ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বিচারে কোনো বাঁধা আছে কী?

বিবিসি বাংলা
প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০১: ০৮
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০২: ৪৯

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের শাসনে গুমের মাধ্যমে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের হওয়া দুটি মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৩০ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গতকাল বুধবার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তাদের মধ্যে ১৪ জন কর্মরত এবং ১০ জন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা রয়েছেন।

এ দুই মামলায় সেনা কর্মকর্তাদের বাহিরে অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজির আহমেদ। এছাড়া র‍্যাবের দুইজন সাবেক মহাপরিচালকও আছেন।

বিজ্ঞাপন

আগামী ২২শে অক্টোবরের মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আইনজীবীরা বলছেন, ফৌজদারি ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কোনো মামলায় সামরিক বাহিনীর এত বড়সংখ্যক কর্মরত ও সাবেক কর্মকর্তার অভিযুক্ত হওয়ার ঘটনা বিরল বলে তাদের ধারণা।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানান, ৩০ জন অভিযুক্তের মধ্যে ১৪ জন সেনা কর্মকর্তা কর্মরত আছেন। ১০ জন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা।

প্রশ্ন উঠেছে, সামরিক বাহিনীর কোনো সদস্য বা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যদি ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ ওঠে তাহলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত বা বিচারের ক্ষেত্রে কোন আইন প্রযোজ্য হবে?

এক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর নিজস্ব আইনে সামরিক আদালতে, নাকি প্রচলিত ফৌজদারি আইনে বিচার করা যাবে- এমন প্রশ্নও তৈরি হয়েছে।

এদিকে, গত ছয়ই অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে এক সংশোধনী এনেছে। ওই সংশোধনী অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হলে সেই ব্যক্তি সরকারি চাকরিজীবী হলে ওই পদে থাকতে পারবেন না বলে ট্রাইব্যুনালের একাধিক প্রসিকিউটর জানান।

সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের এই আইনগত বিষয়ে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের কাছে জানতে চাইলে এই মুহূর্তে এ বিষয়ে কোনো "মন্তব্য নেই" বলে জানানো হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ কয়েকজন আইনজীবী এবং সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশের বিচারিক ব্যবস্থায় এ ধরনের মামলার আরও উদাহরণ আছে।

তারা জানান, এর আগে ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলায় তৎকালীন তিনজন সেনা কর্মকর্তা, যারা র‍্যাবের অধীনস্ত ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। সে সময় তাদের সেনা বাহিনী থেকে অবসরে পাঠানো হয়েছিল। পরে সাবেক ওই তিন কর্মকর্তার বিচার প্রচলিত ফৌজদারি আইনেই হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, পেশাগত কাজের সময় সেনাবাহিনীর কোনো সদস্য কোনো অপরাধ করলে তার সামরিক আইনে বিচার হবে।

তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর কোনো সদস্য পেশাগত কাজ করতে গিয়ে যদি কোনো অপরাধ করেন, তাহলে সেটি সামরিক আইনে বিচার হবে। কিন্তু যদি সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধ করেন, তখন তার বিচার সাধারণ আদালতে হতে কোনো বাধা নেই। ইতঃপূর্বে এ ধরনের বিচারের একাধিক নজির রয়েছে।

আইনজীবীরা বলছেন, সেনা সদস্য বা কর্মকর্তাদের বিচার কোন আইনে করা যাবে সেটির সবচেয়ে বড় উদাহরণ নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলা।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীমের মতে, সংবিধান ও ট্রাইব্যুনাল আইন অনুযায়ী সেনা কর্মকর্তাদের বিচার ট্রাইব্যুনালে হতে বাধা নেই।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত