‘সচিবালয়ের কুকুর ও অন্ধকার মিয়া…’

জাঁ-নেসার ওসমান
প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১০: ৩৮

‘দারুণ... দারুণ... দারুণ এক মতবাদ দিয়েছেন সর্বজনশ্রদ্ধেয় জনাব অন্ধকার মিয়া। অন্ধকার মিয়া তার ইউটিউব চ্যানেলে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সর্বকালের সর্বনিকৃষ্টতম সচিবালয়ের আগুন-কুকুর নিয়ে দারুণ এক পরিচিন্তন, এক ভাবনা, এক ধারণা প্রকাশ করেছেন। সাধু সাধু আমাদের, সবার প্রিয় আর্থার কোনান ডয়েলের শার্লক হোমস ফেইল। অন্ধকার মিয়া বলছেন, সচিবালয়ের মহাপ্রয়াণের সারমেয় মহোদয় বা কুকুরের রহস্যভেদ করলেই সচিবালয় অগ্নিকাণ্ডের সুরাহা হয়ে যাবে। কারণ, রামায়ণের বীর হনুমান তার লেজে আগুন দিয়ে পুরো লঙ্কায় অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়েছিল, আর আমাদের সচিবালয়ের ভষক, মানে সারমেয় অর্থাৎ কুক্কুরের বক্রপুচ্ছ দিয়ে এক সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ড ঘটাতেই পারেন। এই কুকুরের জাত বা ডিএনএ টেস্ট করলেই সব বেরিয়ে আসবে। কারণ, জনাব অন্ধকার মিয়া তার ইউটিউব চ্যানেলে বলেছেন, এই কুকুরের জাত জানলেই সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ডের রহস্যের কিনারায় আমরা পৌঁছে যাবই।

কুকুর যদি অ্যালসেশিয়ান হয়, তাহলে এটি র‌্যাবের কুকুর, কারণ র‌্যাবের ডগ স্কোয়াড অ্যালসেশিয়ান কুকুর দ্বারা গঠিত। তাহলে র‌্যাব বলে দেবে এই কুকুর কীভাবে আগুন দিলেন। আর সারমেয় যদি বুলডগ হয়, তাহলে পুলিশের ট্রেনিংপ্রাপ্ত কুকুরের দিকে সন্দেহ যাবে। কুকুরের জাত যদি ডালমেশিয়া হয়, তাহলে সিআইয়ে, মানে বিদেশি শক্তির যোগসাজশ রয়েছে, তা ধরা পড়বে।

বিজ্ঞাপন

আর কুক্কুর যদি সরাইলের হয়, তাহলে তো কথাই নেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া মানে নাসিরনগরের ইনভলবমেন্ট সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশ পাবে। আর সব ছেড়ে যদি রাস্তার লাওয়ারিশ খেঁকি কুকুর হয়, তাহলে বর্তমানে আওয়ামী লীগ অফিসে যারা মলমূত্র ত্যাগ ও গঞ্জিকা সেবন করছে, তাদের যোগসাজশ সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়বে।

তবে সবাই বলছে, সচিবালয়ে এখন প্রকৃত গেটপাস নিয়েও প্রবেশ নিষেধ, বৈধ অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড থাকলেও সাংবাদিকদের সচিবালয়ে প্রবেশ নিষেধ, এমনকি যারা সচিবালয়ে চাকরি করেন, তাদের পরিচয়পত্র থাকার পরও অনেকে সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারছেন না। তাহলে ওই সারমেয় মানে কুকুর কোন পাস নিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশ করেছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে। তাছাড়া এই কুকুরকে পাস ইস্যু করেছে কোন অধিদপ্তর, তাও খুঁজতে হবে। এমনিভাবে জনাব অন্ধকার মিয়া প্রচুর ক্লু থ্রো করেছেন। আর জনাব অন্ধকার মিয়া একজন মহাজ্ঞানী, সিনসিয়ার, প্রকৃত অনুসন্ধানী ব্যক্তি। অন্ধকার মিয়ার প্রথম প্রকাশ বিটিভির এক জন্মনিয়ন্ত্রণ অনুষ্ঠান দিয়ে।

উনি জন্মনিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন পন্থা পাবলিককে জানাতেন। এখন পাঠক বুঝতে পারছেন এমনি এক দুঁদে উপস্থাপক যখন সচিবালয়ের কুকুর নিয়ে কথা বলেন, তখন তার গুরুত্ব অনেক বেড়ে যায়। এই দেখুন না, সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের পর চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির বার্ষিক নির্বাচন স্থগিত। এবার বুঝলেন? আরে ভাই, বাংলাদেশের জন্মের পর থেকে গত ৫৩ বছর এফডিসির চত্বরে পরিচালক সমিতিতে বৌদ্ধ, হিন্দু-খ্রিষ্টান পরিচালক ও আমাদের আজ পর্যন্ত সাদপন্থি-জুবায়েরপন্থির মতো কোনো মারামারি হয়নি; অথচ আমাদের এই শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে সচিবালয়ের কুকুর দ্বারা আগুন লাগানোর ঘটনায় হঠাৎ নির্বাচন বন্ধ! এদিকে গুলজার ভাই যে ভোটারদের এত বিরিয়ানি খাওয়ালেন, পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুন-লিফলেট লাগালেন, এসবের খরচ কে দেবে। তাছাড়া চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে তো কোনোদিনও আগুন লাগেনি। যদিও ওরা গান গায় ‘জ্বালাইলে যে জ্বলে আগুন নিভানো বিষম দায়/আগুন জ্বালাইস না আমার গায় রে… আগুন জ্বালাইস না আমার গায়। দেখাই যাচ্ছে যে, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি আগুন জ্বালানোর বিপক্ষে। তাহলে ওদের নির্বাচন স্থগিত করার কারণ কি? এখন যাহোক, তাড়াতাড়ি ওই মৃত সারমেয় স্যারের ডিএনএ টেস্ট করে তার জাতটা জানার পর প্রকৃত পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। না হলে তদন্ত কমিটির তদন্ত সঠিক হবে না।

কারণ অতীতে দেখা গেছে হাতিরঝিল প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে সোনারগাঁ হোটেলের পেছনের বস্তিতে হঠাৎ আগুন লাগল, দু-তিন বস্তিবাসী জীবন্ত দগ্ধ, তদন্ত করে কিছু পাওয়া গেল না। ফায়ারব্রিগেড বলল, অবৈধ বৈদ্যুতিক লাইনের লোড বেশি হওয়ায় শর্টসার্কিট। তারপর হাতিরঝিল প্রকল্প বাস্তবায়ন হলো। শেরেবাংলা নগরে বিএনপি বস্তিতে হঠাৎ আগুন লাগল। আবার দু-তিন বস্তিবাসী জীবন্ত দগ্ধ। তদন্ত করে কিছু পাওয়া গেল না! ফায়ারব্রিগেড বলল, অবৈধ বৈদ্যুতিক লাইনের লোড বেশি হওয়ায় শর্টসার্কিট। তারপর বিভিন্ন ভবন নির্মাণ শুরু হলো। শ্যামলী-আদাবরের কৃষি মার্কেটে, বঙ্গ মার্কেটে হঠাৎ আগুন লাগল; দু’তিন দোকানের কর্মচারী জীবন্ত দগ্ধ, তদন্ত করে কিছু পাওয়া গেল না, ফায়ারব্রিগেড বলল অবৈধ বৈদ্যুতিক লাইনের লোড বেশি হওয়াতে শর্টসার্কিট। তারপর প্রকল্প বাস্তবায়ন হলো। এসব আগুনে তদন্ত করে কিছু পাওয়া যায়নি; কারণ এসব অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে কোনো কুত্তা জড়িত ছিল না। কিন্তু সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ডে কুত্তা জড়িত। তাই সচিবালয়ের কুকুরের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিলেই সর্বজন শ্রদ্ধেয় অন্ধকার মিয়া স্যারের কথামতো থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে আর আমাদের সুন্দরী প্রবক্তার মুখ উজ্জ্বল হবে।

এমনি এক অমোঘ কুত্তাবাদ প্রকাশের জন্য সর্বজন শ্রদ্ধেয় অন্ধকার মিয়া স্যারকে জিন্দাবাদ জানানো যেতেই পারে।

সর্বজন শ্রদ্ধেয় অন্ধকার মিয়া স্যার, অ্যারিসটোটোলের পোয়েক্রিকসের মতো, ডাসক্যাপিটালের ন্যায়, আপনার যুগোপযোগী কুত্তাবাদ প্রকাশের জন্য জিন্দাবাদ-জিন্দাবাদ।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত