বেরোবিতে জুলাই শহীদ দিবস পালন

নির্বাচনের আগে বিচার ও জুলাই সনদ দাবি

রংপুর অফিস ও বেরোবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৫, ২০: ১৬

নানা আয়োজনে জুলাই শহীদ দিবস পালন করেছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) কর্তৃপক্ষ। এ উপলক্ষে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারক মাঠে শহীদ আবু সাঈদ স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় কান্নায় ভেঙে পড়েন শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

অনুষ্ঠানে স্থানীয় ২২ শহীদের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই ‘জুলাই সনদ’ প্রদান, বাস্তবায়ন এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতা হত্যার বিচার করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের চার উপদেষ্টা ও বিভিন্ন দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তার সামনে শহীদ পরিবারের সদস্যরা বলেন, ‘আমাদের সন্তানরা ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করেছিল। অথচ পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তাদের গুলি করে হত্যা করেছে। আমরা এক বছর ধরে কেবল আশ্বাস পাচ্ছি, কিন্তু বিচারের অগ্রগতি দেখছি না। ভোট আসছে, কিন্তু ন্যায়বিচার আসছে না।’

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘শহীদের বাবা হিসেবে আমি শুধু বিচার চাই না, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিও চাই।’ তার দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত উপদেষ্টা ও কর্মকর্তারা।

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘শেখ হাসিনা কথায় কথায় তার বাবার মৃত্যুর কথা বলতেন। এরপরও তার বাবা হত্যার বিচার করতে সাড়ে তিন বছর সময় লেগেছে। আমরা সেই হাসিনা আমলের বিচার করতে আসিনি। পৃথিবীর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এমন বিচার করতে চাই।’

আসিফ নজরুল বলেন, রংপুর অবহেলিত হলেও মানুষগুলো সহজ-সরল। সারাদেশে সুষম উন্নয়ন সাংবিধানিক অধিকার। সেই লক্ষ্যে বর্তমান সরকার কাজ করছে। নীলফামারীতে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল ঘিরে সর্বাধুনিক হেলথ সিটি তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার। মানুষ যেন সিঙ্গাপুর না গিয়ে রংপুর যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী বলেন, এই দিনটি শুধু স্মরণের নয়, বরং শিক্ষা ও প্রতিজ্ঞার। শহীদ পরিবারগুলোর দাবিকে আমরা পূর্ণ সমর্থন করি এবং রাষ্ট্রের কাছে তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আহ্বান জানাই।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, পরিবেশ-বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই আজম, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজ, সদস্য অধ্যাপক ড. তানজীমউদ্দীন খান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল প্রমুখ। আলোচনা সভায় তারা বসেছিলেন দর্শক সারিতে। আর শহীদ পরিবারের সদস্যদের বসানো হয়েছিল মঞ্চে।

এর আগে বেরোবি উপাচার্যের নেতৃত্বে প্রশাসনের উদ্যোগে সকাল সাড়ে ৭টায় পীরগঞ্জের বাবনপুরে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরে কালো ব্যাজ ধারণ ও ক্যাম্পাসের দক্ষিণ গেট থেকে শোক শোভাযাত্রা বের হয়।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ আবু সাঈদ তোরণ ও মিউজিয়াম এবং শহীদ আবু সাঈদ স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন অতিথিরা। বিকেলে ক্যাম্পাসের ক্যাফেটেরিয়ায় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত