চাকসু নির্বাচন: বন্ধুর ওপরই ভরসা প্রতিবন্ধী ভোটারদের

এম কে মনির, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৪: ৩৯
আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ১৫

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত বন্ধুর ওপর ভরসা করতে হচ্ছে দৃষ্টি, শ্রবণ, বাক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ভোটারদের৷ এতে ভোটের মতো গোপনীয় একান্ত ব্যক্তিগত মতের বিষয়টিও অনিচ্ছা স্বত্বেও অপরজনকে জানাতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বহুদিন আগে থেকে বারবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানানোর পর প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অবজ্ঞা করে আসছে চবি প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন৷ এতে ৩৬ বছর পর চাকুসতে ভোট হলেও অন্যের উপরেই ভরসা করতে হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তকে চরম অবজ্ঞা ও বৈষম্যমূলক আচরণ হিসেবে দেখছেন তারা।

বুধবার সকাল নয়টা থেকে অন্যান্য অনুষদের মতোই চাকসু ভবনের দোতলায় তাদের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দুপুর ১২টায় চাকসু ভবনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন৷ তাদের মধ্যে নারী ও পুরুষের সংখ্যা প্রায় সমান সমান৷ বেশিরভাগ শিক্ষার্থী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা যেভাবে একটি বুথে ভোট প্রয়োগ করছেন সেভাবেই ভোট দিচ্ছেন দৃষ্টি, শ্রবণ, বাক ও শারীরিক প্রতিবন্ধীরা৷ তাদের জন্য বিশেষ কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এসময় সেখানেও ধীর গতিতে ভোট গ্রহণ করতে দেখা গেছে৷ ভোটে ব্যালট প্রদানের দায়িত্বে রয়েছেন মাত্র তিনজন।

শিবির প্যানেলের কার্যনির্বাহী সদস্য প্রার্থী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আকাশ দাশ জানান, আমরা বেশ কয়েকবার ব্রেল পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের জন্য লিখিতভাবে জানিয়েছি চবি প্রশাসনকে৷ কিন্তুু ঐতিহাসিক চাকসু নির্বাচনে আমাদের মতের কোন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি৷ তারা আমাদের সম্পূর্ণভাবে অবজ্ঞা করেছেন৷ আমাদের ৯২ জন শিক্ষার্থী ভোটার রয়েছে৷

তিনি আরও জানান, ডাকসুতে প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তারা সবাই ব্রেইল পদ্ধতিতে ভোট দিয়েছেন। কারো সহযোগিতা প্রয়োজন হয়নি৷ কিন্তু আজকে আমি নির্বাচন কমিশনারের মাধ্যমে ভোট দিয়েছি। এতে আমি কাকে ভোট দিলাম তিনি সেটা জানা হয়ে

ছাত্র ইউনিয়নের প্যানেল দ্রোহ পর্ষদের সমাজসেবা ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী সোহেল রানা জানান, আমি একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী৷ আমাদের অন্তত ৭০ জন শুধু দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রয়েছে৷ সবমিলিয়ে ৯২ জন ভোটার নানা শ্রেণির প্রতিবন্ধী রয়েছে। চবি প্রশাসন আমাদের মতামতের মূল্য দিলে এমনটা হতো না৷ ব্রেইল পদ্ধতিতে ভোটের আয়োজন করা কঠিন বিষয় নয়। এটি হচ্ছে আমাদের প্রতি অবহেলা, অবজ্ঞা ও বৈষম্য। আমরা সকাল থেকে ভোট দিতে এলেও ভোট দিতে দিতে দুপুর হয়েছে।

এসময় আরও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, সকাল থেকে আমরা বিশ্বস্ত বন্ধু খুঁজতে শুরু করি৷ কয়েকজন এমন বিশ্বস্ত বন্ধু খুঁজে পেলেও অনেকেই পাননি৷ এতে এক ধরণের বিড়ম্বনায় পড়ে যায় আমরা। মাত্র ৯২ জনের জন্য ব্রেইল পদ্ধতি আয়োজন করতে না পারা আরও একটি ব্যর্থতা প্রশাসনের। আমাদের ধারণা, আমরা শিক্ষার্থীরা ব্রেইল পদ্ধতি বুঝলেও প্রশাসন ও শিক্ষকরা বুঝেন না৷ তাই তারা ঝুঁকি নিতে চাননি৷ কিন্তুু সেটি করতে গিয়ে আমাদের স্বাধীনতা খর্ব করেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব এ কে এম আরিফুল হক সিদ্দিকী জানান, নির্দিষ্ট কোন কেন্দ্র করা হয়নি৷ চাকসু ভবনে আলাদা বুথ রাখা হয়েছে। তবে তারা চাইলে অন্য অনুষদেও গিয়ে ভোট দিতে পারবেন৷ এসময় কেন ব্রেইল পদ্ধতি আয়োজন করা হয়নি জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত