মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি

ডিএনএ পরীক্ষায় পাঁচ শিশুর পরিচয় শনাক্ত

মাহমুদা ডলি
প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০২৫, ০৬: ৩২

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত আরো পাঁচজনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ল্যাবে ডিএনএ পরীক্ষায় তাদের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। এছাড়া গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আরো দুই শিশুর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৩৪ জনে।

নতুন করে পরিচয় শনাক্ত হওয়া শিশুরা হলো-ওকিয়া ফেরদৌস নিধি, লামিয়া আক্তার সোনিয়া, আফসানা আক্তার প্রিয়া, রাইসা মনি ও মারিয়াম উম্মে আফিয়া। এছাড়া গতকাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া দুজন হলো-মাহতাব ও মারিয়া। এসব শিশুর লাশ সংগ্রহ করতে এবং চিকিৎসাধীন রোগীদের পাশে অবস্থান করা স্বজনদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা যেন কমছেই না। অনেকের অবস্থার অবনতি হওয়ায় বাড়ছে আহাজারি-আর্তনাদ।

বিজ্ঞাপন

বার্ন ইনস্টিটিউটজুড়ে শুধু কান্নার রোল। একদিকে সন্তান ও স্বজন হারানোর আর্তনাদ, অপরদিকে গজ-ব্যান্ডেজে ঢেকে থাকা পোড়া শরীরের যন্ত্রণায় ছটফট করছে শিশুরা। তাদের কান্নায় আশপাশের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। নিয়মিত বিরতি দিয়ে পোড়া শিশুদের মৃত্যুর সংবাদ সবাইকে বিচলিত করছে। কিন্তু কাউকে সান্ত্বনা দেওয়ার কেউ নেই, সবাই বাকরুদ্ধ ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

চিকিৎসকরা জানান, এ পর্যন্ত বার্ন ইনস্টিটিউটে দুই শিক্ষকসহ ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনো ভর্তি আছে ৪৫ জন। তাদের মধ্যে আট শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক।

পাচঁ মেয়েশিশুর ডিএনএ শনাক্ত

মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায় বেশ কয়েকজনের শরীর। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবশিষ্টাংশ দেখে পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেলেও কারো কারো বিষয়ে কোনো তথ্য উদ্ধার করা যাচ্ছিল না। তাদের মধ্যে পাঁচটি লাশের পরিচয় ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করেছে সিআইডি। এসব লাশের বিপরীতে অভিভাবক দাবি করেছিলেন ১১ জন। তাদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল।

গতকাল সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান বলেন, পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়া পাঁচজনের পরিচয় শনাক্ত করেছে সিআইডির ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাব।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানায়, ওকিয়ার ডিএনএ নমুনার সঙ্গে ফারুক হোসেন ও সালমা আক্তার দম্পতির নমুনার মিল পাওয়া গেছে। বাবুল ও মাজেদা দম্পতির নমুনার সঙ্গে লামিয়ার নমুনার সামঞ্জস্য রয়েছে। আব্বাস উদ্দিন ও মিনু আক্তার দম্পতির নমুনা মিলে গেছে আফসানার সঙ্গে। শাহাবুল শেখ ও মিম দম্পতির নমুনার সঙ্গে মিলে গেছে রাইসার ডিএনএ। এছাড়া আবদুল কাদির ও উম্মে তামিমা আক্তার দম্পতির নমুনার সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে মারিয়ামের নমুনার।

এর আগে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার শম্পা ইয়াসমিন বলেন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে থাকা পাঁচটি লাশ বা দেহাবশেষ থেকে ১১টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর বিপরীতে সিআইডিতে এসে এখন পর্যন্ত ১১ জন দাবিদার তাদের রক্তের নমুনা দিয়ে যান। তাদের মধ্যে এক পরিবারের একাধিক ব্যক্তিও রয়েছেন।

চারদিন কাতরানোর পর বিদায় নিল মাহিয়া ও মাহতাব

বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে চারদিন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিল মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মাহিয়া (১৫) এবং মাহতাব (১৪)। তাদের মধ্যে গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বার্ন ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মারা যায় মাহিয়া আর দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে মারা যায় মাহতাব।

বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার মারা যাওয়া মাহিয়ার শরীরের ৫০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। মাহতাবের শরীরের ৮৫ শতাংশ দগ্ধ ছিল। বুধবার রাতে অবস্থার আরো অবনতি হলে তাদের আইসিইউতে নেওয়া হয়। শত চেষ্টার পরও তাদের বাঁচানো গেল না। বিমান দুর্ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ৫০ জন বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়। তাদের মধ্যে ৪৫ জন শিক্ষার্থী। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ার তাদের মধ্যে আটজনকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।

বার্ন ইনস্টিটিউটে আহত মুমতাহা তোয়ার বাবা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমার মেয়ে মাইলস্টোন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ক্লাস শেষে যুদ্ধবিমান যেখানে বিধ্বস্ত হয় ঠিক সেখানেই দাঁড়িয়েছিল সে। শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গে সে দৌড় দেয়। তারপরও রক্ষা পায়নি। আমার একটাই মেয়ে। তাকে অনেক আদরে বড় করছি। আমরা তাকে জীবিত পাব সেই আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমার সবচেয়ে বড় খুশির ব্যাপার হলো মেয়ে বেঁচে আছে। তার হাত ও মুখ জ্বলে গেছে। এছাড়া তার ব্যাগে আগুন লাগার কারণে পিঠের কিছু অংশও পুড়ে গেছে। ডাক্তার বলেছেন, তার ১৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তবে আমাদের মনে হয় এই পরিমাণ আরো বেশি হতে পারে। সে ভয় পাওয়ায় মানসিকভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়েছে।’

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত