মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলা

সাইদুর রহমান রুমী

ছিলেন দেশে পুলিশের সর্বোচ্চ পদে। তার আমলেই সংঘটিত হয়েছিল দেশের ইতিহাসের চব্বিশের ভয়াবহ জুলাই-আগস্ট গণহত্যা। ছাত্র-জনতার এ আন্দোলন ঘিরে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, নির্বিচার গুলি কিংবা নৃশংসতার ইতিহাস ছিল মারাত্মক। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটতেই কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে তৎকালীন এই আইজিপির নাম।
তিনি আর কেউ নন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় আসামি হিসেবে থাকলেও দায় কাঁধে নিয়ে তিনি রাজসাক্ষী হয়ে যান। আদালতে দাঁড়িয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন নিজেরই একসময়ের নিয়োগকর্তা শেখ হাসিনা আর আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে। জাতির সামনে তুলে এনেছেন বহু অজানা তথ্য।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত অপরাধের দায় স্বীকার করে পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বলেছেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের নির্দেশে ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা চালানো হয়। এতবড় গণহত্যা আমার দায়িত্বকালীন সময়ে সংঘটিত হয়েছে। তার দোষ আমি স্বীকার করছি। তিনি গণহত্যার স্বীকার প্রত্যক পরিবার ও আহত ব্যক্তিবর্গ, দেশবাসী এবং ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। তিনি আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতি কিভাবে সংঘটিত হয়েছিল সে কথাও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন।
জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত হত্যাসহ ব্যাপক নৃশংসতার জন্য তিনি অপরাধবোধে এবং বিবেকের তাড়নায় নিজ থেকে অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বলে জানান। রাজসাক্ষী হিসেবে এ মামলার তিনি ৩৬তম সাক্ষীর জবানবন্দি দিলেন।
পুলিশের চেইন অব কমান্ড ছিল গোপালগঞ্জ কেন্দ্রীক
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট পর্যন্ত আইজিপি হিসেবে আমি দায়িত্ব পালন করি। আমি ২০২৩ সালের ১১ জানুযারি আমার অবসরে যাওয়ার কথা ছিলো। আমাকে প্রথমে দেড় বছর এবং পরে আরো এক বছর আইজিপি হিসেবে এক্সটেনশন দেওয়া হয়। আইজিপি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হওয়ার জন্য সিনিয়র অফিসারদের মধ্যে গোপালগঞ্জ কেন্দ্রিক। গ্রুপিং ছিলো। এই গ্রুপিং যাতে প্রকাশিত না হয় এবং পুলিশের সুনাম রক্ষার্থে আমাকে এক্সটেনশন দেওয়া হয়।
পুলিশ জড়িয়ে পড়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে
জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচনের পর পুনরায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে পুলিশ বাহিনীতে ব্যাপক রাজনৈতিক মেরুকরণ হয় এবং গোপালগঞ্জ কেন্দ্রিক বলয় তৈরি হয়। পুলিশ অফিসাররা বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে এবং সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর হয়ে পড়ে। এসব কারণে সিনিয়র অফিসারদের পক্ষে পুলিশকে কন্ট্রোল করার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে।
রাতের ভোটের কারিগর জাবেদ পাটোয়ারী
২০১৮ সালে নির্বাচনের সময় আমি ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি ছিলাম। তখন আইজিপি ছিলেন জনাব জাবেদ পাটোয়ারী। আমি জানতে পারি যে, তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্সে ৫০% ব্যালট ভর্তি করে রাখার পরামর্শ দেন। সরকারের পক্ষ থেকে সে মোতাবেক ডিসি, এসপি, ইউএনও, এসিল্যান্ড, ওসি এবং দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী উপর্যুক্ত অফিসার এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীগণ তা বাস্তবায়ন করেন। যেসব পুলিশ অফিসার এইসব নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করে তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিপিএম, পিপিএম পদক প্রদানের মাধ্যমে পুরস্কৃত করা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের বাসায় বসতো রাতের বৈঠক
২০১৮ সালের নির্বাচনের পর পুলিশে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও প্রভাব আরো বৃদ্ধি পায়। কিছু কিছু আওয়ামী লীগ পুলিশ অফিসার প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তাদের সাথে ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্তৃপক্ষ এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে সরাসরি যোগাযোগ ছিলো। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় প্রায়ই রাতের বেলায় বৈঠক করতো এবং তা গভীর রাত পর্যন্ত চলতো। যেসব পুলিশ অফিসার ঐসব বৈঠকে অংশগ্রহণ করতেন তাদের মধ্যে তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিবির এডিশনাল কমিশনার হারুনুর রশিদ, এসবির এডিশনাল আইজিপি মনিরুল ইসলাম, ঢাকার ডিআইজি নুরুল ইসলাম, এডিশনাল ডিআইজি বিপ্লব কুমার, এডিশনাল এসপি কাফি, ওসি মাজহার, ওসি ফরমান, ওসি অপুর্ব হাসানসহ আরো বেশকিছু অফিসার ছিলো। তাদের কারো কারো সাথে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সরাসরি যোগাযোগ ছিলো। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সাথে সরাসরি যোগাযোগ থাকার কারণে এইসব পুলিশ অফিসাররা চেইন অব কমান্ড মানতো না। কিন্তু আমি চাইতাম যে তারা পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করুক। প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে মূলত দুটি গ্রুপ ছিলো। একটি গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলো তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান এবং আরেকটি প্রপের নেতৃত্বে ছিলো তৎকালীন এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম। তারা চাইতেন তাদের নিজস্ব বলয়ের লোকজন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পোস্টিং পাক এবং ঢাকায় থাকুক।
র্যাব-১ এ ছিলো আয়নাঘর ছিলো (টিএফআই সেল)
১৪-০৪-২০২০ থেকে ৩০-০৯-২০২২ তারিখ পর্যন্ত আমি র্যাবের ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। র্যাবের মহাপরিচালন হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় আমি জানতে পারি যে, র্যাবের হেডকোয়ার্টার কর্তৃক পরিচালিত উত্তরাস্থ র্যাব-১ এর কমপাউন্ডের ভিতরে টিএফআই সেল (টাস্ক ফোর্স ইন্টারোগেশন সেল) নামে একটি বন্দিশালা ছিলো। অন্যান্য ব্যাব ইউনিটের অধীনে আরো অনেকগুলো বন্দিশালা ছিল। এসব বন্দিশালায় রাজনৈতিক ভিন্ন মতাবলম্বী এবং সরকারের জন্য হুমকি হয়ে উঠা ব্যক্তিবর্গকে আটক রাখা হতো, নির্যাতন করা হতো যা একটি কালচারে পরিণত হয়েছিল। অপহরণ, গোপন বন্দিশালায় আটক, নির্যাতন এবং ক্রস ফায়ারের মাধ্যমে হত্যার মতো কাজগুলো র্যাবের এডিজি (অপস/অপারেশন) এবং র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগ (র্যাব ইন্ট/ইন্টেলিজেন্স) এর পরিচালকগণ সমন্বয় করতেন।
সরাসরি হাসিনার নির্দেশে গুম করা হতো
র্যাব কর্তৃক কোন ব্যক্তিকে উঠিয়ে আনা, আটক রাখা কিংবা হত্যা করার নির্দেশনাগুলো সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আসতো বলে শুনেছি। এই নির্দেশনাগুলো তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ও সামরিক উপদেষ্টা তারিক সিদ্দীকির মাধ্যমে আসতো বলে জানতে পারি। এই নির্দেশনাগুলো চেইন অব কমান্ড ভঙ্গ করে সরাসরি এডিজি (অপস) এবং র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগ (র্যাব ইন্ট) এর পরিচালকদের কাছে পাঠানো হতো। আমি ব্যাবের ডিজি হিসেবে যোগদানের সময় আমার পূর্ববর্তী র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহম্মেদ আমাকে জানান যে, টিএফআই সেলে ব্যারিস্টার আরমান বন্দি আছে। আমি যোগদানের পরে ব্যাব ইন্টের ডাইরেক্টর লেফটেনেন্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেমও আমাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। র্যাবের এভিজি (অপস) এবং র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগ (র্যাব ইন্ট) সাধারণত সেনাবাহিনীর অফিসার থেকে নিয়োগ করা হতো। টিএফআই সেলে ব্যারিস্টার আরমানের বন্দি থাকার বিষয়টি তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রীর সামরিক ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক সিদ্দীকির নিকট একাধিক বার উপস্থাপন করি এবং এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানতে চাই। তিনি আমাকে পরে জানাবেন মর্মে অবহিত করেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি আর কোন সিদ্ধান্ত জানাননি। আমি র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিয়ে আসার সময় পরবর্তী মহাপরিচালক খুরশীদ হোসেনকে ব্যারিস্টার আরমানের বিষয় সম্পর্কে অবহিত করি। ব্যাবে অফিসারদের মধ্যে এডিশাল এসপি আলেপ উদ্দিন ও এসপি মহিউদ্দিন ফারুকী নামে দুজন অফিসারকে আমি চিনতাম যারা বন্দিদের অপহরণ, নির্যাতন এবং হত্যার মতো কাজে বিশেষ পারদর্শী ছিলো। আলেপ উদ্দিন প্রথমে নারায়ণগঞ্জে ছিল। পরবর্তীতে র্যাবের এডিজি (অপস) এর প্রস্তাবমতে তাকে র্যাব ইন্টেলে পদায়ন করা হয়। আমি র্যাব ডিজির দায়িত্বপালন করাকালীন সময়ে র্যাবের ডাইরেক্টর ইন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম, লে. কর্নেল খাইরুল ইসলাম এবং লে. কর্নেল মশিউর রহমান। এছাড়াও এডিজি (অপস) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন কর্নেল তোফায়েল, কর্নেল আজাদ এবং কর্নেল কামরুল। আমার দায়িত্বপালনকালীন সময়ে যদিও আমি র্যাব কর্তৃক মানুষকে বিনা বিচারে আটক, নির্যাতন এবং কাউকে কাউকে ক্রস ফায়ারে হত্যা করার মতো বিষয়গুলো জানতাম। কিন্তু আমি কোন তদন্ত করিনি বা এগুলোর ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করিনি। এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্তগুলো বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে আসতো এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে চেইন অব কমান্ড মানা হতো না।
ডিজিএফআই’র পরামর্শে সমন্বয়কদের উঠিয়ে আনা হয়
২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন শুরু হওয়ার পর ১৯ জুলাই হতে প্রায় প্রতি রাতেই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ধানমন্ডিস্থ সরকারি বাসায় কোর কমিটির মিটিং হতো। সেখানে আমাদেরকে আন্দোলন দমনসহ সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হতো। কোর কমিটিতে আমিসহ সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাঙ্গীর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক) টিপু সুলতান, অতিরিক্ত সচিব রেজা মোস্তফা, এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিবির প্রধান হারুনুর রশিদ, র্যাব ডিজি ব্যারিস্টার হারুনুর রশিদ, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিজি বিজিবি মেজর জেনারেল আশরাফুজ্জামান সিদ্দীকি, ডিজি আনসার মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক, এনটিএমসির প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, ডিজিএফআই প্রধান ও এনএসআই প্রধানগণ উপস্থিত থাকতেন। কোর কমিটির একটি বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের আটক করার সিদ্ধান্ত হয়। ডিজিএফআই এই প্রস্তাব দেয়। আমি বিরোধিতা করেছিলাম। কিন্তু স্বরাষ্টমন্ত্রীর নির্দেশে আমি রাজি হই। ডিবি প্রধান হারুনুর রশিদকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্বরাষ্টমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত মোতাবেক ডিজিএফআই এবং ডিবি তাদেরকে আটক করে ডিবি হেফাজতে নিয়ে আসে। তাদেরকে ডিবি হেফাজতে এনে আন্দোলনের বিষয়ে সরকারের সাথে আপস করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। তাদের আত্মীয়-স্বজনকেও ডিবিতে নিয়ে এসে উক্তরূপ চাপ প্রদান করা হয়। সমন্বয়কদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে টেলিভিশনে বিবৃতি প্রদানে বাধ্য করা হয়।
ডিবি হারুন কে ‘জ্বীন’ বলে ডাকা হতো
জুলাইয়ে সমন্বয়কদের উঠিয়ে আনাসহ নানা বিষয়ে ডিবি প্রধান হারুনুর রশিদ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ডিবি প্রধান হারুনকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী "জ্বীন" বলে ডাকতেন। কারণ সে সরকারের নির্দেশনা পালনে পারদর্শী ছিলো। আন্দোলনের এক পর্যায়ে হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের নজরদারি, তাদের অবস্থান নির্ণয় ও গুলি করে আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করা হয়।
হেলিকপ্টার ড্রোন ব্যবহারের পরামর্শ দেয় র্যাব ডিজি হারুন
হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে যার পরামর্শ দিয়েছিলেন তৎকালীন র্যাবের মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুনুর রশিদ। পরবর্তীতে আন্দোলন দমনে সরাসরি ল্যাথাল উইপন ব্যবহার করে এবং আন্দোলন প্রবন এলাকাগুলো ভাগ করে ব্লকরেইড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সরাসরি ল্যাথাল উইপন ব্যবহারের নিদেশ হাসিনার
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আমাকে ফোন করে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলন দমনে সরাসরি ল্যাথাল উইপন ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। তখন আমি পুলিশ হেডকোয়ার্টারে উপস্থিত। ছিলাম এবং আমার সামনে অতিরিক্ত ডিআইডি প্রলয় জোয়ার্দার উপস্থিত ছিলেন। আমি প্রলয় জোয়ার্দারকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানালে সে আমার রুম থেকে বের হয়ে ডিএমপি কমিশনারসহ সারা দেশে এই নির্দেশনা পৌঁছে দেয়। এই নির্দেশনা দেন ১৮-০৭-২০২৪খ্রিঃ তারিখ এবং ঐ দিন থেকেই ল্যাথাল উইপন ব্যবহার করা শুরু হয়। উক্ত নির্দেশনা অনুযায়ী ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান তার অধীনস্ত কর্মকর্তাদের ল্যাথাল উইপন ব্যবহারের নির্দেশনা দেন। ল্যাথাল উইপন ব্যবহারের বিষয়ে অতি উৎসাহী ছিলেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান এবং ডিবি প্রধান হারুনুর রশিদ। স্বরাষ্টমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিলো যেকোনো মূল্যে আন্দোলন দমন করতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জাহাঙ্গীর কবির নানক, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, মির্জা আযম, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন প্রধানমন্ত্রীকে মরণাস্ত্র ব্যবহারে প্ররোচিত করতেন।

ছিলেন দেশে পুলিশের সর্বোচ্চ পদে। তার আমলেই সংঘটিত হয়েছিল দেশের ইতিহাসের চব্বিশের ভয়াবহ জুলাই-আগস্ট গণহত্যা। ছাত্র-জনতার এ আন্দোলন ঘিরে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, নির্বিচার গুলি কিংবা নৃশংসতার ইতিহাস ছিল মারাত্মক। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটতেই কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে তৎকালীন এই আইজিপির নাম।
তিনি আর কেউ নন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় আসামি হিসেবে থাকলেও দায় কাঁধে নিয়ে তিনি রাজসাক্ষী হয়ে যান। আদালতে দাঁড়িয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন নিজেরই একসময়ের নিয়োগকর্তা শেখ হাসিনা আর আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে। জাতির সামনে তুলে এনেছেন বহু অজানা তথ্য।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত অপরাধের দায় স্বীকার করে পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বলেছেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের নির্দেশে ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা চালানো হয়। এতবড় গণহত্যা আমার দায়িত্বকালীন সময়ে সংঘটিত হয়েছে। তার দোষ আমি স্বীকার করছি। তিনি গণহত্যার স্বীকার প্রত্যক পরিবার ও আহত ব্যক্তিবর্গ, দেশবাসী এবং ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। তিনি আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতি কিভাবে সংঘটিত হয়েছিল সে কথাও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন।
জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত হত্যাসহ ব্যাপক নৃশংসতার জন্য তিনি অপরাধবোধে এবং বিবেকের তাড়নায় নিজ থেকে অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বলে জানান। রাজসাক্ষী হিসেবে এ মামলার তিনি ৩৬তম সাক্ষীর জবানবন্দি দিলেন।
পুলিশের চেইন অব কমান্ড ছিল গোপালগঞ্জ কেন্দ্রীক
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট পর্যন্ত আইজিপি হিসেবে আমি দায়িত্ব পালন করি। আমি ২০২৩ সালের ১১ জানুযারি আমার অবসরে যাওয়ার কথা ছিলো। আমাকে প্রথমে দেড় বছর এবং পরে আরো এক বছর আইজিপি হিসেবে এক্সটেনশন দেওয়া হয়। আইজিপি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হওয়ার জন্য সিনিয়র অফিসারদের মধ্যে গোপালগঞ্জ কেন্দ্রিক। গ্রুপিং ছিলো। এই গ্রুপিং যাতে প্রকাশিত না হয় এবং পুলিশের সুনাম রক্ষার্থে আমাকে এক্সটেনশন দেওয়া হয়।
পুলিশ জড়িয়ে পড়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে
জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচনের পর পুনরায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে পুলিশ বাহিনীতে ব্যাপক রাজনৈতিক মেরুকরণ হয় এবং গোপালগঞ্জ কেন্দ্রিক বলয় তৈরি হয়। পুলিশ অফিসাররা বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে এবং সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর হয়ে পড়ে। এসব কারণে সিনিয়র অফিসারদের পক্ষে পুলিশকে কন্ট্রোল করার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে।
রাতের ভোটের কারিগর জাবেদ পাটোয়ারী
২০১৮ সালে নির্বাচনের সময় আমি ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি ছিলাম। তখন আইজিপি ছিলেন জনাব জাবেদ পাটোয়ারী। আমি জানতে পারি যে, তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্সে ৫০% ব্যালট ভর্তি করে রাখার পরামর্শ দেন। সরকারের পক্ষ থেকে সে মোতাবেক ডিসি, এসপি, ইউএনও, এসিল্যান্ড, ওসি এবং দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী উপর্যুক্ত অফিসার এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীগণ তা বাস্তবায়ন করেন। যেসব পুলিশ অফিসার এইসব নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করে তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিপিএম, পিপিএম পদক প্রদানের মাধ্যমে পুরস্কৃত করা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের বাসায় বসতো রাতের বৈঠক
২০১৮ সালের নির্বাচনের পর পুলিশে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও প্রভাব আরো বৃদ্ধি পায়। কিছু কিছু আওয়ামী লীগ পুলিশ অফিসার প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তাদের সাথে ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্তৃপক্ষ এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে সরাসরি যোগাযোগ ছিলো। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় প্রায়ই রাতের বেলায় বৈঠক করতো এবং তা গভীর রাত পর্যন্ত চলতো। যেসব পুলিশ অফিসার ঐসব বৈঠকে অংশগ্রহণ করতেন তাদের মধ্যে তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিবির এডিশনাল কমিশনার হারুনুর রশিদ, এসবির এডিশনাল আইজিপি মনিরুল ইসলাম, ঢাকার ডিআইজি নুরুল ইসলাম, এডিশনাল ডিআইজি বিপ্লব কুমার, এডিশনাল এসপি কাফি, ওসি মাজহার, ওসি ফরমান, ওসি অপুর্ব হাসানসহ আরো বেশকিছু অফিসার ছিলো। তাদের কারো কারো সাথে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সরাসরি যোগাযোগ ছিলো। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সাথে সরাসরি যোগাযোগ থাকার কারণে এইসব পুলিশ অফিসাররা চেইন অব কমান্ড মানতো না। কিন্তু আমি চাইতাম যে তারা পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করুক। প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে মূলত দুটি গ্রুপ ছিলো। একটি গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলো তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান এবং আরেকটি প্রপের নেতৃত্বে ছিলো তৎকালীন এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম। তারা চাইতেন তাদের নিজস্ব বলয়ের লোকজন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পোস্টিং পাক এবং ঢাকায় থাকুক।
র্যাব-১ এ ছিলো আয়নাঘর ছিলো (টিএফআই সেল)
১৪-০৪-২০২০ থেকে ৩০-০৯-২০২২ তারিখ পর্যন্ত আমি র্যাবের ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। র্যাবের মহাপরিচালন হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় আমি জানতে পারি যে, র্যাবের হেডকোয়ার্টার কর্তৃক পরিচালিত উত্তরাস্থ র্যাব-১ এর কমপাউন্ডের ভিতরে টিএফআই সেল (টাস্ক ফোর্স ইন্টারোগেশন সেল) নামে একটি বন্দিশালা ছিলো। অন্যান্য ব্যাব ইউনিটের অধীনে আরো অনেকগুলো বন্দিশালা ছিল। এসব বন্দিশালায় রাজনৈতিক ভিন্ন মতাবলম্বী এবং সরকারের জন্য হুমকি হয়ে উঠা ব্যক্তিবর্গকে আটক রাখা হতো, নির্যাতন করা হতো যা একটি কালচারে পরিণত হয়েছিল। অপহরণ, গোপন বন্দিশালায় আটক, নির্যাতন এবং ক্রস ফায়ারের মাধ্যমে হত্যার মতো কাজগুলো র্যাবের এডিজি (অপস/অপারেশন) এবং র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগ (র্যাব ইন্ট/ইন্টেলিজেন্স) এর পরিচালকগণ সমন্বয় করতেন।
সরাসরি হাসিনার নির্দেশে গুম করা হতো
র্যাব কর্তৃক কোন ব্যক্তিকে উঠিয়ে আনা, আটক রাখা কিংবা হত্যা করার নির্দেশনাগুলো সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আসতো বলে শুনেছি। এই নির্দেশনাগুলো তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ও সামরিক উপদেষ্টা তারিক সিদ্দীকির মাধ্যমে আসতো বলে জানতে পারি। এই নির্দেশনাগুলো চেইন অব কমান্ড ভঙ্গ করে সরাসরি এডিজি (অপস) এবং র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগ (র্যাব ইন্ট) এর পরিচালকদের কাছে পাঠানো হতো। আমি ব্যাবের ডিজি হিসেবে যোগদানের সময় আমার পূর্ববর্তী র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহম্মেদ আমাকে জানান যে, টিএফআই সেলে ব্যারিস্টার আরমান বন্দি আছে। আমি যোগদানের পরে ব্যাব ইন্টের ডাইরেক্টর লেফটেনেন্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেমও আমাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। র্যাবের এভিজি (অপস) এবং র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগ (র্যাব ইন্ট) সাধারণত সেনাবাহিনীর অফিসার থেকে নিয়োগ করা হতো। টিএফআই সেলে ব্যারিস্টার আরমানের বন্দি থাকার বিষয়টি তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রীর সামরিক ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক সিদ্দীকির নিকট একাধিক বার উপস্থাপন করি এবং এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানতে চাই। তিনি আমাকে পরে জানাবেন মর্মে অবহিত করেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি আর কোন সিদ্ধান্ত জানাননি। আমি র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিয়ে আসার সময় পরবর্তী মহাপরিচালক খুরশীদ হোসেনকে ব্যারিস্টার আরমানের বিষয় সম্পর্কে অবহিত করি। ব্যাবে অফিসারদের মধ্যে এডিশাল এসপি আলেপ উদ্দিন ও এসপি মহিউদ্দিন ফারুকী নামে দুজন অফিসারকে আমি চিনতাম যারা বন্দিদের অপহরণ, নির্যাতন এবং হত্যার মতো কাজে বিশেষ পারদর্শী ছিলো। আলেপ উদ্দিন প্রথমে নারায়ণগঞ্জে ছিল। পরবর্তীতে র্যাবের এডিজি (অপস) এর প্রস্তাবমতে তাকে র্যাব ইন্টেলে পদায়ন করা হয়। আমি র্যাব ডিজির দায়িত্বপালন করাকালীন সময়ে র্যাবের ডাইরেক্টর ইন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম, লে. কর্নেল খাইরুল ইসলাম এবং লে. কর্নেল মশিউর রহমান। এছাড়াও এডিজি (অপস) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন কর্নেল তোফায়েল, কর্নেল আজাদ এবং কর্নেল কামরুল। আমার দায়িত্বপালনকালীন সময়ে যদিও আমি র্যাব কর্তৃক মানুষকে বিনা বিচারে আটক, নির্যাতন এবং কাউকে কাউকে ক্রস ফায়ারে হত্যা করার মতো বিষয়গুলো জানতাম। কিন্তু আমি কোন তদন্ত করিনি বা এগুলোর ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করিনি। এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্তগুলো বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে আসতো এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে চেইন অব কমান্ড মানা হতো না।
ডিজিএফআই’র পরামর্শে সমন্বয়কদের উঠিয়ে আনা হয়
২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন শুরু হওয়ার পর ১৯ জুলাই হতে প্রায় প্রতি রাতেই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ধানমন্ডিস্থ সরকারি বাসায় কোর কমিটির মিটিং হতো। সেখানে আমাদেরকে আন্দোলন দমনসহ সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হতো। কোর কমিটিতে আমিসহ সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাঙ্গীর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক) টিপু সুলতান, অতিরিক্ত সচিব রেজা মোস্তফা, এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিবির প্রধান হারুনুর রশিদ, র্যাব ডিজি ব্যারিস্টার হারুনুর রশিদ, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিজি বিজিবি মেজর জেনারেল আশরাফুজ্জামান সিদ্দীকি, ডিজি আনসার মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক, এনটিএমসির প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, ডিজিএফআই প্রধান ও এনএসআই প্রধানগণ উপস্থিত থাকতেন। কোর কমিটির একটি বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের আটক করার সিদ্ধান্ত হয়। ডিজিএফআই এই প্রস্তাব দেয়। আমি বিরোধিতা করেছিলাম। কিন্তু স্বরাষ্টমন্ত্রীর নির্দেশে আমি রাজি হই। ডিবি প্রধান হারুনুর রশিদকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্বরাষ্টমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত মোতাবেক ডিজিএফআই এবং ডিবি তাদেরকে আটক করে ডিবি হেফাজতে নিয়ে আসে। তাদেরকে ডিবি হেফাজতে এনে আন্দোলনের বিষয়ে সরকারের সাথে আপস করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। তাদের আত্মীয়-স্বজনকেও ডিবিতে নিয়ে এসে উক্তরূপ চাপ প্রদান করা হয়। সমন্বয়কদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে টেলিভিশনে বিবৃতি প্রদানে বাধ্য করা হয়।
ডিবি হারুন কে ‘জ্বীন’ বলে ডাকা হতো
জুলাইয়ে সমন্বয়কদের উঠিয়ে আনাসহ নানা বিষয়ে ডিবি প্রধান হারুনুর রশিদ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ডিবি প্রধান হারুনকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী "জ্বীন" বলে ডাকতেন। কারণ সে সরকারের নির্দেশনা পালনে পারদর্শী ছিলো। আন্দোলনের এক পর্যায়ে হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের নজরদারি, তাদের অবস্থান নির্ণয় ও গুলি করে আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করা হয়।
হেলিকপ্টার ড্রোন ব্যবহারের পরামর্শ দেয় র্যাব ডিজি হারুন
হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে যার পরামর্শ দিয়েছিলেন তৎকালীন র্যাবের মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুনুর রশিদ। পরবর্তীতে আন্দোলন দমনে সরাসরি ল্যাথাল উইপন ব্যবহার করে এবং আন্দোলন প্রবন এলাকাগুলো ভাগ করে ব্লকরেইড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সরাসরি ল্যাথাল উইপন ব্যবহারের নিদেশ হাসিনার
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আমাকে ফোন করে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলন দমনে সরাসরি ল্যাথাল উইপন ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। তখন আমি পুলিশ হেডকোয়ার্টারে উপস্থিত। ছিলাম এবং আমার সামনে অতিরিক্ত ডিআইডি প্রলয় জোয়ার্দার উপস্থিত ছিলেন। আমি প্রলয় জোয়ার্দারকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানালে সে আমার রুম থেকে বের হয়ে ডিএমপি কমিশনারসহ সারা দেশে এই নির্দেশনা পৌঁছে দেয়। এই নির্দেশনা দেন ১৮-০৭-২০২৪খ্রিঃ তারিখ এবং ঐ দিন থেকেই ল্যাথাল উইপন ব্যবহার করা শুরু হয়। উক্ত নির্দেশনা অনুযায়ী ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান তার অধীনস্ত কর্মকর্তাদের ল্যাথাল উইপন ব্যবহারের নির্দেশনা দেন। ল্যাথাল উইপন ব্যবহারের বিষয়ে অতি উৎসাহী ছিলেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান এবং ডিবি প্রধান হারুনুর রশিদ। স্বরাষ্টমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিলো যেকোনো মূল্যে আন্দোলন দমন করতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জাহাঙ্গীর কবির নানক, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, মির্জা আযম, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন প্রধানমন্ত্রীকে মরণাস্ত্র ব্যবহারে প্ররোচিত করতেন।

রাজধানীতে প্রকাশ্যে গুলি করে সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুন হত্যা মামলায় দুই শুটারসহ চার আসামির পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
৩২ মিনিট আগে
দুদক জানায়, চাঁদপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এক কোটি ৮২ লাখ ৫৫ হাজার ২৬১ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করে ভোগদখলে রেখেছেন। তার নামে থাকা ১৬টি ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজনকভাবে ২৫৫ কোটি ২৫ লাখ ১১ হাজার ৭৩১ টাকা জমা এবং ২৫৫ কোটি ১২ লাখ ২০ হাজার ২০৪ টাকা উত্তোলনের তথ্য মিলেছে।
২ ঘণ্টা আগে
মানবতাবিরোধী অপরাধে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় ঘোষণায় ট্রাইব্যুনাল বসবে সোমবার সকাল ১১টায়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রেজিস্টার কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
৩ ঘণ্টা আগে
গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জুলাই গণহত্যার মাস্টার মাইন্ড হিসেবে চিহ্নিত করেছেন প্রসিকিউশন টিম। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ অপর দুই আসামির বিরুদ্ধে নথিপত্র উপস্থাপন করে ৫টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেশ করেন আইনজীবীরা।
৪ ঘণ্টা আগে