জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী আজমেরী হক বাঁধন অভিনীত নতুন সিনেমা ‘মাস্টার’ যাচ্ছে রটারড্যাম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে।
রেজওয়ান শাহরিয়ার পরিচালিত ‘মাস্টার’ একটি রাজনৈতিক থ্রিলার। রটারড্যাম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ‘বিগ স্ক্রিন কম্পিটিশন’ বিভাগে লড়বে সিনেমাটি।
বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ও প্রভাবশালী এ-লিস্টের এই চলচ্চিত্র উৎসবটি নতুন প্রতিভার খোঁজ এবং ক্যারিয়ার লঞ্চপ্যাড হিসেবে বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। ক্রিস্টোফার নোলান থেকে শুরু করে বং জুন-হোর মতো নির্মাতাদের অনেকেরই আন্তর্জাতিক পরিচিতি গড়ে উঠেছিল এই উৎসবের হাত ধরে। এই বছরের উৎসবে বিশ্বের নানা প্রান্তের সেরা সব সিনেমা প্রদর্শিত হবে, যার মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে থাকছে বাংলাদেশের এই ছবিটি।
‘নোনাজলের কাব্য’ খ্যাত নির্মাতা রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতের দ্বিতীয় পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মাস্টার’ রাজনীতি, সংঘাত ও মানবিকতার গল্প। ১২২ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই ছবির গল্প আবর্তিত হয়েছে জহির নামের এক আদর্শবান শিক্ষককে ঘিরে। স্কুল, পরিবার আর নিজের আদর্শ নিয়ে বাঁচতে চাওয়া জহির পরিস্থিতির চাপে একসময় উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ক্ষমতার স্বাদ পাওয়ার পর তার জীবনে শুরু হয় নানামুখী ঘাত-প্রতিঘাত। জনমানুষের প্রত্যাশা, অন্যায্য আবদার এবং নিজের বিবেকের দ্বন্দ্বে জহির কি তার আদর্শ ধরে রাখতে পারেন, নাকি বদলে যান অন্য এক মানুষে— তাই উঠে এসেছে এই সিনেমায়।
ছবিটির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাসির উদ্দিন খান। এছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন আজমেরী হক বাঁধন, জাকিয়া বারী মম, ফজলুর রহমান বাবু, শরীফ সিরাজ, তাসনোভা তামান্না, আমিনুর রহমান মুকুল ও মাহমুদ আলম। চিত্রগ্রহণে ছিলেন তুহিন তামিজুল এবং প্রডাকশন ডিজাইনে ভারতের জোনাকি ভট্টাচার্য।
রটারডামের ‘বিগ স্ক্রিন কম্পিটিশন’ মূলত এমন সব চলচ্চিত্রের জন্য তৈরি, যা একই সাথে শৈল্পিক মান এবং বাণিজ্যিক আবেদন— উভয়কেই ধারণ করে। অর্থাৎ, এই বিভাগের সিনেমাগুলো শুধুমাত্র ফেস্টিভাল সার্কিটের জন্য নয়, বরং বড় পর্দায় বা প্রেক্ষাগৃহে সাধারণ দর্শকদের দেখানোর মতোই বিশাল ক্যানভাসে নির্মিত। এই বিভাগে বিজয়ী চলচ্চিত্র পাবে ৩০,০০০ ইউরো (প্রায় ৩৮ লক্ষ টাকা) সমমূল্যের পুরস্কার এবং নেদারল্যান্ডসের প্রেক্ষাগৃহে সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার জন্য সার্বিক সহযোগিতা। আর্টহাউজ এবং মূলধারার সিনেমার মধ্যে সেতুবন্ধনকারী এই বিভাগে ‘মাস্টার’-এর নির্বাচন বাংলা সিনেমার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি।
সিনেমাটির সম্পাদনা করেছেন অস্কার মনোনয়নপ্রাপ্ত ছবির (জুডাস অ্যান্ড দ্য ব্ল্যাক মেসায়া) সম্পাদক এবং একাডেমি মেম্বার ক্রিস্টান স্প্রাগ। সংগীত পরিচালনা করেছেন লস এঞ্জেলেসে কর্মরত তাইওয়ানিজ কম্পোজার হাও টিং শি, যিনি দেশি ও বিদেশি সুরের সংমিশ্রণে ছবির আবহে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছেন।
এছাড়াও উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ছবিটির কালার গ্রেডিং, সাউন্ড ডিজাইন ও মিক্সিং সম্পন্ন হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল ও বুসান শহরের বিশ্বমানের স্টুডিওতে (C47, Wavelab এবং বুসান সাউন্ড স্টেজ)।
বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় চলচ্চিত্র অনুদানপ্রাপ্ত এই ছবিটি প্রযোজনা করেছে 'মাইপিক্সেলস্টোরি'। প্রতিষ্ঠানটি এর আগে বহুল প্রশংসিত 'নোনাজলের কাব্য' (শ্রেষ্ঠ ছবি, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার) উপহার দিয়েছিল।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

