শেষ মুহূর্তের প্রচারে মুখর রাবি ক্যাম্পাস, উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা

ফাহমিদুর রহমান ফাহিম, রাবি
প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ২৭
রাকসু নির্বাচনের শেষ সময়ে সোমবার ক্যাম্পাসে প্রচারণায় ব্যস্ত ছাত্রশিবিরের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ। ছবি: আমার দেশ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) হল সংসদ, সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের বাকি মাত্র দুদিন। বৃহস্পতিবার ভোটের বাক্সে সাফল্য পেতে শেষ মুহূর্তের প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা। সাড়ে তিন দশক পর এমন উৎসবমুখর পরিবেশ পেয়ে উচ্ছ্বসিত সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। তাদের সমর্থন পেতে পুরো ক্যাম্পাস চষে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন পদের প্রার্থীরা।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচনি আচরণবিধি অনুযায়ী, প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার দিন থেকে ভোট গ্রহণের ২৪ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রচার চালানো যাবে। পুনর্বিন্যস্ত তফসিল অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর পর আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত চলবে প্রচার কার্যক্রম। সে হিসেবে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জমজমাট প্রচারণায় মুখর অ্যাকাডেমিক ভবন, আবাসিক হল, মেস ও আড্ডাস্থল। প্রার্থীরা দলবেঁধে শিক্ষার্থীদের কাছে ছুটছেন, করছেন কুশলবিনিময়; হাতে তুলে দিচ্ছেন লিফলেট ও হ্যান্ডবিল।

গতকাল সোমবার ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, প্রার্থীরা বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় ভিডিও প্রকাশ করে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে দেখা গেছে। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রার্থীরা লিফলেট ও হ্যান্ডবিল বিতরণ করে শিক্ষার্থীদের কাছে ভোট চাইছেন।

গতকাল ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের কেন্দ্রীয় নবীনবরণ থাকায় কাজী নজরুল ইসলাম অডিটোরিয়ামের আশপাশে প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের আকর্ষণীয় লিফলেট ও হ্যান্ডবিল নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে ভোট চাইতে দেখা গেছে।

এদিন ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী ফাহিম রেজাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের সামনে ও টুকিটাকি চত্বরে প্রচার চালাতে দেখা যায়। এছাড়া কৃষি অনুষদ, শহীদ মিনার, টিএসসি, চারুকলা অনুষদ, পরিবহন মার্কেট ও জাবির ইবনে হাইহান বিজ্ঞান ভবনের সামনে ভিপি পদপ্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ, ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের এজিএস প্রার্থী জাহিন বিশ্বাস এষা, বামজোট সমর্থিত ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’, ‘আধিপত্য বিরোধী ঐক্য প্যানেল’, ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’সহ অন্যান্য প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রচারণা চালাতে দেখা যায়।

প্রচার-প্রচারণা কেমন দেখছেন ও রাকসু নির্বাচন কেমন উপভোগ করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সামিয়া সিদ্দিকী রিমি বলেন, ‘অনেক বছর পর নির্বাচন হচ্ছে, বলতে গেলে আমরা সৌভাগ্যবান যে আমাদের সময় রাকসুর ভোট হচ্ছে। নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাসে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। বিশেষ করে প্রার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন স্টাইলে শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন। এটা খুবই ভালো লাগছে। আমি চাই, প্রতি বছরই যেন নির্বাচনটা হয়।

রবীন্দ্র ভবনের সামনে প্রচারণার সময় কথা হয় সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের জিএস প্রার্থী ফাহিম রেজার সঙ্গে। প্রচারণা কেমন চলছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রচারণা শুরুর প্রথম দিন থেকেই শিক্ষার্থীদের কাছে যাচ্ছি, তারা আমাদের কথাগুলো শুনছেন। তাদের সমস্যাগুলো বলছেন। যখন শিক্ষার্থীদের কাছে যাচ্ছি, তখন ছাত্রশিবিরের প্যানেল হিসেবে তারা আমাদের আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করছেন। আমার মনে হয়, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা যুক্ত হওয়ায় নির্বাচনি আমেজ আরো বেড়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী আমলে কেউ ভোট দিতে পারেনি। তাই অনেকে জীবনের প্রথম ভোট হিসেবে রাকসুতে ভোট দেবেন—এটি আমাদের জন্য আনন্দের বিষয়। আমাদের ক্যাম্পাসের সবচেয়ে বড় সমস্যা আবাসন। বর্তমানে মাত্র ৩৬ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসনের সুযোগ পাচ্ছে। আমরা মনে করি রাজনৈতিক কারণে এ সমস্যা রয়ে গেছে। তাই আমাদের প্রথম ম্যান্ডেট হবে পূর্ণাঙ্গ আবাসন নিশ্চিত করা এবং অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক ভাতার ব্যবস্থা করা।

গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদের ভিপি প্রার্থী ফুয়াদ রাতুল বলেন, ‘প্রচারণা শুরুর পর থেকেই আমরা এক অভাবনীয় উৎসবমুখর পরিবেশ দেখতে পাচ্ছি। শিক্ষার্থীরা লিফলেট সাদরে গ্রহণ করছেন। তারা আমাদের সংগ্রামকে লক্ষ্য করেছে, চিনছে এবং মূল্যায়ন করবে বলেও আশ্বস্ত করছে। আমরা স্বল্প লোকবল নিয়েই সব সময় শিক্ষার্থীদের হয়ে কথা বলেছি, তবে শিক্ষার্থীরা আমাদের প্রচেষ্টা উপলব্ধি করছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম অডিটোরিয়ামের সামনে প্রচারণা চালানোর সময় কথা হয় ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি পদপ্রার্থী শেখ নূর-উদ্দীন আবীরের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের প্যানেলের বৈচিত্র্যতা নিয়ে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক সাড়া দিচ্ছেন। বিশেষ করে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা আমাদের অনেক ভালোভাবে গ্রহণ করছেন। কারণ তাদের ভোটার তালিকায় যুক্ত করতে আমরা আন্দোলন করেছিলাম। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর। যাদের কাছে গিয়েছি তারাও ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।

রাকসু নির্বাচনে ২৩টি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৪৭ প্রার্থী। এর মধ্যে ভিপি পদে ১৮, জিএস পদে ১৩ এবং এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৬ জন। ছাত্রদল ও শিবির সমর্থিতসহ মোট ১১টি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ৫টি পদে ৫৮ প্রার্থী ও হল সংসদ নির্বাচনে ১৫টি পদে মোট ১৭টি হলে ৫৯৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

রাকসু ও সিনেট নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৮ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১১ হাজার ৩০৫ এবং পুরুষ ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬ জন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত