আন্তর্জাতিক র‍্যাঙ্কিংয়ে ‘অদৃশ্য’ বুটেক্স: ১৪ বছরেও নেই বিশ্ব তালিকায়

প্রতিনিধি, বুটেক্স
প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৭: ৪০

প্রতিষ্ঠার ১৪ বছরেও বিশ্ব তালিকায় আসেনি বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স)। পর্যাপ্ত গবেষণা, গবেষণাপত্রের সুনাম, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনুপাত, আন্তর্জাতিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী, পর্যাপ্ত পিএইচডিধারী শিক্ষকসহ আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের অনেক শর্তই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নেই। বিশ্বমানের র‍্যাঙ্কিংয়ে অংশগ্রহণের জন্য বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেউ কাজ করছে না বলে জানা যায়।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. নাজমুছ সাকিব বলেন, বুটেক্স মূলত একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় যার ক্ষেত্র শুধু বস্ত্রপ্রকৌশলে সীমাবদ্ধ এবং একাডেমিক বৈচিত্র্য কম যা অনেক সময় র‍্যাঙ্কিংয়ে প্রভাব ফেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার উপযোগী পরিবেশ না থাকা এবং আন্তর্জাতিক জার্নালে স্বীকৃতি কম থাকাটাও র‍্যাঙ্কিংয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের না আসার কারণ।

ডাইস অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আব্বাস উদদীন শায়ক বলেন, যদি আমাদের টার্গেট থাকে র‍্যাঙ্কিংয়ে আসতে হবে, তাহলে মানদণ্ডগুলো অনুসরণ করে দেখতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় কোন পর্যায়ে আছে, কোন জায়গায় পৌঁছাতে হবে আর পৌঁছানোর জন্য কি কি স্ট্র্যাটেজি ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ র‍্যাঙ্কিংয়ে পৌঁছানোর জন্য আমাদের প্রক্রিয়া ঠিক থাকতে হবে।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাঙ্কিংয়ে আসতে হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। এটি অর্জন করতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটওয়ার্ড অ্যাক্টিভিটিস বা বহিরাঙ্গন কার্যক্রমের দিকে মনোযোগ দেওয়া।

ডাইস অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে র‍্যাঙ্কিংয়ে পৌঁছানোর জন্য কোনো চেষ্টা করা হয়নি। র‍্যাঙ্কিংয়ে যাওয়ার জন্য ৬-৭টা মানদণ্ড থাকে। কিছু মানদণ্ড বাদে বাকিগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় কম-বেশি স্কোর পাবে আর যেসব মানদণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই সেসবের স্কোরও তুলনামূলক কম। তাই সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাঙ্কিংয়ে আসতে পারে।

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. মাসুম বলেন, বাস্তবতা হলো আমাদের বর্তমান অবস্থা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাঙ্কিংয়ে যাওয়া প্রায়ই অসম্ভব। র‍্যাঙ্কিংয়ে যেতে হলে আগে বিশ্ববিদ্যালয় হতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয় নাম হলেই শুধু বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া যায় না। র‍্যাঙ্কিংয়ে যেতে হলে আগে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠনে পরিবর্তন আনতে হবে। শুধু একটি ডিগ্রি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাঙ্কিংয়ে যেতে পারবে না এবং আরো কিছু ডিগ্রি চালু করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়কে মনো টেকনোলজি থেকে মাল্টি টেকনোলজিতে রূপান্তর করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জুলহাস উদ্দিন বলেন, উচ্চশিক্ষার পরিধি বৃদ্ধি ও মানসম্পন্ন গবেষণার পরিবেশ তৈরি করার জন্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো অবকাঠামো নেই। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত বেশি আছে যা মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য বাধা। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত গবেষণাপত্রের সংখ্যাও কম আছে। পূর্বে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী থাকলেও বর্তমানে নেই। এসব মানদণ্ডের ঘাটতি থাকার কারণেই র‍্যাঙ্কিংয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় আসতে পারছে না।

বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাঙ্কিংয়ে আসার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ডিনস মিটিংয়ে এটা নিয়ে আলোচনা করলেও কেউ দায়িত্ব নিতে চায়নি। আমি একাডেমিক কাউন্সিলে এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করবো এবং কাজ করার জন্য একটি কমিটি গঠন করে দিবো। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব দুর্বলতা আছে, সেগুলোকে সবাই মিলে মোকাবিলা করতে হবে। এছাড়া গত সিন্ডিকেট সভায় পূর্বাচলে ৫০ একরের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণের প্রস্তাব পাস হয়েছে। পাশাপাশি বর্তমান ক্যাম্পাসের জন্য দুই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন আছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে আবাসিক সুবিধা, শিক্ষার্থী সেবা ভবন, আধুনিক কেন্দ্রীয় পাঠাগার সহ শিক্ষার্থীদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধা তৈরি হবে। সামনে আমরা আরো কিছু শিক্ষক নিয়োগ দিবো। চলতি বছরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের থেকে পাঁচশত গবেষণাপত্র জমা পড়বে এটি আমাদের লক্ষ্য।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত