এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বন্দর ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন জরুরি হলেও গোপন চুক্তি করে বিনিয়োগ আনতে হবে— এটা মনে করেন না সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইআরএফ মিলনায়তনে ‘অর্থনৈতিক সাংবাদিকতা’ গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের বন্দর ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন করতে হবে—এটার কোনো বিকল্প নেই। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। দেশের অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ যথেষ্ট নয়, তাই কারিগরি ও বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন—এ ব্যাপারে কোনো আপত্তি নেই। ‘কিন্তু ১৩ দিনে বিদেশি বিনিয়োগ আনতে হবে—এটা মনে করি না। আবার সেই বিনিয়োগ নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট দিয়ে আনতে হবে—সেটাও মনে করি না,’ যোগ করেন তিনি।
সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, মিডিয়া সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন বা শ্বেতপত্র অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়ায় কোনো অগ্রগতি নেই। ‘কিন্তু দুই সপ্তাহে বন্দর সংস্কারের চুক্তি করে ফেললেন। এটা ইঙ্গিত করে সরকারের সামর্থ্যের ঘাটতি নেই। চাইলে সংস্কারগুলোও একইভাবে এগিয়ে নিতে পারত,’ বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করেছিলাম সরকার সংস্কার ইস্যুতে রিলেরেসের মতো দৌড়াবে। কিন্তু দেখছি, তারা দৌড়াতে দৌড়াতে লাঠিটা ফেলে দিয়েছেন—এখন লাঠি ছাড়াই দৌড়াচ্ছেন।
ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির প্রসঙ্গে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ব্যাংক খাতের গোপন খেলাপি ঋণ, প্রভিশন ঘাটতি, পুঁজি ঘাটতি—সব সংকট একে একে সামনে আসছে। ব্যাংকের শরীরে এত রোগ ছিল—তা আগে জানা যায়নি। এই বাস্তবতা দেশের নীতিনির্ধারণে স্বচ্ছতার ঘাটতি ও সংস্কারহীনতার প্রতিফলন বলে মন্তব্য করেন তিনি। তার মতে, একসঙ্গে প্রকাশ পাওয়া এসব দুর্বলতা দেশের সামগ্রিক আর্থিক স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।
তিনি আরও বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া হঠাৎ বিদেশি বিনিয়োগ ঘোষণা ও নীতিগত অস্পষ্টতা বিনিয়োগ পরিবেশকে আরও দুর্বল করছে। রাজনৈতিক অস্থিরতাও অর্থনৈতিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করছে। সংস্কার ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ আনা ‘স্বপ্নের মতো’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ব্যাংকিং খাতের সংকট সমাধানে সরকারের উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে ড. দেবপ্রিয় বলেন, পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করা, প্রশাসক নিয়োগ বা কিছু নিয়ম আগের অবস্থায় ফেরানো—এসবের বাইরে সুশাসন নিশ্চিত করতে কী করা হয়েছে?
বর্তমান বিনিয়োগ পরিবেশকে অত্যন্ত দুর্বল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যক্তিখাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি বহু বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। সুদের হারসহ নীতিগত দিকনির্দেশনাও এখনো স্পষ্ট নয়।

