হাসিনার জন্মদিনের পোস্টার প্রচারণায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, টেরই পেল না পুলিশ

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১৩: ৪৪
আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১৩: ৪৭

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে শেখ হাসিনার জন্মদিন ঘিরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নামে হঠাৎ করে ব্যানার–পোস্টার ছড়িয়ে পড়েছে। রাতের আঁধারে এ পোস্টারিং করা হলেও প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রহস্যজনক নীরবতা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শহরের স্কুল ও কলেজ ফটক, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেয়াল, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, জেলা পরিষদ অডিটরিয়াম, বিভিন্ন বাজার, বিদ্যুতের খুঁটি, এমনকি বেশ কিছু ক্লিনিকের দেয়ালেও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ছবি ও শুভেচ্ছা বার্তাসংবলিত পোস্টার টানানো হয়েছে।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা ছাত্রলীগের নামে পোস্টারে লেখা আছে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার পুন:প্রতাবর্তন, বাংলাদেশের পুণর্জাগরণ, বাংলা ও বাঙালির নয়নমণি ২৮ সেপ্টেম্বর শুভ জন্মদিন।

চৌমুহনা বাজারের এক ব্যবসায়ী ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, গত ১ বছর ধরে এই সংগঠনের কোনো পোস্টার চোখে পড়েনি। হঠাৎ এক রাতে শহর ভরে গেল, অথচ প্রশাসন কিছুই জানল না—এটা কি বিশ্বাস করার মতো?

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাত ১টা থেকে ভোর পর্যন্ত দলবদ্ধভাবে কয়েকটি মোটরসাইকেল শহর ও মফস্বল এলাকায় ঘোরাফেরা করেছে। মুখ ঢেকে চলাচল করেছে যুবকদের একাধিক দল। কয়েকজনকে দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

একজন রিকশাচালক জানান, এরা স্থানীয় ছেলেই। কিন্তু কার নির্দেশে মাঠে নেমেছে, সেটা কেউ মুখ খুলছে না।

পোস্টার লাগানোর ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পর থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে গিয়ে তা তদন্ত শুরু করে। পুলিশের একটি অংশ বলছে, কারা লাগিয়েছে, তা শনাক্তের কাজ চলছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রাতভর পোস্টার লাগানো হলো অথচ পুলিশ টের পেল না, নাকি চুপ থেকে দেখেই গেছে? শহরে প্রকাশ্যে কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা এ ঘটনার আগেই ছোট ছোট বৈঠক করেছেন। জন্মদিনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের পুরনো কর্মীরা যোগাযোগ সক্রিয় করেছেন।প্রশাসনিক সহনশীলতা পরীক্ষা করাই মূল উদ্দেশ্য হতে পারে।

এক সাবেক ছাত্রনেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এটা টেস্ট রান। মাঠ গরম করা যাবে কি না, সেটা দেখা হচ্ছে।

ডিবির একটি সূত্র জানায়, অন্তত তিনটি দল ঘটনার উৎস শনাক্তে কাজ করছে। অর্থায়নের উৎস খোঁজা হচ্ছে। ঢাকার নির্দেশ আছে কি না সেটিও যাচাই চলছে।

সূত্রের দাবি, শুধু শ্রীমঙ্গল নয়, অন্য জেলাতেও একই ধরনের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সমন্বয়ের ছাপ থাকতে পারে।

স্কুল ও কলেজের দেয়ালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পোস্টার লাগানোকে ‘অসঙ্গত ও ভয়ংকর’ হিসেবে দেখছেন স্থানীয়রা। একজন অভিভাবক বলেন, স্কুলের দরজায় এই পোস্টার মানে প্রশাসন পুরোপুরি উদাসীন বা অসহায়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মুজাহিদুল ইসলাম ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের পুনর্বাসনে প্রশাসনের ভূমিকা কতদূর, সেটাই এখন প্রশ্ন। গুপ্তলীগের কার্যক্রম আড়ালেই চলছে।

স্থানীয় সাংবাদিক জামাল মিয়া তার স্ট্যাটাসে মন্তব্য করেন, রাতভর পোস্টার লাগানো হয় অথচ প্রশাসনের ঘুম ভাঙে না। এটা কি অদক্ষতা নাকি পরিকল্পিত প্রশ্রয়?

চায়ের দোকান, বাজার ও সামাজিক আড্ডায় এখন আলোচনার মূল বিষয়, নতুন করে দখল রাজনীতি কি শুরু হবে? নিষিদ্ধ ছাত্রসংগঠন সক্রিয় হলে ছাত্রজনতা কী করবে?

একজন স্থানীয় সাংবাদিক বলেন, শ্রীমঙ্গলের প্রশাসনের জন্য এটি লিটমাস টেস্ট। তারা ব্যবস্থা নেয় কি না, তার ওপরই ভবিষ্যৎ অস্থিরতা নির্ভর করছে।

মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে থানা পুলিশকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

গভীর রাতে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ওএমএসের চাল বিক্রির অভিযোগ

শপথ নিলেন পিএসসির নতুন সদস্য আফতাব হোসেন

মোটরবাইক নিষেধাজ্ঞায় বিলিয়ন ডলারের বাজার হারানোর শঙ্কায় ভিয়েতনাম

বিএনপি নেতার চাপে জুলাই হত্যা মামলার দুই আসামিকে ছেড়ে দিলেন ওসি

সাবেক আইজিপি মামুন অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে বাঁচার চেষ্টা করছেন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত