বউ-শাশুড়ির দ্বন্দ্বের অবসান হোক

জাকিয়া সুলতানা
প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৫, ১১: ০২

নারী তুমি রূপে-গুণে বিশ্বাসে গড়িয়াছ এ ভুবন

তোমাকে ছাড়া কোনো পুরুষ দেখিত না এ জগৎ

বিজ্ঞাপন

তাইতো তুমি সবার ঊর্ধ্বে, তুমিই মহান

সেই নারীই জানের শত্রু হয়ে দাঁড়ায় আরেক নারীর। মায়ের পায়ের নিচে সব সন্তানের বেহেশত। আবার সেই মায়ের সঙ্গে খারাপ আচরণের কারণেই কত মানুষ এসেছে আইনের আওতায়, সমাজে হয়েছে ধিকৃত। কত বৃদ্ধাশ্রমে মায়েরা শেষ বয়সে থিতু হয়েছেন । বউকে বেশি ভালোবাসা বা মাকে বেশিÑ এমন মানসিকতার কারণে যে কত পুরুষের জীবন হয়েছে ছারখার। যাদের সকালটা শুরু হয় বোবা কান্না দিয়ে এমন খবর আমরা কজনইবা রাখি! সমাজ-সংসার রক্ষা করতে গিয়ে কত পুরুষ তা সহ্য করেই সংসার করে যান। মা এবং স্ত্রী দুজনের ভালোবাসার প্রতিযোগিতায় পুরুষটির মানসিক অবস্থা কেমন হয় তা কেউ খেয়াল করে না। পুরুষকে সংসার চালাতে গিয়ে কত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে হয়। বাড়িতে এসে তার দরকার একটু মানসিক শান্তি; সেটা আসলে কতটুকু পাচ্ছেন তিনি? বউ-শাশুড়ির এমন পারিবারিক দ্বন্দ্ব দিনের পর দিন সহ্য করতে না পেরে পুরুষটি তখন নিজেকে শেষ করে দেওয়ার মতো কাণ্ড ঘটিয়ে বসেন। যার সর্বশেষ উদাহরণ এএসপি পলাশ সাহা। বউ চেয়েছিলেন তার কাছে আর একটু সময়, একান্তে ভালোবাসাÑ যে চাওয়াটা ছিল একজন স্ত্রীর ন্যায্য পাওনা। সেখানে মা এক বিশাল দেয়াল তৈরি করে রেখেছিলেন যা মোটেও উচিত হয়নি। এই যে বউ-শাশুড়ির মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব যেটা অহরহ ঘটছে আমাদের সমাজে, কোনোটা মানুষ জানতে পারে আবার অনেকটাই থাকে চাপা পড়ে। অনেকেই লোকলজ্জার ভয়ে মুখ খুলেন না, নীরবে সহ্য করেন। মায়ের স্থানে মা, বউয়ের স্থানে বউ কারো ভাগ কাউকে দেওয়া সম্ভব না। আর সে ভালোবাসাই পলাশ সাহার জীবনে কাল হলো, বউ এবং মায়ের ভালোবাসা থেকে পালাতে তিনি নিজেকে শেষ করে দিলেন। তবে এটা কোনো সমাধান নয়। আর একটু বুদ্ধি খাটানো তার উচিত ছিল। তাতে করে এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত তাকে নিতে হতো না। বাস্তবতা বুঝে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে নিতে হবে। যার পরিণাম হয়তো বউকে নিয়ে আলাদা থাকা না হয় মাকে দূরে সরিয়ে রাখা। কিন্তু বুদ্ধি খাটিয়ে বউকে-মাকে একত্রে রাখতে পারা পুরুষেরও অভাব নেই এ সমাজে। যার সংখ্যাই বেশি। আমাদের সমাজের ভালো জিনিসের শিরোনাম কমই হয়। মায়ের ভালোবাসার কোনো ভাগ হতে পারে না। মা, মা-ই, কিন্তু মাকেও বুঝতে হবে একটা সময় ছেলেকে আগলে রাখা যাবে না। বিয়ের পর একটা মেয়ে চাবেই তার স্বামী তাকে চোখে চোখে রাখবে। যেমনটি ওই শাশুড়িমাও চেয়েছিলেন এক সময় তার স্বামীর কাছে। নিজের মেয়েটাকেও পরের ঘরে যখন পাঠান তখন নিজেও চান তার মেয়েটাকে জামাই খুব ভালোবাসায় রাখুক। সংসারে শান্তি আনতে হলে শাশুড়িকেই নিতে হবে মুখ্য ভূমিকা। কারণ একটা মেয়ে যখন সব ছেড়ে শ্বশুরবাড়ি আসে তখন তার বয়স থাকে কম, বাপের বাড়ি মেয়েটা আদরে আদরেই হয়তো ২০/২২ বছর পার করে দেয়। একটা মেয়ের আসল ঠিকানা হয় শ্বশুরবাড়িই। তাকে সবকিছু শিখিয়ে-পড়িয়ে নেওয়া শাশুড়িরই দায়িত্ব। কারণ এই বউটিই একদিন এ সংসারের কর্ত্রী হবেন। তাকে অবহেলা নয়, রাখতে হবে ভালোবাসায়। আবার বউয়েরও বোঝা উচিত শাশুড়িকে প্রতিদ্বন্দ্বী না ভেবে তাকে নিজের মায়ের মতোই দেখতে হবে। কারণ এ সংসারটা সময়ের ব্যবধানে তার কাঁধেই এসে পড়বে। এখানেই তার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে উঠবে। যতদিন শাশুড়ি বেঁচে আছেন চলুন না তার মতো তিনি। এক সময় তিনি সময়ের কাছে হার মানবেনই, কারণ বয়সটা তাকে সে পথেই নিয়ে যাবে।

পরিশেষে বলব বউ-শাশুড়ি কেউ কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী না ভেবে মা-মেয়ে ভাবতে হবে, এতে সামাজিকভাবে বা ধর্মীয়ভাবে নিজেরাই লাভবান হবেন। পারস্পরিক বোঝাপড়া ভালো থাকলে সংসারে শান্তি ফিরে আসবে। নিজের ছেলে বা স্বামী মানসিকভাবে শান্তিতে থাকবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত