শিশুদের পছন্দ দৃষ্টিনন্দন ও আরামদায়ক পোশাক

এমরানা আহমেদ
প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৫, ১৩: ০৭

ঈদ মানেই খুশি, ঈদ মানেই আনন্দ। সেই ঈদ আনন্দকে আরো বর্ণিল করে তোলে নতুন পোশাক। যে কোনো উৎসবে শিশুদের আনন্দটাই পরিবারের কাছে অগ্রাধিকার পায়। শিশুদের কাছে ঈদ মানেই নতুন জামা। তাইতো সবার আগে শিশুদের পোশাকটাই কিনতে হয়।

এবার ঈদবাজারে বিভিন্ন মার্কেট ও দেশি ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো এনেছে নান্দনিক ডিজাইন এবং আরামদায়ক ফেব্রিকের শিশু কালেকশন। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেলে ডিজাইন করা হয়েছে নানা ধরনের পোশাক। কারচুপি, জরির কাজ ও এমব্রয়ডারির অপূর্ব ছোঁয়ায় সাজানো হয়েছে পোশাকগুলো, যা শিশুর ঈদ আনন্দকে আরো রঙিন করে তুলবে। বেশ কিছু নামি-দামি বুটিকস হাউসের স্বত্বাধিকারীরা আমার দেশকে বলেন, ছোটদের জন্য ঈদ মানে আরো বিশেষ কিছু। তাদের পোশাকগুলো শুধু আরামদায়কই নয়, দেখতেও নজরকাড়া।

বিজ্ঞাপন

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, এবারও পোশাকের নকশায় দেশি সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। মেয়েশিশুর জন্য একই প্যাটার্নের সালোয়ার-কামিজ থেকে নায়রাকাট জামা, কাফতান, স্কার্ট-টপস, প্যান্ট টপ, ফ্রকসহ বিভিন্ন পোশাক রয়েছে। পোশাকের মোটিফে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। অনেকেই ঘন কাজ বাদ দিয়েছে। ফ্রিলের ব্যবহার চোখে পড়েছে। লেস, ঝুল, টার্সেল, স্ক্রিনপ্রিন্ট, সুতার কাজের নকশা, ফুলের মোটিফের দেখা মিলছে। মেয়েশিশুদের জন্য সুতির ঘাগড়া-চোলি এবং তৈরি করা শাড়িও আছে। নবজাতকদের জামার মধ্যে হালকা কাজের সুতার ফ্রক, হাতাকাটা ফতুয়া আর হাফপ্যান্ট দেখা গেছে বেশি।

সারার ডিজাইনার সামিহা ইসলাম আমার দেশকে জানান, তিন মাস থেকে ১৩ বছর বয়সি মেয়েদের জন্য রয়েছে তাদের ঈদ কালেকশন। পোশাকে রঙের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে নীল, সোনালি, গোলাপি, বেগুনি ও সবুজ রঙকে। পারসিয়ান শিল্প ও সংস্কৃতির অনুপ্রেরণায় ফ্রক, সালোয়ার-কামিজ ও স্কার্ট ডিজাইন করা হয়েছে, যেখানে রয়েছে কারচুপি, জরির কাজ ও এমব্রয়ডারির বিশেষ ছোঁয়া। সারায় শিশুর পোশাক পাওয়া যাবে ৩৫০ থেকে ৫ হাজার টাকায়। এ ডিজাইনারের মতে, শিশুর পোশাক তৈরিতে আরামদায়ক ফেব্রিক বেছে নেওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে কথা মাথায় রেখে সারার ঈদ কালেকশনে ব্যবহার করা হয়েছে কটন, জর্জেট, আর্টিফিশিয়াল সিল্ক, ক্রেপ সিল্ক ও টিস্যুর মতো উন্নতমানের কাপড়। ছোটদের পোশাকে মিষ্টি নকশা প্রাধান্য পেয়েছে। ফেব্রিকের ক্ষেত্রে কটন, জর্জেট, আর্টিফিশিয়াল সিল্ক, ক্রেপ সিল্ক, টিস্যু ব্যবহার করা হয়েছে।

পান্থপথের বসুন্ধরা শপিংমলের লেভেল-৭-এ দেশীদশের শোরুম ঘুরে দেখা গেছে, কটন, সেমিকটন ও লিলেনের মধ্যে শিশুদের দারুণ সব পোশাক এসেছে। দেশীদশের ভেতরে অবস্থিত দেশালের শোরুমে শিশুদের থ্রিপিস, টুপিস, লেহেঙ্গা বা স্কার্টগুলো খুবই চমৎকার। এতে করা আছে ব্লকের কাজ। টপসগুলোর কাটছাঁটে আছে ভিন্নতা। এক ছাঁটের ফ্রকের পাশাপাশি তারা একইভাবে রেখেছেন স্কার্ট। জিন্সের প্যান্ট এখন নানা কাটিংয়ে এসেছে।

এবার বেশ ব্যতিক্রম ডিজাইন লক্ষ করা গেল পার্টি ফ্রকগুলোতে। একইভাবে ছেলেশিশুদের জন্য আছে টি-শার্ট, পাঞ্জাবি। এমনকি বাবা-মা, ভাই-বোন একইরকম কম্বো সেট এখন প্রায় সব ফ্যাশন হাউসেই দেখা মিলবে। গ্রামীণ চেকের হাফ হাতা শার্টের ওপর প্রিন্ট, লেখা, কার্টুন আর ছবির ডিজাইন। সঙ্গে রয়েছে হাফ ও থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট। জিন্স ও গ্যাবার্ডিনের প্যান্টই বেশি পছন্দ শিশুদের। অবশ্য সব সময়ই টি-শার্ট অনেক আরামদায়ক।

বসুন্ধরা শপিংমল, যমুনা ফিউচার পার্কে আছে শিশুদের পোশাকের অনেক শোরুম। এছাড়া বেবিশপ, মিথ, সারা, টুয়েলভ, লা রিভ, এম্ব্রেলা, জেল্টাল পার্ক, আর্টিসানসহও নিউমার্কেট, গাউছিয়া, কৃষি মার্কেট, টোকিও স্কয়ার, রাপা প্লাজা, সানরাইজ প্লাজায় রয়েছে আদরের সোনামণির মনের মতো পোশাক। ছেলেদের পাঞ্জাবিতে সুতি কাপড় ছাড়াও ভিসকস, খাদি, সিল্কের কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে। ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ফুল, কলকা, জ্যামিতিক বিভিন্ন কাজ।

ঈদে ছেলেদের ক্ষেত্রে পাঞ্জাবি, কাবলি বেশি চলে। এ ছাড়া আছে টি-শার্ট, পোলো শার্ট, প্যান্ট-পায়জামার সম্ভার। এসব পোশাক তৈরি করা হয়েছে নানাধরনের মিহি সুতি কাপড়, নিট কটন দিয়ে। রিচম্যান এবার ছেলেশিশুর জন্য নিয়ে এসেছে ট্রেন্ডি ও আরামদায়ক ডিজাইনের পাঞ্জাবি কালেকশন। ফেব্রিকের ক্ষেত্রে বেছে নেওয়া হয়েছে কটন, লিনেন ইত্যাদি। এখানে ছেলেশিশুর পোশাক পাওয়া যাবে ১ হাজার ৯০ থেকে ২ হাজার টাকায়।

ফ্যাশন হাউস ‘শৈশব’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব চৌধুরী বলেন, এবার যেহেতু গরমের মধ্যেই ঈদ আসবে, তাই অধিকাংশ পোশাকেই সুতি কাপড়ের ব্যবহার দেখা যাবে। পোশাকের রঙ এবং উপকরণের ওপর শিশুদের আরাম নির্ভর করে। তবে সব পোশাকই শিশুরা পছন্দ করবেÑ এমন কিছু নকশা রাখার চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

দেশি আরেক ফ্যাশন হাউস লিটল অ্যাঞ্জেলসের অপারেশন ম্যানেজার ফারজানা ববি জানান, আরামদায়ক পোশাকের সঙ্গে ফ্যাশনের দিকটিও মাথায় রাখা হয়েছে। ফিউশন [H1] [H2] ধাঁচের পোশাক থাকছে ঈদে। সুতির মধ্যে ঢিলেঢালা গড়নের পোশাক, ফুলের নকশা, নানা রকম কার্টুন, কমিক চরিত্র, হালকা কাজ বেশি দেখা যাবে। দাওয়াতের পোশাকের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে নরম নেট, পাতলা সিল্ক, ক্রেপ সিল্ক, নরম জর্জেট, লিনেন ইত্যাদি।

নফিনিটি মেগা মলে শিশুর জন্য এসেছে নানা পণ্য। নিউবর্ন, টোডলারের পাশাপাশি মেয়েশিশুর জন্য থাকছে সিঙ্গেল কামিজ, ওয়েস্টার্ন টপস, সালোয়ার-কামিজ, ফ্রক, টি-শার্ট, লেহেঙ্গা ইত্যাদি। ফেব্রিকের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে সুতি, মিক্সড কটন, জর্জেট কাপড়। এখানে শিশুর পোশাক পাবেন ৫৫০ থেকে ৪ হাজার টাকায়।

ঈদে আড়ং শিশুদের জন্য এনেছে বিশেষ কালেকশন। নবজাতক থেকে শুরু করে ৯ বছর বয়সি শিশুর জন্য থাকছে বাহারি ডিজাইনের পোশাক। নবজাতক থেকে দেড় বছর বয়সি মেয়েশিশুর জন্য রয়েছে নিমা, ফ্রক, স্কার্ট-টপ, সালোয়ার-কামিজ, ঘাঘরা চোলি। নবজাতক থেকে দেড় বছর বয়সি ছেলেশিশুর জন্য পাওয়া যাবে পাঞ্জাবি-পায়জামা সেট, শার্ট-প্যান্ট, টি-শার্ট। ২ থেকে ৯ বছর বয়সি মেয়েশিশুর জন্য রয়েছে ফ্রক, শাড়ি, পার্টি ড্রেস। ২ থেকে ৭ বছর বয়সি ছেলেশিশুর জন্য পাবেন পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শার্ট-প্যান্ট। আড়ংয়ে শিশুর পোশাকের দাম ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

‘কে ক্র্যাফট’-এর কালেকশনে মেয়েশিশুর জন্য রয়েছে সালোয়ার-কামিজ, লেহেঙ্গা সেট ও পার্টি ফ্রক। ছেলেশিশুর জন্য ডিজাইনিং পাঞ্জাবি এবং বাবা-ছেলের ম্যাচিং ফতুয়া আছে। এসব পোশাকে ফেব্রিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে নিব কটন, জর্জেট ফেব্রিক এবং টাই-ডাই প্রিন্ট।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত