ন্যায়বিচার ব্যর্থ হলে সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রও ভেঙে পড়ে: প্রধান বিচারপতি

রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৮: ৪৮
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ২০: ১৯

‘ন্যায়বিচার ব্যর্থ হলে সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রও ভেঙে পড়ে’ বল মন্তব্য করে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, ‘আইন কেবল নিয়মের সমষ্টি নয়, এটি জাতির নৈতিক বিবেকের প্রতিফলন’

শনিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি শুধু আইন শিক্ষার গৌরবের কথা বলেননি, বলেছেন এক গভীর আহ্বানের কথা—ন্যায়ে বিচারের পুনর্জাগরণের কথা।

বিজ্ঞাপন

প্রধান বিচারপতির বক্তব্যে বারবার ফিরে এসেছে ন্যায় এবং নৈতিকতা— দুটি শব্দ, যা আইনকে কেবল পেশা নয়, এক ধরনের সাধনা হিসেবে তুলে ধরে। তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, রাষ্ট্রের শক্তি কেবল প্রশাসনিক কাঠামোয় নয়, তার নৈতিক ভিত্তিতে নিহিত।

‘ন্যায়বিচার ব্যর্থ হলে সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রও ভেঙে পড়ে’—এ কথায় তিনি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকটের দিকে ইঙ্গিত করেছেন।

প্রধান বিচারপতি রেফাত আহমেদ বিচার বিভাগের কাঠামোগত সংস্কারের প্রশ্নে এক নতুন বাস্তবতার দিক উন্মোচন করেন। তার ঘোষিত ‘সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫’–এর মাধ্যমে বিচার বিভাগের প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসনের রূপরেখাও তুলে ধরেন তিনি।

তবে তার বক্তব্যে তিনি কেবল আইনি কাঠামো নয়, বিশ্বাস ও সহযোগিতার সংস্কৃতি গড়ে তোলার ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন। ‘অবিশ্বাস বা একতরফা আচরণ এই স্বাধীনতার ভিত্তিকে দুর্বল করে দিতে পারে।’ এই সতর্কবার্তা প্রশাসন, বিচারক ও আইনজীবী—সব পক্ষের জন্যই প্রযোজ্য বলে মন্তব্য করেন তিনি।

একবিংশ শতাব্দীর প্রেক্ষাপটে বিচারব্যবস্থা যে প্রযুক্তিনির্ভর না হলে কার্যকর হতে পারে না—এই বাস্তবতা তিনি স্পষ্টভাবে স্বীকার করে কেবল প্রযুক্তি নয়, তার সঙ্গে ‘মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়’ করার কথাও বলেন তিনি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও তথ্য-ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা যেমন বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করবে, তেমনি মানবিকতা ছাড়া সেই বিচারব্যবস্থা যান্ত্রিক হয়ে পড়ার ঝুঁকিও তিনি মনে করিয়ে দেন।

আইন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক আইনের পেছনে আছে একটি জীবন, প্রত্যেক রায়ের পেছনে আছে একটি ভাগ্য। এই উপলব্ধিই আইনপেশা কে কেবল চাকরি নয়, এক ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও নৈতিক চর্চায় পরিণত করতে পারে ‘

প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, ‘ন্যায়বিচারের পুনর্জাগরণ এখন আমাদের সময়ের আহ্বান’ -এই আহ্বান কেবল বিচার বিভাগের জন্য নয়, পুরো জাতির জন্য। সংবিধানের যে অঙ্গীকার— স্বাধীনতা, সমতা ও ন্যায়বিচার— তা কাগজে নয়, নাগরিকের জীবনে পৌঁছে দেয়াই আজকের চূড়ান্ত চ্যালেঞ্জ।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত