজন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটি প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক ও বোগলাবাজার পশুর হাটের ইজারাদার ফয়সল জামান বলেন, হামলার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে পরে আলাপ করবেন বলে জানান।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিলেট বিভাগের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সালেহ নাসিম বলেন, ‘উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য জহিরুল হক সানি ও বোগলাবাজার ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি নাজমুল হোসেনের নেতৃত্বে ৮-১০ জন ছেলে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করেছে। তারা কেন বা কী কারণে আমাদের ওপর হামলা করেছে তা আমি জানি না। তাদের সঙ্গে আমার কোনো পূর্বশত্রুতাও নেই।’

হামলার সঙ্গে বোগলাবাজার পশুর হাট ইজারার কোনো সম্পর্ক আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাজার ইজারা হয়েছে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ওপেন টেন্ডারে। সেখানে অন্যদের সঙ্গে ফয়সাল মিয়ার নামে টেন্ডার ডাকা হয়েছে। ফয়সাল মিয়ার নাম ছিল টেন্ডারে কিন্তু তার সঙ্গে শেয়ার আছেন ৭০ জন ব্যক্তি। যাদের বেশিরভাগ বিএনপির নেতাকর্মী। প্রবাসীরাও আছেন। এমনকি আমাদের ওপর যারা হামলা করেছেন তাদের পরিবারের সদস্যরাও আছেন। আমার মনে হয় না এখানে বাজার ইজারার কোনো সম্পর্ক আছে। যারা হামলা করেছে তারা অপরাধী। আর অপরাধীদের অন্যকোনো পরিচয় থাকতে পারে না। আমরা আইনের দারস্থ হয়েছি। আমরা আশাবাদী পুলিশ অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করবে।’

তবে হামলার বিষয়ে কোনো কিছু বলতে রাজি হননি বোগলাবাজার ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি নাজমুল হোসেন। তিনি এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান।

দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহিদুল হক বলেন, ‘হামলার ঘটনায় থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। মামলাটির এখন তদন্ত চলছে। ইতোমধ্যে একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।’

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত