বেড়াতে গেলে জানতে হবে

মেজবাহ মুকুল
প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪: ৩৫
আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪: ৩৮

অবকাশযাপনে অনেক পর্যটকই পর্যটন স্থান হিসেবে বেছে নেন কক্সবাজার। বিশ্বের দীর্ঘতম এই সমুদ্রসৈকতে বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে শীত মৌসুমেই পর্যটনের উপযুক্ত সময়। তাই পর্যটকরাও নাড়ির টানের মতো ছুটে আসেন এখানে। নতুন জায়গা আমাদের কাছে বরাবরই অপরিচিত। আগে থেকে জানা থাকে না কোন এলাকা কেমন, কোথায় কী এবং জিনিসপত্রের মূল্য সম্পর্কে। তাতেই পড়তে হয় নানা রকম বাধা-বিড়ম্বনার মুখে। যদি পর্যটন এলাকা সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেওয়া যায়, তবে সহজেই বিরূপ পরিস্থিতি এড়ানো এবং নিরাপদ ভ্রমণ করা যায়। লিখেছেন মেজবাহ মুকুল

হোটেল বুকিং

বিজ্ঞাপন

কক্সবাজার যাওয়ার আগে কিংবা গিয়ে সবাই হোটেল বুকিং নিয়ে চিন্তিত থাকি। তবে ভ্রমণের আগে থেকে হোটেল বুকিং দিয়ে রাখাই ভালো। বুকিংয়ের সময় আলোচনার মাধ্যমে অবশ্যই ভাড়া ঠিক করে নেবেন, যাতে পরবর্তী জামেলা এড়ানো যায়। গিয়ে যারা উপস্থিত হোটেল বুকিং দেবেন, তারা তৃতীয় পক্ষের সাহায্য ছাড়াই সরাসরি হোটেল দেখেশুনে বুকিং দেবেন। এতে দালালচক্র এড়ানো, পছন্দের রুম ও অতিরিক্ত টাকা খোয়া থেকে বাঁচা যাবে।

যানবাহন ভাড়া

পর্যটন এলাকা কক্সবাজার পৌঁছা মাত্র যেকোনো গাড়িতে আপনার গন্তব্যে যেতে অবশ্যই বাহনের ভাড়া ঠিক করে নেবেন। অপরিচিত লোকের ঠিক করে দেওয়া গাড়িতে না ওঠাই ভালো। ড্রাইভারকে ভালো হোটেলের কথা জিজ্ঞেস না করে নিজে নিজেই হোটেল ঠিক করে নেবেন। কারণ এরা আপনাকে নিজেদের পছন্দমতো হোটেলে নিয়ে যাবেন, যেখানে থাকতে হয়তো আপনার রুচিতে বাঁধবে।

জাতীয় পরিচয়পত্র

হোটেল বুকিং দেওয়ার সময় অবশ্যই আপনার এনআইডি কার্ড বা জন্ম নিবন্ধনের একটি ফটোকপি জমা দেবেন। বিচে যাওয়ার আগে আপনার মূল্যবান জিনিসপত্র হোটেলে রেখে আসাই উত্তম।

জোয়ার-ভাটার সময় ও সতর্কতা

জোয়ারের সময় সমুদ্রস্নানে নামা নিরাপদ। আর ভাটার সময় সমুদ্র স্নান খুবই বিপজ্জনক। ভাটার টানে মুহূর্তেই যে কেউ সমুদ্রে হারিয়ে যেতে পারে। তাই আগে-ভাগে জোয়ার-ভাটার সময় জেনে নিয়ে সমুদ্রস্নানে যান। তা ছাড়া সৈকতে ‘জোয়ার-ভাটা’ সতর্কতাসংক্রান্ত ‘ইয়াছির লাইফ গাড’-এর কিছু সাইনবোর্ড ও পতাকা দেখতে পাবেন। সবুজ পতাকা উড়তে দেখলে বুঝবেন সমুদ্রস্নান এখন নিরাপদ। বিপরীতে লাল পতাকা দেখলে বুঝবেন সমুদ্রস্নান এখন বিপজ্জনক।

ম্যাসাজ বয়

সমুদ্রবিলাসে অনেকেই সৈকতে রাখা কিটকটে শুয়ে আয়েশি সময় কাটাতে চান। এ সময় দেখা যায় এক ধরনের ম্যাসাজ বয়কে। যারা সামান্য পারিশ্রমিকে আপনার শরীর ম্যাসাজ করে দেবে। এসব ম্যাসাজ বয় দেখলে কিটকটের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি বা ট্যুরিস্ট পুলিশকে জানান। কেননা ম্যাসাজের আড়ালে এরা আপনার মোবাইল, মানিব্যাগ ইত্যাদি নিয়ে কেটে পড়তে পারে।

ফটোগ্রাফার

ফটোগ্রাফার দেখলেই ছবি তোলার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়বেন না। ছবি তোলার আগে অনুমোদিত লাল পোশাক পরা ফটোগ্রাফারের লাইসেন্স যাচাই করে নিন। লাইসেন্স ঠিকঠাক থাকলে তার নাম, মোবাইল নম্বর নিয়ে কল দিয়ে নম্বর নিশ্চিত করুন। এমনকি তার একটি ছবি তুলে রাখতে ভুলবেন না। অবশেষে দরদাম করে ছবি তুলুন। ছবি তোলার পর এক ঘণ্টার মধ্যেই প্রিন্ট করে নেগেটিভসহ ফটোগ্রাফার থেকে বুঝে নেবেন। সরকারি রেট অনুযায়ী প্রতিটি ফোরআর সাইজের ছবির দাম ৩০ টাকা।

বাহন ও বোট

সমুদ্র জলে কিংবা তীরে বিনোদনের জন্য রয়েছে স্পিডবোট, ওয়াটার বাইক, লাইফ বোট ও তিন চাকার বাইক। এসব বাহনে চড়ার আগেও দামদর করে নেবেন। রেট অনুযায়ী স্পিডবোট প্রতি রাউন্ড ১০০ টাকা। স্পিডবোটের সাহায্যে চলা লাইফ বোট জনপ্রতি ২৫০ টাকা। তিন চাকার বাইক কিলোমিটার প্রতি ৫০ টাকা।

ঝাউবন

সমুদ্রতীরে ঝাউবন সৌন্দর্য উপভোগে বাড়তি মাত্রা যোগ করে। বনে ঘুরতে ও ছায়ায় বসে সময় কাটাতেও ভালো লাগে। কিন্তু সন্ধ্যার পর জায়গাটি অন্ধকার থাকে বিধায় পর্যটকের জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠতে পারে। তাই আসন্ন আপদ থেকে বাঁচতে নিরাপদ এলাকায় থাকাই শ্রেয়।

স্ট্রিট ফুড

ফুটপাতে তৈরি স্ট্রিট ফুড বা খোলা খাবার অনেকেরই প্রিয় হওয়ার অন্যতম কারণ সস্তা ও রসনাবিলাস। মজাদার হলে এসব স্ট্রিট ফুড স্বাস্থ্যসম্মত নয়। রাস্তার ধুলো উড়ে খাবারে সহজেই মিশে যায়। এসব ধুলোর সঙ্গে থাকে প্রচুর জীবাণু। যাতে আপনার ফুড পয়জনিং হতে পারে। আর নিরাপদ পানি পানেও যত্নবান হতে হবে। তা না হলে ভ্রমণে অসুস্থতা আপনার পুরো আনন্দকেই মাটি করে দেবে।

খাওয়া-দাওয়া ও রেস্টুরেন্ট

কক্সবাজারে পর্যটকদের জন্য হোটেল-মোটেল গড়ে ওঠায় থাকা-খাওয়ার বেশ সুবিধা রয়েছে। খাবারের মেন্যুতে পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে থাকে সাগরের মাছ। বিশেষ করে চিংড়ি, লইট্যা, ছুরি, রূপচাঁদা মাছ ও মজাদার শুঁটকি ভর্তা। এসব খাবার অর্ডারের আগে মূল তালিকা দেখে নিন। প্রয়োজনে খাবারের তালিকা ও মূল্য আলাদাভাবে মোবাইলে টুকে রাখুন। অবশেষে আপনার টুকে রাখা তালিকার হোটেলের তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে বিল পরিশোধ করুন।

ট্যুরিস্ট পুলিশ

পর্যটন এলাকায় অনেক সময় হয়রানির শিকার হতে হয় পর্যটককে। যেমনÑ হোটেল ও বাহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, খাবারের চড়ামূল্য, কোনো জায়গায় অনিরাপদ অনুভব করা। এসব অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আগে থেকেই ট্যুরিস্ট পুলিশ ও থানার ফোন নম্বর সংগ্রহে রাখুন। এতে ভ্রমণ সুন্দর ও নিরাপদ হবে আশা করি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত