তিন শীর্ষ কর্মকর্তার পদ শূন্য রেখেই চলছে ডিএসই

কাওসার আলম
প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২: ০৫

তিন শীর্ষ কর্মকর্তার পদ শূন্য রেখেই চলছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের কার্যক্রম। পদ তিনটি হলো- ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) এবং প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও)। এরমধ্যে ৯ মাস ধরেই এমডির পদ শূন্য রয়েছে। অপরদিকে এক বছরের বেশি সময় ধরে শূন্য রয়েছে সিওও পদ এবং সিটিওর পদটি শূন্য রয়েছে দুই বছরের বেশি সময় ধরে। তিনটি পদই চলছে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে। তিনটি পদ শূন্য থাকায় ডিএসইর কার্যক্রমে গতিহীনতা বিরাজ করছে।

এদিকে দীর্ঘদিন শুন্য থাকার পর ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ পদ তিনটিতে জনবল নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে শুন্য তিনটি পদে নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আগ্রহী প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আজ রোববার ডিএসইর নমিনেশন এন্ড রিমিউনারেশন কমিটির (এনআরসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই বৈঠকে প্রার্থীদের সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে চূড়ান্ত করে তা ডিএসইর বোর্ডে উপস্থাপনের জন্য সুপারিশ করা হতে পারে। ডিএসইর বোর্ডে অনুমোদিত হওয়ার পর বিএসইসির অনুমোদন সাপেক্ষে নিয়োগের বিষয়টি কার্যকর হবে।

জানতে চাইলে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, শুন্য পদে নিয়োগের জন্য আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি। আশা করি আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের মে মাসে ডিএসইর এমডি থেকে পদত্যাগ করেন এটিএম তারিকুজ্জামান। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি ডিএসইর এমডি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। ডিএসইর এমডি পদে যোগ দেওয়ার আগে তিনি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ছিলেন।

অবশ্য ডিএসইর এমডি পদ থেকে পদত্যাগ করে তিনি চার বছরের জন্য বিএসইসির কমিশনার হয়েছিলেন। কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে তারিকুজ্জমানের নিয়োগও বাতিল হয়ে যায়। তারিকুজ্জামান পদত্যাগ করার পর ৯ মাস ধরেই এমডি পদটি শূন্য রয়েছে ডিএসইতে।

অপরদিকে ২০২৩ সালের শেষ দিকে পদত্যাগ করেন প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) সাইফুর রহমান মজুমদার। পদত্যাগের পর তিনি দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) এমডি হিসেবে যোগ দেন। সাইফুর রহমান মজুমদার ডিএসইর এমডি হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলেও তার সে ইচ্ছা পূরণ না হওয়ায় সিএসইতে ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি এমডি হিসেবে যোগ দেন। সাইফুর রহমানের পদত্যাগের পর থেকে ডিএসইতে সিওও পদে এখনো কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

এছাড়া প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা মো. জিয়াউল করিমকে ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায় বিএসইসি। মূলত শেয়ার লেনদেনে কারিগরি ত্রুটির কারণ দেখিয়ে তাকে ছুটিতে পাঠানো হলেও ওই সময় ডিএসইর এমডি পদে থাকা তারিক আমিনের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন জিয়াউল করিম।

তারিক আমিনকে ডিএসইর এমডি পদে নিয়োগের নেপথ্যে ছিলেন ওই সময়কার বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম। গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে ধানমন্ডির বাসভবন থেকে শিবলী রুবাইয়াতকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। বর্তমানে তিনি দুদকের মামলায় কারাগারে আছেন। প্রায় আড়াই বছর ধরে ডিএসইর সিটিওর পদটি খালি রয়েছে।

হাতেগোনা দু-একজনকে বাদ দিলে ডিএসইর কোনো এমডিই তার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হলেও অধিকাংশ এমডিই দুই বছরও তাদের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসইর ঊর্ধ্বতন এক ব্যক্তি আমার দেশকে বলেন, এমডি পদে যোগ্য লোক পাওয়া খুবই কঠিন। তারপরও যিনি নিয়োগ পান তাকে নানামুখী চাপের মুখে পড়তে হয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার যেমন চাপ থাকে, তেমনি ডিএসইর বোর্ড থেকেও চাপের মধ্যে থাকতে হয়। চাপ সামলে কাজ করাটা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। ফলে কয়েক মাসের মধ্যেই তারা পদ ছাড়তে বাধ্য হন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত