দর্শকের আবেগময় এক নায়ক

আমি কখনও চলচ্চিত্র থেকে হারিয়ে যাইনি: শাকিল খান

হাসান সাইদুল
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১৩: ২৪

নব্বই দশকের একজন সুদর্শন, এবং দর্শকদের কাছে আবেগের নাম ছিল নায়ক শাকিল খান। শাকিল খান অভিনীত প্রথম সিনেমা ১৯৯৭ সালে মুক্তি পেলেও শোবিজ দুনিয়ায় তার আগমন ১৯৯৪ সালে। শুটিং এর আগে ফটোশুটি ম্যাগাজিন আড্ডাও চলছিলো সমান তালে।

অভিনয়, সংলাপে মাধুর্যতা, নাচের তাল গান ঠোঁট মিলানোর পাশাপাশি সিনেমার স্ক্রিপ্টও লিখতেন এ নায়ক। কেউ কেউ শাকিল খানকে একজন প্যাকেজ শিল্পীও বলে থাকতেন তখন।

বিজ্ঞাপন

পছন্দের গানের কোরিওগ্রাফার হতেও ভুল করেননি। তার লিপে অনেক গান এখনও দর্শক নন্দিত। যেমন, ‘ভালো বেসে অন্তরে অন্তরে অন্তরে’, ‘তোমায় দেখলে মনে’, ‘প্রতিদিন তোমাকে আমি চাই’, ‘কি দারুণ দেখতে’ গানগুলোতেও অভিনয়ের পাশাপাশি কোরিওগ্রাফারের মতো কাজ করেছেন। অনেক সিনেমার স্ক্রিপ্টও পরামর্শক ছিলেন এ নায়ক।

ইনোসেন্ট লুকের এ নায়কের অভিনয়ে প্রথমদিকে একটু শিশুসুলভ ব্যাপার থাকলেও দিনে দিনে পরিণত হয়েছিলেন অভিনয়ে। শাকিলের অভিনয়ে নিজস্ব একটা ধাঁচ ছিল। তিনি তার মতো করে করেই অভিনয়টা করতেন। রোমান্টিক ছবির জন্য পারফেক্ট ছিল এবং সেটি ফুটিয়ে তুলতেন বেশ চমৎকারভাবে।

চিত্রনায়ক শাকিল খানের সিনেমার ক্যারিয়ারের সময়টা খুব বেশি নয়। তবে নিজের সুপ্ত প্রতিভাকে ব্যবহার করে তার সময়ের নায়কদের সাথে পেশাদার প্রতিযোগিতা করে অবস্থান তৈরি করতে পেরেছিলেন এবং জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন একেবারই অল্প সময়ে। তিনি যে খুব জনপ্রিয় এবং প্রশংসিত ছিলেন তার প্রমাণ হলে তার কম সময়ে আড়াল হয়ে যাওয়া।

ঢাকাই চলচ্চিত্রে দর্শকদের আফসোসের বিষয় হলো শাকিল খানকে বেশি সময় ধরে না পাওয়া। তবে শাকিল খান এ অভিযোগ কিংবা অভিমানী বার্তা শুনতে অনেকটা নারাজ। তিনি বলেন, ‘দর্শকরা আমার ভালোবাসার মানুষ। আমাকে কম সময় পেয়েছে এটা তাদের অভিমানী চাওয়া হতেই পারে। তবে আমি কখনও চলচ্চিত্র থেকে হারিয়ে যাইনি। হয়ত অভিনয়ে কম ছিল অল্প সংখ্যক সিনেমায় অভিনয় করেছি কিন্তু আমি অভিনয় কিংবা নির্মাণের সাথেই ছিলাম। ক্যামেরার সামনে সংলাপ দিয়ে চেহারা হয় তো কম দেখিয়েছি কিন্তু অভিনয়ের সাথেই ছিলাম।‘

শাকিল খানের কাছে এ কথার ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নাম বলছি না এমন ভালো সিনেমা নিয়ে দেশে এখনও হৈচৈ পড়ে। কিন্তু এ সিনেমা নির্মাণের টাকা ছিলো না যদি আরও সহজ করে বলি সিনেমার প্রযাজক নাই আমার কাছে এসেছে। আমি না করিনি। প্রযোজনার টাকা দিয়েছি কিন্তু বলেছি আমার নাম লিখতে হবে না। কিছু সিনেমার স্ক্রিপ্টের কাজও আমি করে দিয়েছি। বলছি না আমিই সব করেছি কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছিলো স্ক্রীপ্টটা ঠিক করে দেয়া উচিত, করে দিয়েছি। অনেক সিনেমা আমার করার কথা কিন্তু আমার বন্ধু কয়েকজন নায়ক তারা আবদার করে যে সিনেমাটি সে করবে আমি ছেড়ে দিয়েছি। এসব নাম এখন বলে লাভ হবে না। কিন্তু আমি যে চলচ্চিত্রের সাথে ছিলাম হয়তো দর্শকদের কখনও বলে বোঝাতে পারিনি। আমি হয়তো আরও অনেক সিনেমা করতে পারতাম তাতে কি হতো কিন্তু এখন যেভাবে আমাকে দর্শক ভালোবাসে মনে করে তা হয়তো তখন করতো না।’

শাকিল খান শুধু সিনেমায় অভিনয় করেই থেমে থাকেননি। নাটকেও অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত নাটকগুলোও দর্শকমহলে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। টিভি অনুষ্ঠানও উপস্থাপনা করেছেন একাধিকবার।

দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)’র সেন্সর বোর্ডের এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের সেন্সরবোর্ডের সদস্য ছিলেন শাকিল খান। অভিনয় পাশাপাশি এ নায়ক ব্যবসাতেও জড়িয়ে যান। একটা সময় ব্যবসাতে নিয়মিত হয়ে যান। তবে চলচ্চিত্র ছেড়ে যাননি। একাধিক বার চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনও করেন। সব সময় চেষ্টা করেছেন শিল্পীদের পাশে থাকার।

তবে শাকিল খান নিয়ে যত বিশেষণই আসুক। শাকিল খানের হঠাৎ অভিনয় থেকে সরে যাওয়াটা ঢালিউডের দর্শকের কাছে এখনো আফসোসের বিষয়। ভিসিআরের দিনগুলোতে শাবনূর-শাকিল খান জুটির জনপ্রিয়তার দিনগুলো মনে পরে। চায়ের দোকানগুলোতে ভিড়ে টেকা যেত না ভিসিআরের দর্শকের চাপে। নায়িকা শাবনূরের সাথে যে নায়কদের দারুণ রোমান্টিক জুটি গড়ে ওঠে শাকিল খান তাদের অন্যতম। শাকিলের মায়াবী লুক রোমান্টিকের সাথে মানানসই ছিল। নায়িকা পূর্ণিমা মৌসুমীর সাথেও তার অসাধারণ অভিনয় ছিল। সেরা জুটি হিসেবে তো পপির সাথে তার অনেক সিনেমায় মুক্তি পেয়েছে। একটা সময় চলচ্চিত্র পাড়ায় বলাবলি হতো যে শাকিল খান পপি দম্পতি জুটি।

‘জীবনে বসন্ত এসেছে, ফুলে ফুলে ভরে গেছে মন, ও বান্ধবী অনামিকা, আজ তোমাকেই প্রয়োজন’ এমন গান শুনে কার না ভালো লাগতো। এ গানের অভিনেতা যে শাকিল খান। সাথে রিয়াজ ও শাবনূরের অভিনয় তো ছিলা দারুণ। শাবনূরের অসাধারণ নাচ, এক্সপ্রেশন ছিল আর শাকিলের গিটার বাজানোর স্টাইল সুপার।

‘নারীর মন’ ছবির ‘ঘুমিয়ে থাকো গো সজনী’ গানটা শুরুর আগে শাবনূর যখন অনুরোধ করে শাকিলকে গান শোনাতে বলেছিল শাকিল হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ানোর ভঙ্গিটা অসাধারণ ছিল।

আসলে এখনও অনেক দর্শক মানতে পারছেন না যে শাকিল খান অভিনয়ে নাই। আবার শাকিল খানও বলতে নারাজ যে তিনি অভিনয় ছেড়েছেন। কারণ তিনি অভিনয় চলচ্চিত্র আর পরিবার নিয়ে আছেন।

তিনি বলেন, ‘এ চলচ্চিত্র দিয়েই মানুষ আমাকে চেনেন। আমি কীভাবে চলচ্চিত্রকে বিদায় নিতে পারি? শাকিল খান আবার দৃঢ় কণ্ঠে বলে ওঠেন, হয়ত শিগগিরই অভিনয়ে দেখবেন দর্শক। হয়তো তাদের ভালোবাসার মানুষ শাকিল খানকে নতুন লুকে সিনেমার পর্দায় দেখতে পাবেন।‘

শাকিল খান অভিনীত জনপ্রিয় সিনেমাগুলো মধ্যে, ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’, ‘মা যখন বিচারক’, ‘এ মন তোমাকে দিলাম’, ‘পাহাড়াদার’, ‘বিয়ের ফুল’, ‘মগের মুল্লুক’ অন্যতম।

শাকিল খানের কাছে তার প্রাপ্তির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি আসলে কিছু পেতে আসিনি। অভিনয় করে আমার সংসার চালাতে হবে সে ভাবনাও আমার কখনও ছিলো না। কিন্তু সিনেমায় অভিনয় করে আমি দর্শকদের যে ভালোবাসা পেয়েছি এখনও পাচ্ছি তাই আমার কাছে বেশি। আমি দর্শকদের ভালোবাসা নিয়ে সারা জীবন বাঁচতে চাই।‘

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত