এই গরমে আরামে রান্না করার কৌশল

আনিকা রহমান
প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৪: ১৬

গ্রীষ্মের অসহনীয় গরমে ওষ্ঠাগত জনজীবন। প্রচণ্ড গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত হলেও খাওয়াদাওয়া তো বাদ দেওয়ার উপায় নেই। এই তীব্র দাবদাহেও পেটের ক্ষুধা মেটানোর জন্য স্বাভাবিকভাবেই রান্নাঘরে ঢুকতে হয়। বাড়িতে যিনি সবার জন্য রান্না করেন, তার জন্য এই গরমে রান্না করা আরো বেশি কষ্টের। দীর্ঘক্ষণ চুলার পাশে থেকে রান্না করলে শারীরিক দুর্বলতার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক অস্থিরতাও দেখা দেয়। কিন্তু তাই বলে তো আর রান্না বন্ধ করা যাবে না। তাই রান্নাঘর যেকোনো বাড়ির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ বিষয় নিয়ে সাধারণত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাড়ির নারীদেরই রান্নাঘরের যন্ত্রণা সইতে হয়। তাদের রান্নাঘরে থাকতে হয় দিনের অনেকটা সময়। অতিরিক্ত গরম, আর্দ্রতা ও রান্নাঘরের তাপে গলদঘর্ম হতে হয়। আর রান্নাঘর মানেই চুলার উত্তাপ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীরাই নিয়মিত রান্না করেন। তাই তাদের গরমের কষ্টটাও একটু বেশি সহ্য করতে হয়।

বিজ্ঞাপন

তবে গরম সহ্য করার মানসিকতার পাশাপাশি তারা রান্নার সময় রান্নাঘরে কীভাবে সুস্থ থাকতে পারেন, সে বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি। আর এই গরমে রান্নাঘরে কীভাবে স্বস্তি পাওয়া যায় এবং সুস্থ থাকা যায়, গরমের কষ্ট কিছুটা কমিয়ে কীভাবে রান্না সেরে ফেলা যায়, সে সম্পর্কে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো :

* গরমের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে রান্নার কাজ সকাল সকাল শেষ করে নেওয়া ভালো। বেলা যত বাড়বে তত বাড়বে তাপমাত্রা ও অসহনীয় আর্দ্রতা। তখন চুলার তাপ আর বেলার তাপ মিলে এক অসহ্য অনুভব হতে থাকে। এর ফলে অনেকে অসুস্থও হয়ে পড়েন। তাই বেলা বাড়ার আগেই রান্না করে নিতে হবে।

* গরমে কম তেল-মসলার হালকা খাবার পরিবেশন করাটাই বুদ্ধিমানের। এ ছাড়া তালিকায় বেশি করে ফল, সালাদ, হালকা ও সিদ্ধ করা খাবার রাখা ভালো। যত কম সময় রান্নার পেছনে ব্যয় করা যায় ততই ভালো।

* খাবার সেদ্ধ করার জন্য প্রেশার কুকার ব্যবহার করুন। এতে দ্রুত রান্না করা সম্ভব হবে। সবজি কাটা, মসলা তৈরি করা-সহ রান্নার একাধিক প্রস্তুতির ধাপ আগেই সেরে রাখুন। এতে রান্নাঘরের অতিরিক্ত গরমে বেশিক্ষণ থাকতে হবে না।

* রান্না করার সময় ব্যবহার করুন এগজস্ট ফ্যান। এতে রান্নাঘরে তেলকালি জমবে না। চটচটে হবে না দেয়ালের টাইলস বা অন্য কোনো অংশ। গরমে রান্নাঘর একদিকে যেমন পরিষ্কার থাকবে, তেমনি আপনিও গলদঘর্ম হওয়ার কবল থেকে রেহাই পাবেন।

* রান্নার সময় প্রচুর ঘাম হয়। এজন্য অবশ্যই হাইড্রেটেড থাকুন। ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রতি ৫০০ মিলি পানিতে এক চিমটি লবণ এবং ২ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন। রান্নার সময় ঢিলেঢালা ও পাতলা পোশাক পরতে হবে।

* এই গরমে দুপুরে রান্নাঘর এড়ানো উচিত। তাই সকালে রান্না সেরে নেওয়া ভালো। সকালে সম্ভব না হলে বিকালের পর রান্না করলে কিছুটা আরাম পাওয়া যাবে।

* কোন বেলায় কী খাবার পরিবেশন করতে চান, তা আগে থেকে ঠিক করে রাখা উচিত।

* প্রতিদিন কয়েক পদ রান্না এ সময়ে এড়িয়ে চলুন। কম পদ, কিন্তু পরিবারের সবার ভালো লাগবে, এমন কিছু রান্না করুন।

* সকালে রান্না করলে আগের দিন রাতে শাকসবজি কেটে রেডি করে রাখুন। রান্না করতে অনেক সময় বাঁচবে। মাছ বা মাংস ম্যারিনেট করে রাখার প্রয়োজন হলে সেটিও আগের রাতে করে রাখলে সময় বাঁচবে আর রান্নাও সুস্বাদু হবে।

* রান্নাঘরের ভেন্টিলেশনের দিকে লক্ষ রাখুন। এখন প্রায় সব বাড়িতেই কিচেন চিমনি থাকা সত্ত্বেও রান্নার সময় অন করতে ভুল হয়। এ ছাড়া বাড়ির বাকি ভেন্টিলেশনের দিকেও নজর দিন। রান্নাঘরে অবশ্যই এগজস্ট ফ্যান ব্যবহার করবেন। রান্না করার সময় রান্নাঘরের জানালা খুলে রাখবেন।

গ্লুকোজে লেবু মিশিয়ে এক গ্লাস পানি খেলে রান্নার সময় ক্লান্তি আর বিরক্তি ভাব কেটে সতেজ থাকবেন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া স্যালাইন খাওয়া একেবারেই ঠিক নয়। সুতির ঢিলেঢালা পোশাক পরে রান্না করুন।

এই গরমে রান্নায় তেল-মসলা এবং বেশি কাটাকোটার ঝামেলাবিহীন রান্না রোজকার মেন্যুতে রাখুন। প্রয়োজনীয় বাসনকোসন ও মসলাপাতি আগে থেকে গুছিয়ে রাখুন।

কষিয়ে রান্না করার পরিবর্তে হাতে মাখা রান্না করতে পারেন। ডাল, ছোট মাছ ও মাংস হাতে মেখে রান্না করা যায়। ভাপে রান্না করা খাবার এ সময় করা যেতে পারে।

রান্নার আগের প্রস্তুতি, অর্থাৎ কোটাবাছা, এগুলো ডাইনিং রুমে ফ্যানের নিচে অথবা রান্নাঘর-লাগোয়া বারান্দায় করা যেতে পারে।

বাজারে ত্বকের জন্য বিভিন্ন ধরনের ফেসপ্যাক পাওয়া যায়। চুলার কাছে যাওয়ার আগে এই প্যাক লাগিয়ে নিলে ত্বকে গরম তাপ অনেকটা কম লাগে।

বিষয়:

গ্রীষ্ম
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত