জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্যাম্পাসে উত্তাপ ক্রমশই বাড়ছে। বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন যেমন তাদের অবস্থান মজবুত করতে ব্যস্ত, তেমনি নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন।
সেই প্রশ্নের কেন্দ্রেই এখন স্থান পেয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, জবি শাখার সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম মারুফের প্রার্থীতা এবং তার বাবার হল সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকে ঘিরে সৃষ্টি হওয়া নৈতিক বিতর্ক। বিষয়টি শুধু আলোচনাই নয়, বরং নির্বাচনি পরিবেশকে ঘিরে একটি গুরুতর প্রশ্নবিদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন অনেকেই।
শামসুল মারুফ সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, জবি শাখার সাধারণ সম্পাদক। তিনি বাম জোট থেকে জকসু নির্বাচনে মওলানা ভাসানী ব্রিগেড প্যানেলে সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে মনোনয়ন পেয়েছেন। কিন্তু প্যানেল ঘোষণার পরই শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। কারণ, মারুফের বাবা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সেকশন অফিসার, যিনি নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি হল সংসদ নির্বাচনি কার্যক্রমেও যুক্ত।
জানা গেছে, বাম সংগঠনগুলোর জোট হল সংসদ নির্বাচনেও প্যানেল দিচ্ছে। যেখানে ছেলে প্যানেলে নির্বাচন করছে৷ সেখানে বাবার নির্বাচনি কার্যক্রমে যুক্ত থাকা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেখানে একজন প্রার্থী সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, সেখানে তার বাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে নির্বাচনি কাজে জড়িত থাকাটা স্বার্থসংঘাতের উদাহরণ। তাদের অভিযোগ, একজন কর্মকর্তা যখন দায়িত্বে থাকেন, তখন তার অবস্থান, নির্দেশনা বা প্রশাসনিক পদক্ষেপ নির্বাচনি পরিবেশকে প্রভাবিত করতে পারে। ফলে একজন প্রার্থীর অভিভাবক নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকায় নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেও এ বিষয়টি নিয়ে কিছুটা অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। কর্মকর্তাদের দায়িত্ব বণ্টন অনেক সময় সীমিত জনবল দিয়ে করতে হয়। তবে নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে বিষয়টি নিয়ে আরো ভাবা উচিত ছিল বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, একজন কর্মকর্তা যখন নির্বাচনি কাজে জড়িত থাকেন, তখন তার আত্মীয় নির্বাচনে অংশ নিলে স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দেহ স্বাভাবিকভাবেই জন্ম নেয়। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে আনোয়ার হোসেনকে দায়িত্ব থেকে অপসারণের দাবি তুলেছেন তারা।
অন্যদিকে, সাধারণ কিছু শিক্ষার্থী মনে করছেন, বিষয়টি আরও আগেই প্রশাসনের নজরে আসা উচিত ছিল। নির্বাচনি দায়িত্ব বণ্টনের আগে যদি বিষয়টি বিবেচনা করা হতো, তাহলে এমন বিতর্কের সৃষ্টি হতো না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনে নৈতিকতার মান বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই এমন পরিস্থিতিতে আরো বেশি সতর্ক হওয়া উচিত ছিল বলছেন তারা।
বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, “এই ঘটনাটি পুরো নির্বাচনের স্বচ্ছতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তার ছেলে বামপন্থী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকায় নিরপেক্ষতা বজায় রাখা সম্ভব নয় বলে আমরা মনে করি। নির্বাচন কমিশনকে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।”
এ বিষয়ে শাখা ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি আব্দুল আলিম আরিফ বলেন, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় ভূমিকা নিশ্চিত করা জরুরি। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে—এমন কোনো ছোটখাট বিষয়েও সুযোগ রাখা উচিত নয়।কমিশনের দায়িত্বে থাকা কারও আত্মীয় বা সন্তান নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিশেষ সুবিধা পেলে তা কোনো পক্ষই মেনে নেবে না। এটি সুস্পষ্টভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন এবং এর মাধ্যমে একটি দল সুবিধা পেতে পারে—এটি স্পষ্ট।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হল প্রভোস্ট ও প্রিজাইডিং অফিসার আঞ্জুমান আরা বলেন, “সে শুধু নির্বাচনি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ভোটার তালিকা প্রণয়নের প্রকাশ করেছে। এর বাইরে কোনো ধরনের দায়িত্ব বা কার্যক্রম তার হাতে আর দেওয়া হবে না।”
এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান বলেন, বিষয়টি আমরা কমিশনের মিটিংয়ে উঠাবো, লিখিত অভিযোগ পেলে দ্রুত এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

